২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, এখন সময় বিকাল ৫:৩৫ মিনিট
শিরোনাম
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. কৃষি
  6. খুলনা
  7. খেলাধূলা
  8. গণমাধ্যম
  9. চট্রগ্রাম
  10. জাতীয়
  11. ঢাকা
  12. তথ্য-প্রযুক্তি
  13. ধর্মতত্ত্ব
  14. প্রকৃতি-পরিবেশ
  15. প্রবাস জীবন

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী ট্রেনের যাত্রা শুরু

প্রতিবেদক
এ কে নাহিদ
ডিসেম্বর ২৫, ২০২৫ ২:১৩ অপরাহ্ণ

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে একটি নির্বাচিত সরকার গঠনের সামগ্রিক কার্যক্রম চলমান। পাশাপাশি গণভোটের রায়ে নির্ধারিত হতে যাচ্ছে সংবিধানসহ রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবের ভবিষ্যৎ। এরই অংশ হিসেবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। ফলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী ট্রেনের যাত্রা শুরু করেছে। এই নিয়েই এবারের টাইমওয়াচ প্রচ্ছদ প্রতিবেদন; লিখেছেন এ কে নাহিদ

দেশে বর্তমান পর্যন্ত ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে বিগত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ ছিল। দেশে একটি ফ্যাসিস্ট সরকার গড়ে ওঠার পেছনে কারচুপির ওই তিনটি নির্বাচনকে দায়ী করে আসছে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক। এরই আলোকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে দেশে গণ-অভ্যুত্থান ঘটে এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয় । জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল তাদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। ওই প্রার্থীরা এখন ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তাদের কর্মতৎপরতায় দেশে নির্বাচনী আমেজ বইছে। একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে পুরো দেশ। এমনকি আন্তর্জাতিক মহলেরও তীক্ষè দৃষ্টি রয়েছে আসন্ন এই নির্বাচনের দিকে। তবে এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারছে না। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় এবং নির্বাচনে কমিশনে দলটির নিবন্ধন স্থগিত থাকায় ভোটের বাইরে থাকতে হচ্ছে দলটিকে। এমনকি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনীর ফলে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাসহ দলটির পলাতক অনেক নেতা ইতোমধ্যে নির্বাচনে অযোগ্য হয়ে গেছেন। তবে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোটের শরিক নিবন্ধিত দলগুলো চাইলে এই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে। ইসি মনে করছে, আওয়ামী লীগ অংশ নিতে না পারলে আসন্ন নির্বাচনে কম-বেশি ৭০ শতাংশ ভোট পড়বে। বিগত তিনটি নির্বাচনে ভোট দিতে না পারা কয়েক কোটি তরুণ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য মুখিয়ে আছেন। ইসি সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন। দেশে ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ৭৬৬টি ও ভোটকক্ষ দুই লাখ ৪৫ হাজার ১৯৫টি। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়ায় এবার একই ভোটকক্ষে দুটি করে ভোট দেওয়ার স্থান নির্মাণ করা হচ্ছে। যেসব ভোটকক্ষে দুটি গোপন স্থান নির্মাণের অবকাঠামো সুবিধা নেই সেসব কেন্দ্রে বাড়তি ভোটকেন্দ্র করা হবে। এই হিসেবে নির্বাচনে ভোটকক্ষের সংখ্যা আরও বাড়বে। নির্বাচনে অন্যান্য প্রস্তুতির মধ্যে এই কমিশন নতুন রাজনৈতিক দল ও পর্যবেক্ষক নিবন্ধন, আইন সংস্কার, সীমানা পুনর্র্নিধারণ, রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও প্রবাসীদের সুবিধার্থে আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি চালু করেছে। সীমানা নির্ধারণ নিয়ে আদালতে ৩০টির বেশি রিট থাকলেও নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা নিয়ে জটিলতা দেখছে না কমিশন।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা
আগামী ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি দেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত ১১ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণে এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। একই দিনে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট আয়োজনেরও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্ন, শঙ্কা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলো নির্বাচন কমিশন।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সিইসি যেমন এই নির্বাচনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন, তেমনি ভোট আয়োজনে ইসির সামনে নানা চ্যালেঞ্জের কথাও বলেছেন। সব রাজনৈতিক দল, প্রার্থীদের ভোটে অংশ নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন সিইসি। একই সঙ্গে ভোটারদেরও নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহবান জানান তিনি।
দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট হবে সাদা এবং গণভোটের ব্যালট হবে গোলাপী। এবার নির্বাচনের দিনেই গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ায়, ভোটগ্রহণের সময় একঘণ্টা বাড়িয়ে সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা করা হয়েছে। রেওয়াজ অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণা থেকে ভোট গ্রহণের দিনের মধ্যে ৪০ থেকে ৪৫ দিনের পার্থক্য থাকে। তবে এবার সেই সময় বাড়িয়ে করা হয়েছে দুই মাস। এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে নির্বাচনের তফসিল চূড়ান্ত করে নির্বাচন কমিশন। পরে ওই দিনই জাতির উদ্দেশে সিইসি’র ভাষণ রেকর্ড করে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতার।
নির্বাচনের তফসিলে যা রয়েছে
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় আগামী ২৯ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে ১৪ জানুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আপিলের তারিখ আগামী ৬ থেকে ১২ জানুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত। মনোনয়ন বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে ১১ জানুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত; আপিল নিষ্পত্তি ১২ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত। রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারবে ২০ জানুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ ২১ জানুয়ারি ২০২৬। নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হবে ২২ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। তফসিল ঘোষণা শেষে সিইসি এ এম এম নাসিরউদ্দিন বলেন, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সকল রাজনৈতিক দল ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীসহ ভোটারদের আন্তরিক অংশগ্রহণ ও সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করছি। তিনি বলেন, সকলের প্রতি আমার আহবান- নির্বাচন ও গণভোট সফল করে আমাদের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখুন।
নির্বাচনী ভাষণে যা বললেন সিইসি
তফসিল ঘোষণা উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন গত বছরের গণঅভ্যুত্থানে ও এর প্রেক্ষাপটে বর্তমান নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অঙ্গীকার হচ্ছে- একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন; যা জাতি হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করবে। বিশ্ব দরবারে ভাবমূর্তি উজ্জল করবে। এই নির্বাচনে বর্তমান কমিশনের সামনে নানা চ্যালেঞ্জের কথা যেমন তুলে ধরেছেন, তেমন সুষ্ঠু ভোটে নির্বাচন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের প্রতি সহযোগিতা চেয়েছেন সিইসি। এসময় সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, প্রথম প্রকৃত গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পাশাপাশি কঙ্ক্ষিত সংস্কার প্রশ্নে সিদ্ধান্তের নির্বাচন এটি। নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে, এটি একটি নতুন অভিজ্ঞতা। দ্বিতীয়ত, সকল রাষ্ট্রীয় ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের জন্য সক্ষমতা প্রমাণ করে ভাবমূর্তি পূনরুদ্ধার করে অনন্য সুযোগ। তৃতীয়ত, দীর্ঘ গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামের পর দেশের স্বার্থে রাজনৈতিক দলসমূহের মাঝে সৌহাদ্যপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রতিযোগিতার ধারা প্রবর্তনের দাবি রাখে এই নির্বাচন। প্রবাসীদের জন্য ভোট চালু প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, চতুর্থত প্রায় অকার্যকর পোস্টাল ভোট ব্যবস্থাকে পরিমার্জন করে এই নির্বাচনে একটি কার্যকরি রূপ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের অন্যতম চালিকা শক্তি আমাদের রেমিট্যান্সযোদ্ধা প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারদের প্রথমবারের মতো ভোটের আয়োজন করে তাদের ভোটের আওতায় আনা হচ্ছে। তিনি সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের আহবান জানান।
সিইসিকে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়ন আদেশের ওপর গণভোটের তফসিল ঘোষণা করায় নির্বাচন কমিশনকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত ১১ ডিসেম্বর সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন তফসিল ঘোষণার পর প্রধান উপদেষ্টা এই শুভেচ্ছা জানান বলে প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে। শুভেচ্ছা বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অতিক্রম করলো। ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের পর দেশ এখন যে নতুন পথে অগ্রসর হচ্ছে- এই নির্বাচন ও গণভোট সেই পথরেখাকে দৃঢ় করবে, গণমানুষের মতকে প্রাধান্য দেবে এবং নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি আরও সুসংহত করবে। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি- নির্বাচন কমিশন তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবে স্বাধীনভাবে, নিরপেক্ষভাবে এবং সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে। নির্বাচন ও গণভোটকে উৎসবমুখর, অংশগ্রহণমূলক ও সম্পূর্ণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে। দেশের রাজনৈতিক সব দল, প্রার্থী, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ এবং সর্বোপরি দেশের জনগণের প্রতি আহবান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই নির্বাচন ও গণভোটকে একটি জাতীয় ঐক্যের উদ্যোগ হিসেবে গ্রহণ করুন। ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধা, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং গণতান্ত্রিক আচরণ আমাদের সামনের দিনগুলোকে আরও স্থিতিশীল করবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ নতুন ভবিষ্যতের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। আপনাদের সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও দায়িত্বশীল আচরণের মধ্য দিয়ে আমরা একটি আধুনিক, ন্যায়ভিত্তিক ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র নির্মাণে সফল হবো- এই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিলকে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য নতুন অধ্যায় হিসেবে অভিহিত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, তফসিলের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশ একটি কাঙিক্ষত গণতন্ত্রের দিকে যাত্রা শুরু করেছে। যে গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে এই দেশের জনগণ জীবন বাজি রেখে লড়াই-সংগ্রাম করেছে। মির্জা ফখরুল আশা প্রকাশ করে বলেন, আগামী নির্বাচনে গণতন্ত্র প্রিয় সব দল অংশ নেবে। একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হবে এবং সেই নির্বাচনটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কখনোই কোনো শঙ্কা ছিল না। বিএনপি বরাবরই বলে এসেছে নির্বাচনই সংকট উত্তরণের একমাত্র পথ। সেই পথে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হওয়ায় ঘোষিত তফসিলকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। ঘোষিত তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে রাজধানীতে মিছিল করেছে জামায়াত। দলটির নেতাকর্মীরা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহবান জানিয়েছে। ঘোষিত তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করায় নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন জানিয়েছে বাংলাদেশ লেবার পার্টিসহ দেশের বিভিন্ন দল।
নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বলে জানা গেছে। সন্ত্রাসমূলক কার্যক্রমের দায়ে সরকার দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে রেখেছে। সরকারের ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলটির নিবন্ধন স্থগিত করেছে ইসি। ওই স্থগিতের আদেশ দুটি প্রত্যাহার না হওয়ায় দলটির কেউ আসন্ন নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী হতে পারবেন না। আরও জানা গেছে, প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ব্যালট গত ৯ ডিসেম্বর চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’ রাখা হয়নি। জাতীয় পার্টির প্রতীক লাঙ্গলসহ নিবন্ধিত অন্য সব দলের প্রতীক রয়েছে এই পোস্টাল ব্যালটে। ইসির এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে না পারার বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদের বক্তব্যে আওয়ামী লীগের অংশ নিতে না পারার বিষয়টি আরও নিশ্চিত হওয়া যায়। গত ৯ ডিসেম্বর তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, পোস্টাল ব্যালটে স্থগিত হওয়া দলের প্রতীক থাকছে না। নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কী-না; এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বলবো- যে আইনে যাদের কথা বলা আছে, সেই সব দল অংশ নিতে পারবে। আমরা কাউকে নির্বাচনে অংশ নিতে নিষেধ করিনি।
উপদেষ্টারা পদে থেকে নির্বাচন করতে পারবেন না
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানান, উপদেষ্টারা পদে থেকে নির্বাচন করতে পারবেন না। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি ‘না’ সূচক উত্তর দেন। তিনি বলেন, ওই পদে থেকে কোনো ব্যক্তি নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন না। কোনো ব্যক্তি সরকারি পদে রয়েছেন, তিনি তো প্রচারণার বাইরে নির্বাচন করবেন না। সুতরাং এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, স্বপদে বহাল থেকে কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
নির্বাচন করতে প্রস্তুত বিএনপি
দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি এরই মধ্যে ২৭২টি সংসদীয় আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। প্রার্থীদের সবাই নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ, প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। নেতাকর্মীরাও স্বতঃস্ফুর্তভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। কিছু এলাকায় দ্বন্দ্ব থাকলেও তা মিটিয়ে ফেলতে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। সব মিলিয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির শতভাগ প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। গত ৮ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিভিন্ন এলাকায় আমাদের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে প্রার্থী মুখ্য নয়, এখানে মুখ্য হচ্ছে বিএনপি, এখানে মুখ্য হচ্ছে ধানের শীষ, এখানে মুখ্য হচ্ছে দেশ। মানুষ ধানের শীষের পক্ষে রায় দিলে দেশ গড়ার প্রতিটি পরিকল্পনা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারবো এবং করবো ইনশাআল্লাহ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, আমাদের শতভাগ নির্বাচনী প্রস্তুতি রয়েছে। বিগত দিনে যেসব শরিক দল আমাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করেছে, তাদের প্রতি আমরা দায়বদ্ধ। তাদেরকেও আসন ছাড় দেওয়া হবে। গত ৩ নভেম্বর ২৩৭টি আসনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে বিএনপি। যদিও এর পরদিনই একটি আসনে প্রার্থিতা স্থগিত করা হয়। এর মধ্যে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্বাচন করার কথা ফেনী-১, বগুড়া-৭ এবং দিনাজপুর-৩ আসনে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন।
এরপর গত ৪ ডিসেম্বর ৩৬টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা শরিক দলগুলোকে কোন আসন বা কতটি আসন দেওয়া হবে তা এখনো জানানো হয়নি। এ নিয়ে শরিকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এখনো বাকি থাকা ২৮টি আসন থেকে শরিকদের জন্য আসন ছাড় দেবে বলে বিএনপির নীতিনির্ধারক সূত্রে জানা গেছে। নির্বাচনী প্রস্তুতির বিষয়ে বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলন বলেন, আমরা যারা প্রার্থী, সবাই এলাকায় নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। জনগণের মধ্যেও উৎসব বিরাজ করছে।
শিগগিরই দেশে আসবেন তারেক রহমান
আসন্ন নির্বাচনী এই প্রস্তুতির মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। ফলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে এখন দেশে আসা খুবই দরকার বলে মনে করছেন দলের নেতাকর্মীরা। আজ তারেক জিয়া স্বপরিবারে দেশে ফিরেছেন।
জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলের নির্বাচনী প্রচারণা
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এরই মধ্যে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দিয়েছে। আগে দেওয়া প্রার্থীদের মধ্যে দু’জনকে বাদ দিয়ে একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও একজন সাংবাদিককে প্রার্থী করেছে দলটি। তবে নির্বাচনে একই ভোটব্যাংক রাখার চূড়ান্ত লক্ষ্যে কাজ করছে জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা আটটি দল। এই দলগুলোর মাঝে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাই প্রক্রিয়া। এক সঙ্গে কাজ করা এসব দলের মধ্যে ইসলামী আন্দোলন ৩০০ আসনে এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ২৬৮ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এসব প্রার্থী মাঠে নিজ দলের প্রতীক নিয়ে প্রচারও চালাচ্ছেন। জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচন বিভাগের সদস্য ইয়াসিন আরাফাত বলেন, আট দলের মধ্যে দীর্ঘদিন প্রার্থিতা নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চললেও এখন আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়েছে। এখানে কোনো দল আসন ভাগাভাগি করবে না। এই আট দলের যে প্রার্থী যে আসনে জনপ্রিয়, যে প্রার্থী বিজয় নিয়ে আসতে পারবেন তাকেই সমর্থন দেওয়া হবে। অন্য প্রার্থীদের প্রত্যাহার করা হবে। কোনো একটি দলের অধীনে অন্য দলগুলো এক হচ্ছে না। তবে সবাই এক হয়ে কাজ করছেন। আমরা বেসরকারি বিভিন্ন জরিপের মাধ্যমে প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা বাচাই করছি। ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক শেখ ফজলুল করীম মারুফ বলেন, অচিরেই আমরা আট দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করে ফেলতে পারবো বলে আশা করছি। আমাদের মধ্যে এখনো চূড়ান্ত আলাপই হয়নি। সবাই তো নিজেদের প্রার্থীকে এগিয়ে রাখতে চাইবেন। তবে এবার আমরা নিজেদের প্রার্থিতার চেয়ে ইসলামের শক্তিকে বিজয় করার চেষ্ট করছি। এতে চূড়ান্ত ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়েই আমরা সবাই কাজ করছি। এদিকে জামায়াতের সূত্র বলছে, নির্বাচনী মাঠে জামায়াতে ইসলামী ও দাঁড়িপাল্লা বড় পরিচিতি পেয়েছে। এই অবস্থায় সঠিক প্রার্থী দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।

এনসিপি ও তাদের জোটের অবস্থান

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহবায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, আমরা নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করে ফেলেছি। অচিরেই প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। প্রাথমিকভাবে আমরা ১০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করবো। পরে আরো ১০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। এরপর প্রার্থীরা তার নিজ নিজ এলাকায় প্রচারণা শুরু করবেন। এদিকে গত ৭ ডিসেম্বর রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও আমার বাংলাদেশ পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে এনসিপি ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’ নামে একটি নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ করে। তবে জোট থেকে কিভাবে নির্বাচন করা হবে তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে দলীয় সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই বিষয়ে সারোয়ার তুষার বলেন, আমরা এখন নিজ দল থেকে ১০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করবো। পরে ২০০ আসন জোটের সঙ্গে সমাঝোতা করে ঘোষণা করা হবে।
প্রসঙ্গ নির্বাচন জাতীয় পার্টি যা বলছে
জি এম কাদেরের জাতীয় পার্টি সংস্কার কমিশনগুলো, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং নির্বাচন কমিশনের সংলাপেও আমন্ত্রণ পায়নি। এই অবস্থায় দলটি নির্বাচন করবে কী-না সেই বিষয়টি এখনো অস্পষ্ট। দলটির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, যে নির্বাচন কমিশন গণঅধিকার পরিষদের হুমকির মুখে জাতীয় পার্টিকে ডাকতে সাহস পায় না, সেই নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ভোট কিভাবে করবে? ভোটের সময় তো হুমকি আরো বেশি আসবে। সেই হুমকিতে তখন কমিশন কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে? এ ছাড়া গত এক বছর বা ১৪ মাসে বিশেষ কিছু দলের সুবিধার্থে প্রশাসনিক কাঠামো সাজানো হয়েছে। এই সাজানো প্রশাসনিক কাঠামোতে ভোট হলে সাজানো বা পাতানো ভোট হবে।
নতুন ২০ দলীয় নির্বাচনী জোট
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ৮ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির (জেপি) আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং জাতীয় পার্টির (একাংশ) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বে ‘জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ)’ নামের নতুন নির্বাচনী জোট আত্মপ্রকাশ করেছে। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত এই ২০ দলীয় জোটের অন্যতম দাবি, নির্বাচনে বৈষম্যহীন, নিরপেক্ষ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। জোটটির নির্বাচনী প্রস্তুতির বিষয়টি এখনো অস্পষ্ট।
প্রসঙ্গ বৃহত্তর সুন্নি জোট
সারা দেশে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তিনটি ইসলামী দলের সমন্বয়ে গঠিত ‘বৃহত্তর সুন্নি জোট’। দলগুলো ইতোমধ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৩ দফা দাবি আদায়ে জোটের ব্যানারে মাঠে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকিদায় বিশ্বাসী সারা দেশের ১২ হাজার দরবারকেও আলাদা জোটের ব্যানারে এক ছাতার নিচে আনা হচ্ছে। নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত সমমনা আরও দল যুক্ত করে জোট সম্প্রসারণের কাজও চলছে। এ জোটের পক্ষে ইসলামিক বক্তা হিসাবে পরিচিত গিয়াস উদ্দিন আততাহেরীসহ জনপ্রিয় ইসলামী বক্তারা প্রচারণাও শুরু করেছেন। যে তিন দলের অ্যালায়েন্স বা রাজনৈতিক জোট হয়েছে সেগুলো হচ্ছে; বাংলাদেশী ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)। মাজার-দরবারে হামলা-ভাঙচুর, আলেম-ওলামাদের হত্যাসহ নানা ইস্যুতে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নিজেদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরার লক্ষেই এ ঐক্য গড়ে তোলা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তিন দলের তিন চেয়ারম্যানও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি প্রার্থী হিসাবে অংশ নেবেন। এরা হচ্ছেন ইসলামী ফ্রন্টের (মোমবাতি) চেয়ারম্যান মাওলানা এমএ মতিন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের (চেয়ার) চেয়ারম্যান আল্লামা সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি- বিএসপি’র (একতারা) চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী। ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এম এ মতিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দাবি-দাওয়া পূরণ, অধিকার আদায় এবং রাষ্ট্রের কল্যাণ করতে গেলে সংসদে যাওয়ার বিকল্প নেই। তাদের দল গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। কিন্তু ১৬ বছর যেভাবে গণতন্ত্র হত্যা করা হয়েছে তা নজিরবিহীন। ওই সময়ে কোনো কোনো নির্বাচনে তার দল অংশ নিলেও স্বৈরাচারী আচরণের কারণে আবার নির্বাচন বয়কটও করেছে। ২৪ এর অভ্যুত্থান ও ছাত্র-জনতার রক্তের সিঁড়ি বেয়ে দেশ এখন গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে। তাই তিন দলের সমন্বয়ে তাদের যে জোট হয়েছে সেই জোট সারা দেশে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে। দলের চেয়ারম্যান হিসেবে তিন দলের প্রধানগণ নির্বাচনে অংশ নেবেন। তবে কে কোন আসনে নির্বাচন করবেন সেটি এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। একই সঙ্গে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত সমমনা দল নিয়ে এই জোট আরও সম্প্রসারণের কাজ চলছে বলে জানান তিনি। জানা গেছে, গত ৩০ আগস্ট তিন ইসলামী দলের সমন্বয়ে রাজনৈতিক জোটের ঘোষণা দেওয়া হয়। জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বৃহত্তর সুন্নি জোট’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এই জোট। ইতোমধ্যে জোটের পক্ষ থেকে ১৩ দফা দাবিতে বিভাগীয় শহরে জনসভা করা হচ্ছে। গত ১৫ নভেম্বর চট্টগ্রামের লালদিঘি মাঠে বিশাল জনসভার আয়োজন করা হয়। এছাড়াও গত ১০ ডিসেম্বর সিলেটে এবং গত ২২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জনসভার জনসভার আয়োজন করা হয়। এরপর নারায়াণগঞ্জ এবং সর্বশেষ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার আয়োজন করা হবে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। এই জোটের ১৩ দফার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা, নির্বাচনের আগে কম্বিং অপারেশনের মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধার করা, দুর্নীতিবাজ, কালোটাকার মালিক, অর্থপাচারকারীদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা, জুলাই ও জুলাই-পরবর্তী সব হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করা, দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডত্বের প্রশ্নে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদেশি মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া, চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে না দেওয়া, আরাকান আর্মিকে করিডর না দেওয়া। রাজধানী ঢাকায় একজন স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী ওসমান হাদী প্রকাশ্য দিবালোকে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান ড. শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পরপরই একজন প্রার্থী এমন হামলার শিকার হওয়া আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী এবং ভোটারদের নিরাপত্তা নিয়ে বড় ধরণের শঙ্কা তৈরি করেছে। তিনি অভিযোগ করেন, এই ঘটনা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির নাজুক অবস্থার প্রতিফলন। ৫ আগস্ট এর পর থানা থেকে পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারেও সরকারের উদাসীনতার সমালোচনা করেন তিনি। তার আশঙ্কা- এসব অস্ত্র আগামী নির্বাচনে নাশকতার উদ্দেশ্যে ব্যবহার হতে পারে। তিনি বলেন, একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য অবিলম্বে কঠোরভাবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। জনগণের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনাই এখন সবচেয়ে জরুরি।
নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন বাম দলগুলোর
নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা প্রসঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, আমরাও চাই সরকার তার ঘোষিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন করুক। কিন্তু নির্বাচনের জন্য যে ধরনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকা দরকার সরকার তা এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি। নির্বাচনের সময় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিয়ে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর জনগণের আস্থা বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে। নির্বাচনে বেশুমার টাকার খেলা বন্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। এই নির্বাচনকে কোনো অবস্থাতেই অতীতের স্বৈরাচারী আমলের মতো প্রশ্নবিদ্ধ করা করা যাবে না। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন, সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্যোগী হতে হবে। বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সরকার, নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা দরকার। নির্বাচনে টাকার শক্তি, পেশিশক্তি, সাম্প্রদায়িকতা, আঞ্চলিকতা ও প্রশাসনিক কারসাজিমুক্ত নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং সবার ভোট দেওয়া ও প্রার্থী হওয়ার সমান অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে আগে একটি গ্রহণযোগ্য পরিবেশ তৈরি জরুরি। সেই পরিবেশ সৃষ্টি করাই নির্বাচন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিক দল, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সমন্বিত ভূমিকা ছাড়া এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব না।
তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের শঙ্কা ছড়ানো হচ্ছে। বিভিন্ন মহল নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে। আমরা মনে করি, এসব শঙ্কা দূর করে সময়মতো নির্বাচন হওয়া সম্ভব। এ জন্য জনগণ ও রাজনৈতিক দলের ঐক্য প্রয়োজন।
সবশেষ কথা
তফসিল ঘোষণার পর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির কাজ ইসি শুরু করবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ। তিনি বলেন, চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ। প্রত্যেক কাজের জন্য, দেশের স্থিতিশীলতার জন্য, দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য, দেশের উন্নয়নের জন্য আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ দরকার। আসন্ন নির্বাচনে নিরাপত্তা বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছি। তিনি আরও বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির বিষয়টি তফসিল ঘোষণার পর থেকে আমাদের কবজায় আসবে। এখন পার্টি যদি মারামারি করে আমার তো কোনো দায়িত্ব নেই। তাই সুস্ঠু নির্বাচনের জন্য দেশের প্রতিটি নাগরিককে সচেতন হতে হবে। দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। পাশাপাশি সঠিক গণতন্ত্র চর্চার মধ্য দিয়ে দেশ উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাক; এটিই আমাদের প্রত্যাশা।৩

সর্বশেষ - আইন-আদালত