চলতি বছরে জুন শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি ৮৭ কোটি টাকা। যা একই সময়ের মোট ঋণ স্থিতির ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এ সময় ব্যাংক খাতের মোট ঋণ স্থিতির পরিমাণ ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। এ তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ বিতরণ, খেলাপি ঋণ সম্পর্কিত সর্বশেষ প্রতিবেদন ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ স্থিতির তিন লাখ ১২ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ২ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা। খেলাপির হার ৩২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। তথ্যে দেখা যায়, অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২১ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা; খেলাপির হার ৩০ দশমিক ৫৯ শতাংশ। বিডিবিএল ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৪৩ কোটি টাকা, খেলাপির হার ৪২ দশমিক ৩০ শতাংশ। বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা, খেলাপির হার ৬৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ। জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা ; খেলাপি ঋণের হার ৫২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। রুপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা, খেলাপি ঋণের হার ২৩ শতাংশ। সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৩ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা; খেলাপি ঋণের হার ১৪ দশমিক ৮১ শতাংশ।
রাষ্ট্র মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৩ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের হার পাঁচ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের হার ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৮৫ কোটি টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ২৪২ কোটি টাকা।
বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের গড় হার ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। বেসরকারি এসব ব্যাংকের চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মোট ঋণ স্থিতি ১২ লাখ ৫৮ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৯ হাজার ৯২২ কোটি টাকা।
দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ ন্যাশনাল ব্যাংকের। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২০ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা। যা ব্যাংকটির মোট বিতরণ করা ঋণের ৪৯ শতাংশ। অন্যদিকে বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, দেশের পদ্মা ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের প্রায় পুরোটাই খেলাপি ঋণ। ব্যাংক তিনটির খেলাপি ঋণের হার যথাক্রমে ৯৬ শতাংশ, ৮৫ শতাংশ ও ৮৯ শতাংশ। এবি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা; যা মোট ঋণের ৩০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আল ফারাহ ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের তিন হাজার ১১০ কোটি ২৩ লাখ টাকা; যা মোট ঋণের ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৩৩১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা; যা মোট ঋণের ৬ শতাংশ। ব্যাংক এশিয়ার খেলাপি ঋণের পরিমাণ দুই হাজার ৩৮৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা; খেলাপির হার ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ব্র্যাক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৬১৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা; যা মোট ঋণের ২ দশমিক ৯০ শতাংশ। কমিউনিটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা, ব্যাংকটির খেলাপির হার দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঢাকা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৩১১ কোটি ১৬ লাখ, খেলাপির হার ৫ শতাংশ। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দুই হাজার ৪৭১ কোটি টাকা, ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ৬ শতাংশ। ইস্ট্যার্ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ১৯৬ কোটি টাকা; ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ।
এক্সিম ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৮৬৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ফার্স্ট সিকিউরটি ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দুই হাজার ৬৯০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩২৭ কোটি টাকা; খেলাপি ঋণের হার ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ সাত হাজার ৭২৪ কোটি টাকা ৪৬ লাখ টাকা, ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ৪ দশমিক ৪২ শতাংশ। আইএফআইসি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ তিন হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা; খেলাপির হার ৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। যমুনা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯০৬ কোটি টাকা; খেলাপির হার ৫ শতাংশ। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৭৩০ কোটি টাকা, ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। মিডল্যান্ড ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৩৬ কোটি ৮০ হাজার টাকা, খেলাপির হার ৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। মধুমতির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৩৩ কোটি টাকা; খেলাপির হার ২ শতাংশ। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা; খেলাপির হার ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এনসিসি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৩০৬ কোটি টাকা; ৫ দশমিক ৭২ লাখ টাকা। মেঘনার খেলাপি ঋণ ২৭৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা; খেলাপির হার ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। এনআরবি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩৪৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, খেলাপির হার ৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এনআরবিসি ব্যাংকের খেলাপির পরিমাণ এক হাজার ২০৩ কোটি টাকা; খেলাপির হার ৭ দশকি ৭৯ শতাংশ। ওয়ান ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দুই হাজার ৬৪২ কোটি টাকা, খেলাপির হার ১২ শতাংশ। পদ্মা ব্যাংকের খেলাপির পরিমাণ চার হাজার ৮৪২ কোটি টাকা; খেলাপির হার ৮৬ শতাংশ। প্রিমিয়ার ব্যাংকের খেলাপির হার এক হাজার ৭৭১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা; খেলাপির হার ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। প্রাইম ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ২০৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা; খেলাপির হার ৩ দশকিক ৭৩ শতাংশ। পূবালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এক হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা; খেলাপি ঋণের হার ৩ শতাংশ। শাজালাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ১৭৭ কোটি টাকা; খেলাপি ঋণের হার ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ। সীমান্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২২ কোটি টাকা; খেলাপি ঋণের হার ১ দশমিক ২০ শতাংশ। সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা; খেলাপি ঋণের হার ৫ শতাংশ। সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫৪১ কোটি টাকা; ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ৬ শতাংশ। সাউথ ইস্ট ব্যাংকের খেলাপি ঋণ তিন হাজার ২৪১ কোটি টাকা; ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ৯ শতাংশ। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা; খেলাপি ঋণের হার ৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। সিটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৬৫৩ কোটি ২০ লাখ টাকা; খেলাপি ঋণের হার ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। ট্রাস্ট ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দুই হাজার ৯১২ কোটি টাকা, খেলাপির হার ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৪৬ কোটি টাকা; খেলাপি ঋণের হার ৪ শতাংশ। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ তিন হাজার ৩১৩ কোটি টাকা; ব্যাংকটি খেলাপি ঋণের হার ৬ শতাংশ। উত্তরা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ২৫৮ কোটি টাকা; খেলাপির হার ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ।
বাংলাদেশে বিদেশি ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ স্থিতির পরিমাণ ৬৮ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান বাদে অন্যান্য ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ এক থেকে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ। এসব ব্যাংকের গড় খেলাপি ঋণের হার ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এর মধ্যে ব্যাংক আল ফালাহ-এর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩২ কোটি টাকা, সিটি ব্যাংকের এন-এর খেলাপি ঋণের এক কোটির টাকার নিচে, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৩ কোটি টাকা, হাবিব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩৫ কোটি টাকা, এইচএসবিসি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭৫১ কোটি টাকা, স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড চাটার্ড ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৬৩ কোটি টাকা, স্টেট ব্যাংক অব ১৪ কোটি টাকা এবং উরি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৮ কোটি টাকা।