দেশের চলমান বন্যায় আক্রান্ত ১১ জেলার মধ্যে সাত জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। জেলাগুলো হলো- চট্টগ্রাম, ফেনী, খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কক্সবাজার। এ ছাড়া মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। কুমিল্লা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। এখনো ৭ লাখ ৫ হাজার ৫২টি পরিবার পানিবন্দি। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫৩ লাখ ৬ হাজার ৪০২ জন।
১ সেপ্টেম্বর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দেশের চলমান বন্যা সম্পর্কে সর্বশেষ এসব তথ্য জানানো হয়। পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকেও এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, এখনো দেশের বন্যা আক্রান্ত জেলা ১১টি। সেগুলো হলো- ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর এবং কক্সবাজার। এখনো দেশের ৬৮টি উপজেলা বন্যায় প্লাবিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন বা পৌরসভা রয়েছে ৫০৪টি বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
বন্যায় এখন পর্যন্ত ৫৯ জনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়েছে, তাদের মধ্যে পুরুষ ৪১ জন, নারী ৬ জন এবং শিশু ১২ জন। এদের মধ্যে কুমিল্লায় মারা গেছেন ১৪ জন, ফেনীতে ২৩ জন, চট্টগ্রামে ৬ জন, খাগড়াছড়িতে ১ জন, নোয়াখালীতে ৯ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ জন, লক্ষ্মীপুরে ১ জন, কক্সবাজারে ৩ জন এবং মৌলভীবাজারে ১ জন। এছাড়া এ সময়ে মৌলভীবাজারে একজন নিখোঁজ রয়েছেন বলেও জানানো হয়েছে।
বন্যায় পানিবন্দি বা ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় প্রদানের জন্য মোট ৩ হাজার ৮৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মোট ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৪২ জন মানুষ এবং ৩৪ হাজার ৫১৮টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ১১টি জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য মোট ৫১০টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৪ কোটি ৫২ লাখ নগদ টাকা এবং ২০ হাজার ৬৫০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৩৫ লাখ টাকা শিশু খাদ্যের জন্য এবং ৩৫ লাখ টাকা গো-খাদ্যের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সংগৃহীত মোট ১ লাখ ৫৯ হাজার ৪০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, কাপড় ও পানি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের (ডিডিএম) মাধ্যমে বন্যাকবলিত এলাকায় পাঠানো হয়েছে। ডিডিএম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
বন্যায় আক্রান্ত জেলার প্রশাসকদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, মেডিকেল টিম ও অন্য স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সমন্বয় করে একসঙ্গে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় জানায়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে কন্ট্রোল রুম সার্বক্ষণিক খোলা রয়েছে। তথ্য ও সহযোগিতার জন্য ০২৫৫১০১১১৫ নম্বর চালু রয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য-সহায়তা দিতে ইচ্ছুক আগ্রহী ব্যক্তিরা প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলের অ্যাকাউন্টে অর্থ সহায়তা পাঠাতে পারেন। হিসাবের নাম : প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল, হিসাব নম্বর : ০১০৭৩৩৩০০৪০৯৩, ব্যাংকের নাম : সোনালী ব্যাংক করপোরেট শাখা, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। যারা ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে সহায়তা (চেক/পে-অর্ডার/ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে) দিতে চান, প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই সহায়তা গ্রহণ করবেন। যারা ত্রাণ তহবিলে সহায়তা (চেক/পে-অর্ডার/ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে) দিতে ইচ্ছুক তাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব অঞ্জন চন্দ্র পাল (মোবাইল- ০১৭১৮-০৬৬৭২৫) বা সিনিয়র সহকারী সচিব শরিফুল ইসলামের (মোবাইল- ০১৮১৯২৮১২০৮) সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হয়েছে।