১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, এখন সময় রাত ১০:২৮ মিনিট
শিরোনাম
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. কৃষি
  6. খুলনা
  7. খেলাধূলা
  8. গণমাধ্যম
  9. চট্রগ্রাম
  10. জাতীয়
  11. ঢাকা
  12. তথ্য-প্রযুক্তি
  13. ধর্মতত্ত্ব
  14. প্রকৃতি-পরিবেশ
  15. প্রবাস জীবন

‘দেশের ব্যবসায়ী সমাজ ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ চান’

প্রতিবেদক
ডেস্ক রিপোর্টার
আগস্ট ৪, ২০২৪ ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ

সরকার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায়। কিন্তু আন্দোলনকারীরা তাতে রাজি নয়। এমতাবস্থায় দেশের অর্থনীতির স্বার্থে সরকারকে ছাড় দিয়ে হলেও আলোচনার মাধ্যমে আন্দোলন পরিস্থিতির সমাধান চেয়েছেন দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি সমাজ।
ব্যবসায়ী নেতা, বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার ও কারখানার মালিকেরা নিরস্ত্র মানুষের হত্যাকারীদের বিচারও দাবি করেন। তারা বলেন, অনেক দেরি গেছে। তবে সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি।
ডলার–সংকটে ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা এমনিতেই খারাপ ছিল। সামষ্টিক অর্থনীতিতে চাপ আছে অনেক দিন থেকে। তার ওপর নতুন করে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে চলছে কোটা সংস্কার আন্দোলন। এই আন্দোলনের মূল দাবি সরকার ইতোমধ্যে মেনে নিয়েছে। কিন্তু এই ফাঁকে ২১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩ জুলাই ঘোষণা দিয়েছেন, গণভবনের দরজা খোলা। কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমি বসতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই। আমি সংঘাত চাই না। ওই দিনই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা জানিয়ে দিয়েছেন, তারা আলোচনায় বসতে রাজি নন। তাদের বক্তব্য, সিদ্ধান্ত আসবে রাজপথ থেকে। করণীয় কী তাহলে? কোথায় গড়াবে অর্থনীতির অবস্থা? এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, অর্থনীতি ঠিক না থাকলে তো সবই অচল হয়ে পড়বে। এর মধ্যে বড় বিষয় হচ্ছে সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখা ও রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা। আর যে অবস্থা তৈরি হয়েছে, আলোচনাই এখন সমাধানের বড় পথ।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আরো বলেন, অর্থনীতির অবস্থা আগে থেকেই খুব ভালো ছিল না। তারপর নতুন করে শুরু হয়েছে আন্দোলন। সব মিলিয়ে সাম্প্রতিক আন্দোলনে সবাই কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা এর সুষ্ঠু সমাধান চাই। এখনো সময় আছে। আর যাঁরা হত্যার শিকার হয়েছেন, তাদের হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে সুষ্ঠু বিচার চাই।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী বলেন, বোঝাই যাচ্ছে, একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তবে আমরা সমঝোতার পক্ষে। আমরা সবাই শান্তি চাই। যারা আন্দোলন করছেন, তারাও শান্তির পক্ষে। এই ধরনের ঘটনায় আলোচনা করে সমাধানের পথ বের করাই উত্তম।
আহসান খান চৌধুরী আরও বলেন, আমি আশাবাদী। পরিস্থিতি কয়েক দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আমরা যারা ব্যবসা করি, কারখানা চালাই, আমদানি-রপ্তানি করি, আমাদের সেগুলো করে যেতে হবে। যেকোনওভাবেই হোক কারখানায় উৎপাদন বজায় রাখতে হবে। কারণ, কারখানার চাকা ঘুরলেই সচল থাকবে অর্থনীতি। তবে আমরা চাইবো- কারখানা সচল রাখার পরিবেশটা বজায় থাকুক। এই জন্য সরকারের ভূমিকা আশা করি।
অনেক দিন থেকেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি ভালো নয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে (আইএমএফ) দেওয়া রিজার্ভ সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি পূরণে সরকার বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। সদ্য সমাপ্ত জুলাই মাসে রিজার্ভ ১৩০ কোটি ডলার কমে হয়েছে ২ হাজার ৪৯ কোটি ডলার। জুলাইয়ে প্রবাসী আয়ও কমে ১৯১ কোটি ডলারে নেমেছে, যা গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। আন্দোলনের কারণে সরকার ৫ দিন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এবং ১০ দিন মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ রাখে। এতে শুধু ই-কমার্স খাতের ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিন দিন আগে আনুষ্ঠানিকভাবে এই তথ্য জানিয়েছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই–ক্যাব)। এমন যখন পরিস্থিতি, তখন বাংলাদেশ আর দুই বছর পরই হতে যাচ্ছে উন্নয়নশীল দেশ।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস্ মাহমুদ বলেন, আমাদের সামনে ভয়ংকর পরিস্থিতি। মানুষ নিরাপত্তাহীনতায়। আমরা উদ্বিগ্ন। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। আন্দোলন আসলে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত সমস্যার বহিঃপ্রকাশ। বাস্তবতা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক দূরে। এমন পরিস্থিতিতে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। আর ব্যবসায়ের জায়গায় ব্যবসা থাকবে। মানুষের আকাঙ্খার প্রতি সবার শ্রদ্ধা থাকা চাই। কারখানা খোলা রাখব ঠিক আছে, কিন্তু আমার শ্রমিকের নিরাপত্তার কী হবে? এভাবে কি ব্যবসা করা যায়?
শামস্ মাহমুদ আরো বলেন, প্রতিবছর ২০ লাখ তরুণ কাজ করার যোগ্য হচ্ছেন। পাঁচ বছরেই এই সংখ্যা এক কোটিতে দাঁড়ায়। তাদের সবাই কী কাজ পাচ্ছেন? চাকরি পাচ্ছেন? ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারছেন? ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের ব্যবসা (এসএমই) খাত হচ্ছে কর্মসংস্থান তৈরির অন্যতম উৎস। এই খাতকে কী আমরা যথেষ্ট সহায়তা করছি? স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশের তালিকা থেকে বের না হওয়ার জন্য এখনই সরকারের পক্ষ থেকে আবেদন করতে হবে। মুখে মুখে উন্নয়নশীল দেশ হয়ে কোনো লাভ নেই।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম উৎস হচ্ছে পোশাক খাত। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় প্রায় এক সপ্তাহ এই খাতের রপ্তানিকারকেরা গোটা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলেন। রপ্তানি আদেশ (অর্ডার) পেতে সমস্যা হচ্ছিল। পণ্য রপ্তানিও করা যাচ্ছিল না। কারণ, বন্ধ ছিল বন্দর। হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ায় বিদেশি আমদানিকারকেরা কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারছিলেন না রপ্তানিকারকদের সঙ্গে। বন্দরে কারো পণ্য পড়ে ছিল। এই জন্য ক্ষতির শিকার হতে হয়েছে। কারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছে। কেউ কেউ কারখানা চালু রেখেছেন, তবে ভয়ে ভয়ে। পোশাকের পাশাপাশি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যও রপ্তানি আয়ের একটা বড় খাত। এক সপ্তাহে এই খাতের ক্ষতি হয়েছে ৩০০ কোটি টাকার বেশি।
বাংলাদেশ নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে, এটা ঠিক। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে। এই আলোচনা আরো আগেই করা যেত। তবে সময় ফুরিয়ে যায়নি। অন্য দিকে এক সপ্তাহ ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন থাকার খেসারত আমরা এখনো দিচ্ছি। ইন্টারনেট চালু হওয়ার পর আমরা যখন বিদেশি ক্রেতাদের বলছিলাম, ঠিক হয়ে গেছে। তাদের কেউ কেউ বিষয়টাকে পুরোপুরি আস্থায় নেয়নি। তাদের কাছে তথ্য ছিল যে, পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
মোহাম্মদ হাতেম আরো বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সরকার শুরু থেকেই লেজে-গোবরে করে ফেলেছে। রংপুরে যে আবু সাঈদকে হত্যা করা হলো, তার পরিপ্রেক্ষিতে দু’জন পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে ৩ জুলাই। অথচ দুই দিন আগে এই হত্যার দায়ে এক ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিশ্ববাসী দেখেছে, গুলি কোথা থেকে এসেছে। আমরা চাই- সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং সব হত্যার পেছনের হত্যাকারীদের বিচার হোক।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের দাবি একটা সহজ বিষয়ই ছিল। এর একটা সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাধান করা খুবই সম্ভব ছিল। কিন্তু সরকার এটাকে যথাযথভাবে সামাল দিতে পারেনি। সরকারকে ভুলপথে চলতে যারা প্ররোচনা দিয়েছে, আমরা তাদের সমালোচনা করি। যে বাচ্চাগুলোকে প্রাণ দিতে হয়েছে, তা কাম্য ছিল না। এখন আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা গেলে জনমনে স্বস্তি ফিরে আসবে। এই জন্য সরকারকে যথাসম্ভব ছাড় দিতে হবে। সূত্র : প্রথম আলো

সর্বশেষ - ঢাকা