১১ আগস্ট ২০২৫, এখন সময় দুপুর ১:৪৭ মিনিট
শিরোনাম
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. কৃষি
  6. খুলনা
  7. খেলাধূলা
  8. গণমাধ্যম
  9. চট্রগ্রাম
  10. জাতীয়
  11. ঢাকা
  12. তথ্য-প্রযুক্তি
  13. ধর্মতত্ত্ব
  14. প্রকৃতি-পরিবেশ
  15. প্রবাস জীবন

নীরবে নিভৃতে চলে গেলেন হযরত শাহসুফি মোঃ আবুল কালাম আজাদ আল মাইজভাণ্ডারী

প্রতিবেদক
এ কে নাহিদ
জুলাই ২৮, ২০২৫ ৫:০৬ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) অতিরিক্ত মহাসচিব সাবেক সিনিয়র এএসপি শাহ মোঃ আবুল কালাম আজাদ মাইজভাণ্ডারী ৩ জুলাই ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ, ১৯ আাষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৭ মহররম ১৪৪৭ হিজরী, বৃহস্পতিবার বিকাল ৫.৩০ মিনিটে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই নশ্বর পৃথিবী থেকে ওফাত হয়েছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বিএসপির দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ ইব্রাহিম মিয়া স্বাক্ষরিত পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানা গেছে। বিএসপির পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, তার ইন্তেকালে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন ও বিএসপির চেয়ারম্যান হযরত শাহসুফি সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী ওয়াল হোসাইনী আল মাইজভাণ্ডারী (ম:জি:আ)। ওই শোক বার্তায় তিনি বলেন, শাহ আবুল কালাম আজাদ নিঃস্বার্থ, ত্যাগী, পরোপকারী, সদাহাস্যোজ্জ্বল একজন দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ ছিলেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি গঠনে তার কঠোর পরিশ্রম, মেধা, সততা, ন্যায়পরায়ণতা, দক্ষতার সঙ্গে কাজের প্রতি দায়িত্ববোধ বিএসপির নেতাকর্মী ও সুফিবাদী জনতার নিকট চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বিএসপি প্রতিষ্ঠায় তার অবদান ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তার মৃত্যুতে বিএসপি ও দেশ-জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে; যা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। আবুল কালাম আজাদের প্রথম নামাজে জানাজা ৩ জুলাই বাদ এশা (রাত ৯টা) ঢাকা মিরপুর-১ শাহ আলীবাগ বিএসপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা নামাজের ইমামতি করেন বিএসপি চেয়ারম্যান ও মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের সাজ্জাদাশীন হযরত শাহসুফি ড. শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী ওয়াল হোসাইনী আল মাইজভাণ্ডারী (ম:জি:আ)। এছাড়াও আফতাব নগরে তার নিজ বাসভবনে দ্বিতীয় জানাজা এবং ৪ জুলাই বাদ জুমা পটুয়াখালী সদরে মুসলিম কবরস্থান জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে তৃতীয় জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়।
শাহ আবুল কালাম আজাদ সুফিবাদী তথা গুরুবাদী দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি প্রচারবিমুখ কবি ছিলেন। তিনি ১৯৫৭ সালের ৩১ জানুয়ারি পটুয়াখালী জেলা দশমিনা থানার খলিসাখালী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম এ কে এম হোসেন ও মায়ের নাম ফজিলাতুননেছা। তার পিতা কর্মজীবনে একজন স্বনামখ্যাত আইনজীবী ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ ও পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। কবি আবুল কালাম আজাদের জন্মস্থান নিভৃত পল্লীতে। তিনি ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন। তিনি তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত মক্তবে লেখাপড়া করেন। পিতার আইন পেশার সুবাদে তিনি চতুর্থ শ্রেণী হতে পটুয়াখালী মহকুমা শহরে লতিফ স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন। তিনি লতিফ স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি এবং পটুয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি ও স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৭৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দর্শন বিভাগে এম এ প্রথম পর্ব শেষ করার পর ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় পর্বে অধ্যয়নকালীন সময়ে বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের সার্জেন্ট পদে যোগদান করেন। তিনি ১৯৮৩ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৯০ সালে তিনি এস আই পদে পদায়ন হন। তিনি ২০০০ সালে পুলিশ ইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি পেয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন থানায় সুনামের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একজন কৃতি এ্যাথলেট। তিনি দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নকালে একজন সফল ক্রীড়াবিদ হিসেবে প্রশংসা লাভ করেন। বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীর পক্ষ হয়ে তিনি দুই বার জাতীয় এ্যাথলেটিক প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। তার পুত্র সন্তান দেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি প্রভাষক ও কন্যা চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত । বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগে চাকরির সুবাদে শাহ মোঃ আবুল কালাম আজাদ নিবিড়ভাবে লক্ষ্য করেছেন, দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের অবক্ষয়; যা তার বিভিন্ন কবিতায় প্রকাশিত। দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তার একাধিক কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। তিনি মনে করতেন- যুবকরাই পারে একটি রাষ্ট্র, একটি সমাজকে বদলে দিতে। তাই তার ‘হে যুবক’ দিয়ে শুরু করা কবিতাগুলো অন্ধকার জগৎ থেকে আলোর ভবনে প্রবেশের পথকে স্বচ্ছ করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তিনি আরো মনে করতেন ‘যৌবন যার, সবকিছুই করতে হয় তার।’
দেশ-বিদেশে শাহ মোঃ আবুল কালাম আজাদ মাইজভাণ্ডারীর অগণিত ভক্ত-আশেক ও গুণগ্রাহী রয়েছেন। তিনি আজাদীয়া দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন ছিলেন। তার নিজ হাতে গড়া গাজীপুরে ‘গুরু ছায়া সুফি চর্চা কেন্দ্র’ নামের একটি আশ্রম রয়েছে। তার একজন অনুগত ভক্ত ডাঃ মোঃ ফয়সাল মিয়া এই প্রতিবেদককে জানান, আমার গর্ভধারিনী মা এবং আমার প্রাণপ্রিয় মুর্শিদ কেবলা হযরত শাহসুফি আবুল কালাম আজাদ আল মাইজভাণ্ডারী বাবাজানের মতো সরল ও সহজ মানুষ আমি কখনো দেখিনি। ‘স্রষ্টার সকল সৃষ্টিকে ভালোবাসা উচিত’ এই উপলব্ধি আমার মুর্শিদ কেবলা আমাকে শিখিয়েছেন।
শাহ মোঃ আবুল কালাম আজাদ মাইজভাণ্ডারীর জীবদ্দশায় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমার দৃষ্টিতে, জীবদ্দশায় তিনি অমায়িক মানুষ ছিলেন। তিনি অধিক বয়সের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও চির তারুণ্যে, নব জাগরণে জীবন অতিবাহিত করেছেন। আমি তার প্রেমময় মধুর কথায় মুগ্ধ হতাম। তিনি আমাকে বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিয়েছেন। এই স্মৃতি আমার জীবদ্দশায় ভুলা সম্ভব নয়। রাজধানীর মিরপুর-১ শাহ আলীবাগ মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের কেন্দ্রীয় খানকা শরীফে ২০২২ সালের ৪ মার্চ তার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয়। ওই দিন থেকেই আমি তার কথায় মুগ্ধ হই। তিনি আমাকে তার সমবয়সী বন্ধুর মতো আদর-স্নেহ-সম্মান করতেন। তিনি অতি অল্প সময়ে আমাকে মায়ার বাধনে আবদ্ধ করে আড়ালে চলে গেছেন; এখন তার স্মৃতি মনে পড়লেই আমার আঁখিজলে বুক ভেসে যায়। লেখক : সম্পাদক, টাইমওয়াচ

সর্বশেষ - আইন-আদালত