মরক্কোর অ্যাটলাস পর্বতমালার তাফেঘাঘতে গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, ‘এই গ্রামের সব মানুষ হয় হাসপাতালে, আর না হয় মৃত।’ ধুলো-পাথরের ধ্বংসস্তূপ দেখে বোঝা যাচ্ছিল গ্রামের কেউই নিজেদের রক্ষা করতে পারেনি। ইট ও পাথরের তৈরি গ্রামের পুরনো ধাঁচের বাড়িগুলো কোনোভাবেই এই মাত্রার ভূমিকম্প সামাল দেয়ার মত ছিল না।
গ্রামের আরেক প্রান্তে বেশ কিছু মানুষ একজন ব্যক্তিকে সমবেদনা জানাচ্ছেন। ঐ ব্যক্তির নাম আব্দো রহমান। ভূমিকম্পে তার তিন ছেলে ও স্ত্রী মারা গেছে। বালি-পাথরের একটি স্তূপ দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের বাড়ি ছিল ওখানে। ঐ যে দেখুন সাদা কম্বল ও কিছু আসবাব এখনো দেখা যাচ্ছে। বাকি সব মাটির সাথে মিশে গেছে।’
ভূমিকম্প শুরু হওয়ার পর আব্দো রহমান তিন কিলোমিটার দৌঁড়ে তার বাড়ির দিকে আসেন। ভূমিকম্পের সময় তিনি যেই পেট্রোল পাম্পে কাজ করেন, সেখানে দায়িত্বরত ছিলেন। তার বাড়ির কাছে এসে চিৎকার করে তার ছেলেদের নাম ধরে ডাকাডাকি করেন।
তার মত আরো কয়েকজনও তখন তাদের পরিবারের সদস্যদের খুঁজছিলেন। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেছে তার।
তিনি বলেন, ‘গতকাল আমরা তাদের কবর দিয়েছি। আমরা যখন তাদের মরদেহ খুঁজে পাই, তখন তারা সবাই একসাথে গুটিশুটি মেরে ছিল। তিন ছেলেই ঘুমাচ্ছিল। ঘুমের মধ্যেই তারা মারা যায়।’
আরেকটু সামনে একটি বড় তাঁবুতে বেশ কয়েকটি পরিবার একসাথে অপেক্ষা করছিল। সবদিক থেকেই শোনা যাচ্ছিল অবিরাম কান্নার আওয়াজ। কিছুক্ষণ আগেই ১০ বছর বয়সী শিশু খালিফার মরদেহ টেনে বের করা হয়েছে পাথরের স্তূপের নিচ থেকে। সেই মরদেহকে ঘিরে চলছিল আহাজারি। মরক্কোর অ্যাটলাস পর্বতমালা অঞ্চলের একের পর এক গ্রামে ঠিক এই চিত্রই এখন দেখা যাচ্ছে।
গত শুক্রবার মরক্কোতে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে দুই হাজারের বেশি মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এখনও অনেক নিখোঁজ। ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে দেশটির গ্রামের পর গ্রাম ও শহরের পর শহর।
সূত্র: বিবিসি