বাংলাদেশের একজন মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীন বা ঠিকানাবিহীন থাকবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ৫৮টি জেলার ৪৬৪টি উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত করা হয়েছে। ৮ লাখ ৬৭ হাজার ৯৭৭টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে গৃহ প্রদানের মাধ্যমে মোট ৪৩ লাখ ৩৯ হাজার ৮৫৫ জন মানুষকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।’
সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিনের লিখিত প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, ‘১৯৯৭ সালের জুন থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে আশ্রয়ন প্রকল্প ও সমধর্মী অন্যান্য কার্যক্রম দ্বারা ৮ লাখ ৬৭ হাজার ৯৭৭টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে গৃহ প্রদানের মাধ্যমে মোট ৪৩ লাখ ৩৯ হাজার ৮৫৫ জন মানুষকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ৫৮টি জেলার ৪৬৪টি উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত করা হয়েছে। ২০২৫ সালের জুনে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের কার্যক্রম শেষ হলেও নদীভাঙন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রতি বছর অনেক মানুষ গৃহহীন-ভূমিহীন হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা অনুসারে পুনর্বাসন কার্যক্রম চলমান থাকবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইতোমধ্যে ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগ সম্পূর্ণভাবে গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত হয়েছে। ব্যারাক হাউজের মাধ্যমেও এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৮টি পরিবারকে পুনর্বাসন করেছি। ব্যারাক হাউজেও পরিবারপ্রতি কবুলিয়ত সম্পাদন করে দিয়েছে, অর্থাৎ সেখানেও মালিকানা তৈরি হয়েছে। ব্যারাক হাউজ ছাড়াও ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৫৩টি পরিবারকে নিজ জমিতে বিনামূল্যে ঘর তৈরি করে দিয়েছি। শুধুমাত্র মুবিজবর্ষ উপলক্ষ্যে এ পর্যন্ত ২ লাখ ৬৬ হাজার ৮৫টি পরিবারের কাছে স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে ২ শতাংশ জমির মালিকানাসহ সেমিপাকা ঘর হস্তান্তর করেছি। ভূমিহীন-গৃহহীন-ছিন্নমূল মানুষকে জমির মালিকানাসহ ঘর করে দেয়ার লক্ষ্যে সারা দেশে ৬ হাজার ৯৪৫ একর খাস জমি উদ্ধার করা হয়েছে। যার বাজার মূল্য তিন হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা। জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারের জন্য কক্সবাজার জেলার খুরুশকুলে ১১৩ একর জমিতে ১৩৯টি বহুতল আধুনিক ভবন করে দিচ্ছি, যেখানে ৪ হাজার ৪৪৮টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৬৪০টি পরিবারের কাছে ফ্ল্যাটের মালিকানা দলিল হস্তান্তর করে ২০টি বিল্ডিংয়ে তাদেরকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনের সামাজিক প্রভাব অনেক বেশি। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০২২ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাওয়ার পর পরিবারগুলোর আয় বেড়েছে ৭০ শতাংশ। ২৫ লাখ ৪৬ হাজার ৮৫০ জন মানুষ দারিদ্রসীমার উপরে উঠে এসেছেন। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের হার ৫ বছরের ব্যবধানে ২৪.৬৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯৪.৫০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। পারিবারিক সঞ্চয় শূন্য থেকে ৫০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। নিরাপত্তা বেড়েছে। উপকারভোগীদের ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। পরিবারগুলোকে কর্মক্ষম ও আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তুলতে নানা কার্যক্রম চলমান থাকবে।’