২১ নভেম্বর ২০২৪, এখন সময় সন্ধ্যা ৭:০৭ মিনিট
শিরোনাম
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. কৃষি
  6. খুলনা
  7. খেলাধূলা
  8. গণমাধ্যম
  9. চট্রগ্রাম
  10. জাতীয়
  11. ঢাকা
  12. তথ্য-প্রযুক্তি
  13. ধর্মতত্ত্ব
  14. প্রকৃতি-পরিবেশ
  15. প্রবাস জীবন

গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় এখনই

প্রতিবেদক
রুপম আক্তার
জুন ৩০, ২০২৪ ৯:২৩ পূর্বাহ্ণ

‘গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান’- বাংলাদেশের বহুল প্রচলিত স্লোগানগুলোর একটি। জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে বিপর্যস্ত পরিবেশকে রক্ষায় বহু আগে থেকে বৃক্ষরোপণের কথা বলে আসছেন সবাই। বৃক্ষরোপন সারা বছর করা গেলেও বাংলাদেশে চারা রোপণ করার উৎকৃষ্ট সময় হিসেবে সাধারণত বিবেচনা করা হয় বর্ষাকালকে। তবে, রোপণের সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে সারা বছরই ‘চারা-কলম’ লাগানো যায়, বলে জানাচ্ছে সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিস।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ. খ. ম. গোলাম সারওয়ার বলেন, বর্ষার শুরু অথবা শেষের দিকের সময়টা গাছ লাগানোর ভালো। কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে জানা যাচ্ছে, প্রথম বৃষ্টির পরপরই চারা লাগানো উচিত হবে না। কারণ প্রথম কয়েক দিন বৃষ্টির পরপরই মাটি থেকে গরম গ্যাসীয় পদার্থ বের হয়, যা চারা গাছের জন্য খুবই ক্ষতিকর এমনকি চারা গাছ মারা যায়। আর বলা হয়, যে কোনো গাছের চারা রোপণ করার সর্বোত্তম সময় দিনের শেষভাগে অর্থাৎ পড়ন্ত বিকাল বেলায়।
সাধারণত জুন, জুলাই ও আগস্ট মাস হচ্ছে গাছের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। এ সময় আলো-বাতাস, অনুকূল তাপমাত্রা, বৃষ্টি পর্যাপ্ত থাকে বলে চারাও সুন্দরভাবে প্রকৃতির মধ্যে বেড়ে ওঠে। বর্তমানে সূর্যের প্রখর তাবদাহে প্রকৃতি এক ভয়াল মূর্তি ধারণ করেছে। দেশে প্রায় প্রতিদিন তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকছে। এটিও সত্যি যে, আবাসিক ও অনাবাসিক ভবনসহ ব্যাপক নির্মাণ কাজের কারণে শহরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শহরাঞ্চলে আবাদি জমি ও গাছপালা কমে যাওয়ায় বনায়ন ও বৃক্ষরোপণের সুযোগ নেই বললেই চলে। তবে, ছাদ-বাগান করে শহরের তাপমাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব। ছাদের বাগান বাইরের তাপমাত্রার চেয়ে ঘরের তাপমাত্রা প্রায় ১.৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস করতে পারে, এমনটাই পরিবেশবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। সাধারণত বাগানসহ ছাদের তাপমাত্রা ও বাগানবিহীন ছাদের তাপমাত্রার পার্থক্য প্রায় ৭.৮৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়। অব্যবহৃত ছাদে খুব সহজেই পরিকল্পিতভাবে ফুল, ফল ও শাক-সবজির বাগান তৈরি করে পারিবারিক ফুল, ফল ও শাক-সবজির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে।
যেসব গুণের কারণে আমাদের এ দেশকে সবুজ-শ্যামল বলা হতো তার বেশিরভাগেই ছিল চারদিকে ঘন গাছপালা আর সবুজের সমারোহ। এখন সেই সবুজ-শ্যামল রূপ খুব কমই চোখে পড়ে। গাছপালা ও ফসলি জমি ধ্বংসের কারণে পাখপাখালিও এখন আর আগের মতো তেমন দেখা যায় না। গাছপালা কাটার ফলে পাখিদের আশ্রয়স্থলও কমে যাচ্ছে। দেশে অতিথি পাখির আগমনও কমে গেছে। প্রতিনিয়তই এভাবে গাছপালা কেটে উজাড় করতে থাকলে পাখিদের বংশ বৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এরকম পরিস্থিতিতে, পরিবেশ সুরক্ষায় সারাদেশে গাছ লাগানোর নির্দেশনা দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বিশেষ করে সব সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা এলাকায় গাছ লাগাতে বলা হয়েছে।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে বৃক্ষরাজি শুধু কার্বন নিঃসরণ কমায় না; শব্দদূষণও রোধ করে। এক হেক্টর পরিমাণ মাঝারি বন ১০ ডেসিবল শব্দ হ্রাস করতে পারে। অথচ জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এবং বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে বনের জমি পাইকারি হারে ব্যবহৃত হচ্ছে। অনেক প্রাণী গাছ খেয়ে বেঁচে থাকে; আবার গাছই তাদের একমাত্র আবাসস্থল। অনেক বন উজাড় হয়ে যাওয়ায় এসব প্রাণী আবাসহীন হয়ে পড়ছে। ফলে এসব প্রাণী দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বন উজাড়ের দরুন গাছগাছালি, বিভিন্ন প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

পরিবেশ রক্ষায় প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের দেশে বৃক্ষরাজি অনেক কম। তাই সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়, যেমন- পরিবেশ মেলা, বৃক্ষমেলা, সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি, বসতবাড়ি বনায়ন কর্মসূচি, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, ফলদ-বনজ-ভেষজ বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম, ফলদ বৃক্ষমেলা। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠন থেকে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
চারা রোপণের পর চারা টিকিয়ে রাখাই বড় কাজ। পরিবেশ সুরক্ষায় ২০১৯ সালে একদিনে এক কোটি ৩০ লাখ গাছ লাগিয়েছে তুরস্ক। এর মধ্যে এক ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃক্ষরোপণ বিচারে ইন্দোনেশিয়াকে হারিয়ে নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়েছে তারা। এর আগে ইন্দোনেশিয়া এক ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২ লাখ ৩২,৬৪৭টি চারা রোপণ করে রেকর্ড গড়েছিল। অন্যদিকে তুরস্ক এক ঘণ্টায় রোপণ করে ৩ লাখ ৩,১৫০টি চারা।
বন্যামুক্ত, আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে এবং সূর্যালোক পড়ে এমন জায়গায় চারা রোপণ করা যায়। মসজিদ, মন্দির, গির্জা, স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনে ও আশেপাশে লাগাতে পারেন। এমন স্থানে দেবদারু, নারিকেল, সুপারি, তাল, খেজুর, নিম, পাম, ঝাউ, কৃষ্ণচূড়া, আম, কাঁঠাল, লিচু গাছ রোপণ করতে পারেন।
পাকা বাড়ির ছাদে টবে গাছের চারা রোপণ করা যায়। এতে কমলালেবু, পেয়ারা, কুল, জাম্বুরা, ডালিম, মেহেদি, লিচু প্রভৃতি গাছ লাগাতে পারেন। বাড়ির দক্ষিণ পাশে রোদ ও আলোর জন্য ছোট এবং কম ঝোপালো গাছ লাগাতে হবে। সুপারি, নারিকেল, নিম, দেবদারু, পেঁপে, পেয়ারা, লেবু, জাম্বুরা, ডালিম, মেহেদি গাছ লাগানো যেতে পারে।
বাড়ির পূর্ব-পশ্চিমে মাঝারি উঁচু এবং মাঝারি ঝোপালো গাছ লাগাতে হবে। বাউকুল, আপেলকুল, সফেদা, আম্রপালি, লিচু, খেজুর, ডালিম, কলা, আতা, বেল, পেয়ারাসহ বিভিন্ন গাছ এখানে রোপণ করতে পারেন। বাড়ির উত্তর পাশে বড় ও উঁচু গাছপালা থাকলে ঝড়-তুফান প্রতিরোধ হয়। এখানে আম, কাঁঠাল, জাম, কামরাঙ্গা, মেহগনি, শিশু, সেগুন, হরিতকি, আকাশমণি, বাঁশ ইত্যাদি গাছ রোপণ করা যায়।
পতিত জমিতে আম, কাঁঠাল, জাম, কামরাঙ্গা, মেহগনি, শিশু, সেগুন, হরিতকি, আকাশমণি, দেবদারু, নারিকেল, সুপারি, খেজুর, নিম, পাম, ঝাউ, কৃষ্ণচূড়া, বাঁশ ইত্যাদি রোপণ করা উচিত। হাট-বাজারে ছায়দানকারী গাছ রোপণ করা উচিত। আম, কাঁঠাল, জাম, সেগুন, দেবদারু, সুপারি, খেজুর, নিম, পাম, কৃষ্ণচূড়া, বটগাছ রোপণ করা উচিত।
রাস্তার পাশে উঁচু ও ডালপালা ছাঁটাই করা যায় এমন গাছ রোপণ করা উচিত। মেহগনি, শিশু, সেগুন, হরিতকি, আকাশমণি, দেবদারু, নারিকেল, সুপারি, খেজুর, নিম, পাম, ঝাউ, কৃষ্ণচূড়া, বাবলা, ইপিল ইপিল, শিমুল ইত্যাদি গাছ রোপণ করা যায়। গ্রামের পথের দু’ধারে বা ফিডার রোডের পাশে শিশু, নিম, দেবদারু, চম্পা, ইপিল ইপিল, পাইন্যাগোলা বা লুকলুকি, মান্দার, পালিত মাদার, পানিয়া মাদার, বাবলা, খয়ের, বকফুল, তাল, খেজুর ইত্যাদি লাগানো যেতে পারে।
বড় রাস্তা বা মহাসড়কের পাশে কৃষচূড়া, কনকচূড়া, রেইনট্রি, গগন শিরীষ, রাজকড়ই, শিলকড়ই, শিশু, মেহগনি, অর্জুন, দেবদারু, সোনালু, নিম, নাগেশ্বর, আকাশমণি, বকুল, পলাশ, তেলসুর, ঝাউ, বটল পাম প্রভৃতি গাছ লাগানো যায়। রেল লাইনের পাশে মেহগনি, শিশু, সেগুন, আকাশমণি, দেবদারু, নারিকেল, সুপারি, খেজুর, নিম, পাম, শিমুল ইত্যাদি গাছ রোপণ করা যায়।

মনে রাখতে হবে, গাছ অতিরিক্ত তাপমাত্রা শোষণ করে পরিবেশ যেমন নির্মল রাখে, তেমনি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গ্যাস কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে প্রাণীর বেঁচে থাকার মূল উপাদান অক্সিজেন সরবরাহ করে। কিন্তু জনসংখ্যার চাপে প্রতিনিয়ত গাছ কাটা হচ্ছে। এতে বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে, আবহাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বনভূমি নষ্ট করার কারণে বৃষ্টিও হচ্ছে না। বৃষ্টির অভাবে আমাদের জীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে। সেই সঙ্গে গাছ কাটার ফলে পরিবেশ ভারসাম্য হারাচ্ছে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে।

 

সর্বশেষ - আইন-আদালত