প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদনের প্রাথমিক ক্ষমতা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন মার্চেন্ট ব্যাংকাররা। তাঁরা বলছেন, আইপিও প্রক্রিয়াকরণের কাজ নিয়ন্ত্রক সংস্থার নয়, স্টক এক্সচেঞ্জের করা উচিত। একই সঙ্গে আইপিও অনুমোদন ও বুক বিল্ডিং পদ্ধতি সহজীকরণে এসংক্রান্ত আইন সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
২১ আগস্ট ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ সোমবার ডিএসই সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সঙ্গে তালিকাভুক্তিসংক্রান্ত সমন্বয়সভায় এই প্রস্তাব করা হয়।
স্টক এক্সচেঞ্জে নতুন নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তি ত্বরান্বিত করা এবং পুঁজিবাজার উন্নয়নে মানসম্পন্ন আইপিও আনতে এই সভার আয়োজন করে ডিএসই।
ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এম সাইফুর রহমান মজুমদারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন ডিএসইর প্রধান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা খায়রুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ এবং মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ডিভিশনের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মো. ছামিউল ইসলাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বলেন, ‘দেশে ৬৮টি মার্চেন্ট ব্যাংক কাজ করছে। কিন্তু নতুন আইপিও আনার অনুপাত অন্যান্য দেশের তুলনায় খুবই কম। ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে ২১৬টি মার্চেন্ট ব্যাংক আছে এবং সেখানে দুই হাজার ২১৩টি কম্পানি তালিকাভুক্ত। পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জে ১৩টি মার্চেন্ট ব্যাংক ৫২৪টি কম্পানি তালিকাভুক্ত করেছে। বোরসা মালয়েশিয়া ও কলম্বো স্টক এক্সচেঞ্জে ইস্যু ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি অনুযায়ী গড় তালিকাভুক্ত কোম্পানি যথাক্রমে ২৪ ও ১২টি।
ডিএসই গড় মাত্র পাঁচটি। আরো বেশি আইপিও আনতে আমাদের যৌথভাবে কাজ করতে হবে এবং ইস্যু ম্যানেজারদের সক্রিয় হতে হবে।’
ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এম সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, ডিএসই পুঁজিবাজারের সব মার্চেন্ট ব্যাংকার্স প্রতিনিধির সঙ্গে তালিকাভুক্তিসংক্রান্ত সমন্বয়সভা করছে মূলত বাজারের গভীরতা বৃদ্ধি, তথা ভালো কম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তিতে উত্সাহিত করার লক্ষ্যে। মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান কাজ হচ্ছে পুঁজিবাজারে ভালো ভালো কম্পানি তালিকাভুক্ত করা, যা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করে।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে যখন প্রস্তাব দেওয়া হয়, তখন কম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হলে তাদের লাভ কী সে বিষয়ে জানতে চায়।
কিন্তু মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো তাদের লাভের বিষয়ে বলতে পারে না। কারণ মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোই জানে না যে তালিকাভুক্ত হলে কম্পানিগুলোর কী লাভ হবে। বাজারে তালিকাভুক্তি ও বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে অনেকবার কথা হয়েছে এবং তাদের বেশ কিছু বিষয় বোঝানো হয়েছে। দীর্ঘদিন বোঝানোর ফলে বিএসইসি অনেক কিছু আমলে নিলেও এনবিআর এখনো কোনো বিষয় আমলে নেয়নি। ফলে তালিকাভুক্ত হলে কোনো লাভ হবে না দেখে কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হচ্ছে না বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, বর্তমানে কোম্পানিগুলো ব্যাংকনির্ভর। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে কোম্পানির এক থেকে দেড় বছর সময় লাগে। কিন্তু ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে সময় লাগে দুই থেকে তিন মাস। সে ক্ষেত্রে সরকারের পলিসি থেকে যদি উদ্বুদ্ধ করানো না যায়, তাহলে তালিকাভুক্তি বাড়ানো যাবে না। সরকারি হিসাবে কম্পানি আছে দুই লাখের বেশি, যার মধ্যে মার্কেটে আছে ৩৫০টি, যা ২ শতাংশের কম। কারণ তাদের তালিকাভুক্ত হওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তিন বছরের মধ্যে তালিকাভুক্ত হওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় সময় বেশি লাগলেও বর্তমানে পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বেশি বলে জানান তিনি।
সভায় আরো বক্তব্য দেন ডিএসইর প্রধান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা খাইরুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ, লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার আলম, আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেনারেল ম্যানেজার মাজেদা খাতুন, আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজা উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।