জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে ২৭ মে ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ শুক্রবার রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে ‘বিদ্রোহী The Nazrul Centre’ আয়োজিত ‘নজরুল চেতনায় আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কাজী নজরুল ইসলামের দৌহিত্রী খিলখিল কাজী। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন ‘সুফি ইউনিটি ফর ইন্টারন্যাশনাল সলিডারিটি’র চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী। বিশ্বজুড়ে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ও শান্তির জন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে বিশেষ সম্মাননা পদক প্রদান করা হয়।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী বলেন, আমাদের প্রিয় নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছিলেন মানবতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মহান দূত। যেসব মানুষ তাকে অবর্ণনীয় নির্যাতন, কষ্ট দিয়েছে, তার নিজ মাতৃভূমি ছাড়তে বাধ্য করেছে, মক্কা বিজয়ের দিন তিনি চাইলে, প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু ক্ষমা ও উদারতার অদ্বিতীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, তিনি সকলকে ক্ষমা করে দিলেন। বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করলেন। ঐতিহাসিক মদীনা সনদের মাধ্যমে তিনি শান্তি-সম্প্রীতিপূর্ণ, সাম্যের একটি আধুনিক কল্যানরাষ্ট্রের রূপরেখা বিশ্ববাসীকে উপহার দিয়েছেন।
সৈয়দ সাইফুদ্দীন বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রোল মডেল হিসেবে বিশ্বে পরিচিত। এর পেছনে অগণিত সুফি সাধকদের অবদান রয়েছে। এখনও আজমির শরীফ, মাইজভাণ্ডার শরীফ, হযরত শাহ্জালাল (রহঃ)সহ বিভিন্ন সুফিদের মাজার শরীফ ও দরবারে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যাচ্ছেন। তারা সেখানে শান্তি ও প্রেম খুঁজে পাচ্ছেন বলেই যাচ্ছেন। বিশেষত ‘মাইজভাণ্ডারী দর্শন’ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি আলোকবর্তিকা হয়ে সমাজে মানুষে মানুষে বিভেদ দূর করে সাম্যের পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও ছিলেন একজন সুফিবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ মহামানব৷ ২০ শতকে এ উপমহাদেশ যখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, সংঘাতে জর্জরিত ছিলো, মানবতার বিপর্যয় ঘটছিলো, উগ্রবাদী অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিলো, তখন তিনি তার লেখনীর তরবারির আঘাতে সকল অশুভ শক্তিকে দমন করেছেন। তার লেখনীতে আমরা মুসলিম, হিন্দু উভয় ধর্মেরই ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মহাপুরুষদের আলোচনা দেখতে পাই। তিনি সাহিত্যের মাধ্যমে হিন্দু-মুসলমানদের বিভেদ, দ্বন্দ্ব দূরীকরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। হতদরিদ্র, কুলি-মজুর, খেটে খাওয়া কৃষক-শ্রমিক, সর্বহারা-নির্যাতিত-শোষিত-বঞ্চিত মানুষেরা, অবহেলিত নারীরা তার রচনার মাধ্যমে অধিকার আদায়ের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। এদেশের মানুষের মুক্তি সংগ্রামে, মহান মুক্তিযুদ্ধেও তার রচনা আমাদেরকে বাঙালি জাতীয়তাবাদে ও ন্যায়ের সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছে।
সৈয়দ সাইফুদ্দীন বলেন, সৃষ্টিকে ভালোবাসলেই স্রষ্টার সান্নিধ্য অর্জন হয়; এ মহাসত্যটি আমাদের জাতীয় কবি সফলতার সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন। মানুষের বন্দনাই ছিলো, তার রচনার মূল উপজীব্য।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অসাম্প্রদায়িক সাম্যবাদী দর্শনই বিশ্বকে শান্তির নীড়ে রূপান্তর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে মন্তব্য করেন শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী।
সেমিনারে উদ্বোধক ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সামছুল আলম দুদু এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক সাংসদ এম. এ. আউয়াল, প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, সৈয়দ ইসতিয়াক রেজা, কর্ণেল আশরাফ আল দ্বীন, ড. শাহরিয়ার ইফতেখার ফুয়াদ প্রমুখ।
সেমিনারের মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুল হাই। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিদ্রোহী The Nazrul Centre এর নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ডক্টর শহীদ মনজু।