মানুষের জীবনে যেসব কারণে ভ্রমণ করা জরুরি, সে তালিকা বেশ দীর্ঘ। সকল ধর্মেই ভ্রমণের গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে। এইসব ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক ভ্রমণ ছাড়াও স্বাস্থ্যগত কারণে, শিক্ষার প্রয়োজনে, সাংস্কৃতিক বিকাশে এবং মননের পুষ্টিতে ভ্রমণ অতীব জরুরি। ব্যক্তিজীবনের নান্দনিকতা স্ফূর্তির জন্য ভ্রমণ অপরিহার্য।
বিভিন্ন দার্শনিক ভ্রমণ সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের কথা এবং চিরন্তন বাণী উপহার দিয়েছেন। অনেকে বলেছেন, ভ্রমণের জন্য অর্থ ব্যয় করে কেউ গরিব হয় না। বরং শরীর ও মনের দিক থেকে আরও ধনী ও ঋদ্ধ হয়। জীবন ও জগৎ সম্পর্কে জ্ঞানস্পৃহা বৃদ্ধি পায় ভ্রমণে। জীবন হয় উপভোগ্য ও আলোকিত।
এজন্যই আধুনিক-অগ্রসর সমাজে বছরে একবার অন্তত ভ্রমণ করার প্রচলন দেখা যায়। কারণ, ভ্রমণের মাধ্যমে স্থান পরিবর্তন এবং নতুন প্রাণশক্তি আহরণ করা যায়। পাশাপাশি নিজেকে জানার জন্য অন্যতম একটা উপায় হিসাবে কাজ করে ভ্রমণ।
ভ্রমণ মানুষকে অনেক কিছু দিতে পারে। ভ্রমণ আপনাকে ভালো, দূরদর্শী মানুষ হতে এবং স্পষ্ট ও গভীর দৃষ্টি সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে । আপনার অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার বাস্তব তথ্যের ভিত্তিতে পরিপূর্ণতা লাভ করবে ভ্রমণের মাধ্যমে।
ভ্রমণের মাধ্যমে একজন মানুষ এমন একটা পর্যায়ে উত্তীর্ণ হয়, যখন অন্য মানুষেরা তার সঙ্গী-সহচর হতে পছন্দ করে । পরিবার ও সমাজে তার কার্যকর গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। ভ্রমণ মানুষকে সামাজিক ও প্রকৃতি-বান্ধব করে তুলে। পৃথিবীর অনিন্দ্য সুন্দর রূপ ও রসে ভরপুর হয় ভ্রমণকারীর জীবন আর অনুভূতি।
ভ্রমণ মানুষের সাহস, অভিজ্ঞতা ও ধৈর্য শক্তি বৃদ্ধি করে । ভ্রমণ করলে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলার হিম্মত ও কৌশল করায়ত্ত হয়। ফলে ভ্রমণের গুরুত্ব অপরিসীম ও বহুমাত্রিক।
ভ্রমণের দ্বারা ইতিবাচক মানসিকতা অর্জিত হয় সুতরাং আপনি ভ্রমণ করুন বেশি বেশি এবং এতে মানসিক চাপ হ্রাস পাবে, জীবন গতিশীল হবে এবং সামাজিক-পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। হতাশা ও আলস্য আপনার জীবন থেকে পালাবে। পাশাপাশি ভ্রমণ আপনার বুদ্ধিকে সচল রাখবে । আপনি সংস্কৃতি ও রাষ্ট্র ইতিহাস সব কিছুর ব্যাপারে স্বচক্ষে যখন দেখবেন তখন আপনার বুদ্ধি শক্তি আরও বৃদ্ধি পাবে। এজন্য জীবনে সৃষ্টি করুন নতুন নতুন ভ্রমণের সময় এবং ভ্রমণের স্থান।
বৈশ্বিক মহামারি করেনাকালে ভ্রমণের পরিসর ছোট হয়েছে, এটা ঠিক। আবার এই বিরূপ পরিস্থিতিতে সৃষ্টি হয়েছে নতুন নতুন ভ্রমণের সুযোগ ও সম্ভাবনা। দেশের ভেতরে, নিজের শৈশব ও কৈশোরের স্থানগুলো এই সুযোগে আবার নিবিড়ভাবে দেখে নিতে পারেন। বাংলাদেশের অপরূপ নদী, প্রকৃতি ও নিসর্গে কয়েক দিনের জন্য হারিয়ে যেতে পারেন আপনি। গ্রামজীবনের গভীরেও কিছুদিনের জন্য প্রবেশ করতে পারেন। কিংবা চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য উদ্ধারের প্রয়োজনেও ঘুরে আসতে পারেন আশপাশ থেকে।
ভ্রমণের জন্য আপনার সময় ও অর্থের বিনিয়োগের পুরোটাই থাকবে আপনার কাছে। এই কাজ করতে হবে একান্তই নিজের প্রয়োজনে। গতানুগতিক জীবনের বিবর থেকে মুক্তি ও পরিবর্তনের মাধ্যমে নিজেকে রিফ্রেশ করতে আপনাকে যেতে হবেই ভ্রমণের পথে।
একা কিংবা ট্যুরিজম এজেন্সির সাহায্য নিন এখনই। বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের প্যাকেটের সঙ্গে আপনার পরিকল্পনা সমন্বয় করে এখনই কথা বলুন। বিদেশের পাশাপাশি দেশের মধ্যেও ভ্রমণের নজর দিন। সুযোগ তৈরি করে বেড়িয়ে আসুন। তারপর অনুভব করুন নিজের ইতিবাচক পরিবর্তন আর তরতাজা অনুভূতিগুলো।