৮ অক্টোবর ২০২৫, এখন সময় সন্ধ্যা ৭:০৯ মিনিট
শিরোনাম
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. কৃষি
  6. খুলনা
  7. খেলাধূলা
  8. গণমাধ্যম
  9. চট্রগ্রাম
  10. জাতীয়
  11. ঢাকা
  12. তথ্য-প্রযুক্তি
  13. ধর্মতত্ত্ব
  14. প্রকৃতি-পরিবেশ
  15. প্রবাস জীবন

মানিকগঞ্জের চরবংখুরী গ্রামের পদ্মার শাখা নদীতে কুমিরের আনাগোনা

প্রতিবেদক
এ কে নাহিদ
অক্টোবর ৬, ২০২৫ ১০:৫৩ অপরাহ্ণ

মানিকগঞ্জের পদ্মা নদী সংলগ্ন চরবংখুরী গ্রামের পদ্মার শাখা নদীতে সম্প্রতি কুমিরের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সেই শাখা নদীতে প্রতিদিনই বেশ বড় আকারের বেশ কিছু কুমির ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে বলে স্থানীয় এলাকাবসীরা জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে শাখা নদীটি  প্রায় পুরোপুরি ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। এছাড়াও স্থানীয় জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছেন।
পদ্মা নদীর এই সরু শাখা নদীটি হরিরামপুর উপজেলার হারুকান্দি ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মানিকগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার চরবংখুরী গ্রামের মধ্য দিয়ে হরিরামপুর উপজেলার কাশিয়াখালী-বোয়ালী-ধুলশুড়া এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পদ্মার প্রবাহিত এই শাখা নদীতে কুমিরের আনাগোনায় স্থানীয়দের মধ্যে এখন চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। এই শাখা নদীতে একাধিক কুমির দেখতে পান এলাকার একাধিক নারী-পুরুষ। ফলে গ্রামের লোকজন ওই শাখা নদীতে গোসল করা থেকে শুরু করে জেলেদের মৎস্য শিকারেও ভীতির মধ্যে রয়েছেন। এই পর্যন্ত প্রায় ১০/১২টি কুমির দেখা গেছে বলে স্থানীয়রা জানান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পদ্মা নদী থেকে প্রবাহিত সরু এই শাখা নদীতে চলতি বর্ষা মৌসুমে আশানুরূপ পানি না হলেও এলাকাটি বেশ নিচু হওয়ায় শাখা নদীটি পানিতে টইটম্বুর। গত বেশ কিছুদিন ধরে প্রথম কুমির নজরে পরলেও বর্তমানে প্রায় প্রতিদিনই এই নদীতে কুমির দেখা যাচ্ছে। কুমিরগুলো দৈর্ঘ্য প্রায় সাত/আট হাত লম্বা হতে পারে বলে স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান। তাদের ধারণা, বর্ষার পানির সঙ্গে হয়তো পদ্মা নদী থেকেই এই সরু নদীতে কুমিরগুলো প্রবেশ করেছে।
সরেজমিন টাইমওয়াচ প্রতিনিধিকে একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রায় প্রতিদিনই এই শাখা নদীর পানিতে একাধিক কুমির ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে। এর ফলে এলাকার সাধারণ মানুষ ভয়ে শাখা নদীর পানির কাছাকাছি যেতে সাহস পাচ্ছেন না। এমনকি স্থানীয় জেলেদের অনেকেই কুমিরের আতঙ্কে মাছ শিকার করতে আসছেন না। এলাকাবাসী জানান, কুমিরের ভয়ে জেলেদের মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, শাখা নদী ঘেঁষে গড়ে ওঠা বাড়িগুলোর বাসিন্দারা দীর্ঘকাল ধরে গোসল, কাপড় ধোয়া এবং অন্যান্য গৃহস্থালির কাজের জন্য এই শাখা নদীর পানির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু কুমির আতঙ্কে অনেকে বাধ্য হয়ে শাখা নদীতে নামা বন্ধ করে দিয়েছেন। চরবংখুরী গ্রামের বাসিন্দা মাজেদা আক্তার এক ভীতিকর অভিজ্ঞতার কথা জানান। তিনি বলেন, সকালে পানি আনতে গিয়ে একটা কুমির খুব কাছে চলে আসে। আমার দিকে তেড়ে আসতে দেখে আমি দৌঁড়ে দূরে চলে যাই। পরে দেখি কুমিরটা পাশের একটা হাঁসকে ধরে নিয়ে যায়। হরিরামপুর উপজেলার তন্ত্রখোলা গ্রামের খন্দকার মহিদুর রহমান ওরফে ট্রাবল জানান, প্রায়ই আমাদের এই নদীতে কুমির ভাসতে দেখা যায়। কুমির দেখে ভয়ে অনেকেই দৌড়ে পালিয়ে যান। এসব কুমির পানিতে সাঁতার কাটা হাঁস ধরে নিয়ে চলে যায়। হরিরামপুর উপজেলার বোয়ালী এলাকার জেলেরা জানান, কুমিরের ভয়ে আমাগো মাছে ধরা বন্ধ হয়েছে। এমনিতেই দেশে পানি নাই। যা আছে এর ভেতর দিয়ে কয়ডা মাছ মাইরা খামু তাও কুমিরের জন্য পারছি না। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার চরবংখুরী গ্রামের আব্দুল হালিম কাজী জানান, গত প্রায় ১০/১২ দিন ধরে কুমিরগুলো দেখা যাচ্ছে। এতে নদীপাড়ের মানুষের মধ্যে বেশ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। জেলেরা ভয়ে অনেকটা মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি এই কুমির বিষয়ে প্রশাসনের প্রতি দৃষ্ট আকর্ষণ করেছেন। হরিরামপুর উপজেলার মির্জানগর গ্রামের শাকিল হোসাইন মাইজভাণ্ডারী বলেন, আমি লোকমুখে শুনেছি এই সকল কুমির ধরার লক্ষ্যে বন বিভাগের লোকজন আসবে। তিনি বলেন, আমার জীবদ্দশায় আমাদের অত্র এলাকায় এই ধরনের কুমিরের আগমন এই প্রথম শুনলাম। আমি অসুস্থ, তাই দেখতে পারছি না। ইতোপূর্বে আমাদের এই এলাকায় এই ধরনের আজব ঘটনা ঘটেনি। আমার কাছে এই বিষয়টি আজব ঘটনা মনে হচ্ছে।
হরিরামপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জহুরুল হক বলেন, বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। কুমির বন্যপ্রাণী হিসেবে সংরক্ষণের দায়িত্ব বন বিভাগের। বন বিভাগ যদি এ বিষয়ে আমাদের কাছে সহযোগিতা চায়, তাহলে আমরা তাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ফাহিজা বিসরাত জানান, বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। বন বিভাগের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। এই প্রসঙ্গে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মনোয়ার হোসেন মোল্লা জানিয়েছেন, কুমিরের বিষয়টি বন বিভাগকে অবগত করা হয়েছে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ - আইন-আদালত