উপমহাদেশের প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক সাধক গাউসুল আজম হযরত মাওলানা শাহসুফি সৈয়দ গোলামুর রহমান (ক.) প্রকাশ বাবাভাণ্ডারীর তিন দিনব্যাপী ১৬০তম খোশরোজ শরীফ চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ঐতিহাসিক মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফে ব্যাপক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। আঞ্জুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভাণ্ডারীয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের ব্যবস্থাপনায় কর্মসূচির মধ্যে ছিল- খতমে কোরআন, খতমে গাউসিয়া ও রওজায় গিলাফ ছড়ানো, ফ্রি চিকিৎসা সেবা, ছেমা কাওয়ালী, ওয়াজ-মিলাদ মাহফিল ও তবারক বিতরণ। এই আয়োজনে পুরো দরবার প্রাঙ্গণ ‘নারায়ে তাকবীরু আল্লাহু আকবার’, ‘নারায়ে রিসালাতু ইয়া রাসুলাল্লাহ (দঃ)’ ও ‘আল্লাহু আল্লাহু’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত ধর্মীয় আবেগে উদ্বেল ভক্তরা আধ্যাত্মিক পরিবেশে আত্মনিবেদনে মগ্ন থাকেন।
১৫ অক্টোবর খোশরোজ শরীফের শেষ দিনে আখেরি মোনাজাতে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা, হেদায়েত ও শান্তির আকুতি জানিয়ে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর মঙ্গল কামনার পাশাপাশি ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের শান্তি, নিরাপত্তা ও মুক্তি কামনা করা হয়। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন হযরত শাহসুফি সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী (মা.জি.আ.)। এই সময় লাখো কন্ঠে ‘আমীন, আমীন ধ্বনী’ উচ্চারিত হয় ।
মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) চেয়ারম্যান হযরত শাহসুফি সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী (মা.জি.আ.) বলেন, হাজার বছরের ধর্মীয় সহনশীলতা ও সম্প্রীতির ঐতিহ্য ধারন করে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। এই সম্প্রীতির ভিত্তি রচনা করেছেন আউলিয়ায়ে কেরাম। তাঁরা জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে ভালোবাসার শিক্ষা দিয়েছেন। তাসাউফের আলোকে তাঁরা এমন একটি সমাজ গঠন করেছেন, যেখানে হিংসা নেই, বিদ্বেষ নেই- আছে মানবতা, ভালোবাসা ও নিরাপত্তাবোধ। তিনি বলেন, মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের মাশায়েখগণ তিন শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে মানুষের আত্মিক উন্নয়ন ও সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছেন। যতদিন এই তাসাউফের দর্শন টিকে থাকবে, ততদিন সমাজে শান্তি থাকবে এবং উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দেশে উগ্রবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন দরগা-মাজার-খানকা শরীফে হামলা-ভাংচুর করা হচ্ছে। এই ব্যাপারে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশের প্রত্যেকের হৃদয়ে নবীর মহবত জাগিয়ে তুলতে হবে।
হযরত শাহসুফি সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী বলেন, দেশে ইসলামের নামে কোরআনের অপব্যখ্যা হচ্ছে। কিছুদিন আগে অপব্যাখ্যা করে নবীকে সাংবাদিক বলা হয়েছে। এসব ঘটনা নবীর সঙ্গে বেয়াদবির সামিল। যারা বেয়াদবি করবে, তাদের ধ্বংস অনিবার্য বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মাইজভাণ্ডার হেদায়েতের দরবার। এখানে আগত লাখো ভক্ত কেবল প্রার্থনায় অংশ নেন না, বরং আত্মশুদ্ধি ও নৈতিক উন্নয়নের অঙ্গীকারে নিজেকে সমর্পণ করেন। এ দরবারে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এক আত্মিক বন্ধনে আবদ্ধ হন, যেখানে শুধু ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও মানবতার বাণী উচ্চারিত হয়।
খোশরোজ শরীফ মাহফিলে বিশেষ অতিথি ছিলেন মইনীয়া যুব ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা শাহজাদা সৈয়দ মেহবুবে মইনুদ্দীন (মা.জি.আ.),সভাপতি শাহজাদা সৈয়দ মাশুক এ মইনুদ্দীন, আঞ্জুমানে রহমানিয়া মইনিয়া মাইজভাণ্ডারীয়ার সাধারণ সম্পাদক খলিফা শাহ মোহাম্মদ আলমগীর খান মাইজভাণ্ডারী। মাহফিল সঞ্চালনা করেন মাওলানা রুহুল আমিন ভূঁইয়া। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের নেতৃবৃন্দ, দেশবরেণ্য পীর-মাশায়েখ, আলেম-ওলামা।


















