প্রতি বছর ৫ জুন সারা বিশ্বে ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ পালিত হয়ে আসছে। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- ‘প্লাস্টিক দূষণ সমাধানে শামিল হই সকলে’। এই দিবসটি উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে পরিবেশ মেলা ও বৃক্ষ মেলা-২০২৩। এবারের জাতীয় বৃক্ষ মেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘গাছ লাগিয়ে যত্ন করি, সুস্থ প্রজন্মের দেশ গড়ি’।
৫ জুন ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধনের মাধ্যমে এই কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন করা হয়। পাশাপাশি রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন-২০২২’, এবং ‘বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার, প্রাপ্তদের হাতে পদক তুলে দেন তিনি। এছাড়াও তিনি সামাজিক বনায়নের লভ্যাংশ প্রাপ্তদের হাতে চেক তুলে দেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, জনসংখ্যা বিস্ফোরণের কারণে পরিবেশ রক্ষা করা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় যথেষ্ট সাফল্য দেখিয়েছে। এই দুরূহ কাজ মোকাবিলার সবচেয়ে বড় উদাহরণ বিভিন্ন শস্য উৎপাদনে আমাদের শীর্ষ অবস্থান। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও মাথাপিছু আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাওয়ার পরও আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ; যেটি বিশ্ব খাদ্য সংস্থার কাছেও একটি বিস্ময়। সভাপতির সমাপনী বক্তব্যের পর ফিতা কেটে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এরপর আমন্ত্রিত অতিথিগণ একে একে মেলার প্রতিটি স্টল ঘুরে দেখেন।
ঢাকার শের-ই-বাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের মাঠে (সাবেক বাণিজ্য মেলা) শুরু হওয়া বৃক্ষ মেলা চলবে দুই পর্বে। প্রথম পর্বে ৫ থেকে ২৬ জুন ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত চলবে মেলা। এরপর ঈদ উপলক্ষ্যে বন্ধ থাকার পর ১ জুলাই থেকে ১২ জুলাই ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ শেষ হবে। প্রতিদিন মেলা সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত। উল্লেখ্য, ৪ জুন ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ রোববার সচিবালয়ে তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা-২০২৩ এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা-২০২৩ উপলক্ষ্যে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, বর্তমান সরকার দেশের পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা ও বনজ সম্পদের উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এসব কাজে জনগণের উপস্থিতি বাড়াতে এ মন্ত্রণালয় সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এ লক্ষ্যে প্রতিবছরের মতো বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দিবসটি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ বেতারসহ অন্যান্য গণমাধ্যম বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে জাতীয় সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্র ও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে স্মরণিকা প্রকাশ করা হবে। সকল জেলা এবং উপজেলা ও ঢাকা মহানগরীর ১০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন করা হবে। এ দিবস উপলক্ষ্যে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বিতর্ক ও স্লোগান প্রতিযোগিতা, পরিবেশ বিষয়ক সেমিনার ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের জন্য সচেতনতামূলক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।
মেলায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর বুকে অপরূপ প্রকৃতি দেখতে দর্শনার্থীদের পথচারণায় মুখরিত । মানুষ যেনো প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ নিজ সেলফোনে সেলফী তুলছে; কেউবা ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। কেউবা পুরো পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, শিশুদের বাঁধভাঙ্গা আনন্দ লক্ষণীয়।
মেলায় ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন স্টলে সারি সারি সাজানো বনজ, ফলজ, সবজি ও ঔষধি দেশী-বিদেশী নানান প্রজাতির গাছ। পাওয়া যাচ্ছে চেনা অচেনা নানা প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ। এদের মধ্যে আছে- জবা ফুল, ম্যান্ডেভিলা, ফুল, হাসনাহেনা, পলাশ, কনকচাপা, বাসন্তি, মালতী, নয়নতারা, আম, আতা, কুল, বড়ই, ডালিম, করমচা, বেল, জাম্বুরা, কাঁঠাল, লাল কাঁঠাল, চাম কাঠাল, ডুমুর, কাজু বাদাম, ডুরিয়ান, অলিভ, কাউ, পিচ, কিউই ফল, অ্যাভোকেডো, আলমন্ডা, ড্রাসিনা, চেরী ফল, পার্সিমন ফল, ড্রাগন, ট্যাং ফল, অ্যাপ্রিকট ফল, আদা জামির, স্ট্রবেরি পেয়ারা, বিলাতি গাব, রাম্বুটান, জয়ফল, সাদা নাশপতি, রাবাবা, মাল বেরি , লোকাট ফল, এবিউ ফল কালোজাম, সাতকরা, সফেদা, কদবেল, আঁশফল, ঘৃতকুমারী, লটকনসহ নাম জানা-অজানা হাজারো ফুল ও ফলের দেশি-বিদেশি গাছ। পাওয়া যাচ্ছে বিরল প্রজাতির গাছ নাগলিঙ্গম।
মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থী মোঃ ইব্রাহিম মিয়া বলেন, ইট পাথরের এই শহরে একটু স্বত্বি ও শান্তির জন্য এই মেলায় এসেছি। আমি প্রকৃতিপ্রেমিক একজন মানুষ; আমি প্রকৃতি ভালোবাসি। আক্ষেপের সঙ্গে তিনি বলেন, এই দেশ থেকে প্রকৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া এখন লক্ষ্যণীয়। আগামীর প্রজন্ম এখন হুমকিতে। জলবায়ু পরিবর্তন তা জানান দিচ্ছে। আজকের যে গরম আবহাওয়া তা এই প্রকৃতির কারণে হয়েছে বলে আমি মনে করি। রাজধানীতে ক্ষনিকের এই বৃক্ষ মেলায় আমার যে কী ভালো লাগছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আপনি নিশ্চয়ই দেখছেন, আমি আমার সন্তানদের ভিডিও করে এই দৃশ্য দেখাচ্ছি। আমার সন্তানসহ আমার পুরো পরিবার নোয়াখালী থেকে এই দৃশ্য দেখে আনন্দ-উল্লাস করছে।