২১ নভেম্বর ২০২৪, এখন সময় সন্ধ্যা ৬:৪২ মিনিট
শিরোনাম
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. কৃষি
  6. খুলনা
  7. খেলাধূলা
  8. গণমাধ্যম
  9. চট্রগ্রাম
  10. জাতীয়
  11. ঢাকা
  12. তথ্য-প্রযুক্তি
  13. ধর্মতত্ত্ব
  14. প্রকৃতি-পরিবেশ
  15. প্রবাস জীবন

‘অনিয়ম-দুর্নীতি দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বড় সংকট তৈরি করেছে’

প্রতিবেদক
স্টাফ রিপোর্টার
সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৪ ১২:৪৯ অপরাহ্ণ

দেশে দীর্ঘদিন ধরে চলা রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বড় সংকট তৈরি হয়েছে। এ সংকট থেকে দ্রুত উত্তরণ করা কঠিন হবে। এ পরিস্থিতি দেশের জ্বালানিনির্ভর শিল্পগুলোকে আরও দীর্ঘসময় ভোগাবে। রাজধানীর তেজগাঁও আইবএফবি কার্যালয়ে ৪ সেপ্টেম্বর ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) আয়োজিত ‘জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে সংস্কারের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন বক্তারা। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন। জ্বালানিবিষয়ক ম্যাগাজিন ‘এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার’ সম্পাদক মোল্লা এম আমজাদ হোসেনের সঞ্চালনায় সেমিনারে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম তামিম, বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশন (বিএসআরইএ সভাপতি) নুরুল আখতার, আইবিএফবির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, বর্তমান সভাপতি হুমায়ূন রশিদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট এমএস সিদ্দিকী, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, বাংলাদেশ সোলার রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নুরুল আক্তার প্রমুখ।
সেমিনারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম তামিম বলেন, ক্যাপাসিটি পেমেন্ট নিয়ে একটা ভূল ধারনা আছে, এক লক্ষ কোটি টাকার পেমেন্ট সেখানে কতটুক ব্যবহার হচ্ছে সেটা অনুসন্ধান করা দরকার। তিনি বলেন, আমাদের দেশে টার্গেট করে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে; ব্যবহার করছি ১৩ হাজার মেগাওয়াট। জ্বালানি বিদ্যুৎসহ সকল টেকনিক্যাল বিষয়গুলো পলিটিকাল ইস্যু বানানো হয়েছে। জিডিপি থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে তথ্য সন্ত্রাস হয়েছে। পলিটিক্যাল কারনে ২০ বছর ধরে ৯ শতাংশ গ্রোথ দেখানো হয়েছে। ব্যক্তিগত মুনফার কারনে দেশের জ্বালানিখাতের বিকাশে স্থানীয়ভাবে গ্যাস অনুসন্ধান করা হয়নি বলে উল্লেখ করেন ম তামিম। তিনি বলেন, বিগত সরকারের সময় সব খাতে ‘তথ্য সন্ত্রাস’ হয়েছে, জ্বালানিতে তা আরও বেশি হয়েছে। সরকার একটি উন্নয়নের টার্গেট নিয়েছে, কিন্তু কোনো পরিকল্পনা ছাড়া ওই অবকাঠামো করা হয়েছে। তথ্যে উন্নয়ন দেখানো হয়েছে, যা বাস্তবে উন্নয়নে কাজে আসেনি। তিনি আরও বলেন, সরকারের কিছু বিষয় জ্বালানি খাতকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। টার্গেট করা হয়েছে, ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চতকল্পে উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার, কিন্তু সেটা ধরে-বেঁধে করা হয়েছে। উৎপাদন অর্ধেক হলেও কাগজে-কলমে শতভাগ দেখানো হয়েছে। সরকার এ খাত থেকে সুবিধা নিয়েছে । সেজন্য এ খাতকে কুক্ষিগত করে রেখেছিল। কিন্তু উন্নত কোনো দেশের সরকার এ ধরনের খাত নিয়ন্ত্রণে রাখে না। তিনি বলেন, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ টেকনিক্যাল বিষয়, এটি রাজনৈতিকভাবে নির্ধারণ সম্ভব, যেটি আমাদের দেশে হয়েছে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের সরকারি প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতায় উন্নয়ন করতে পারেনি। তিনি বলেন, রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতি এ দুটো জিনিস এ খাতকে শেষ করে দিয়েছে। এটা থেকে বের হওয়া এখন কঠিন। তবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ধরে রাখতে হলে আমাদের এ জঞ্জাল থেকে বেরিয়ে আসতে হবেই। সেক্ষেত্রে নতুন সরকারের কাছে এটিই আমাদের বড় প্রত্যাশা।
সেমিনারে মুল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, জ্বালানির জন্য শিল্প উদ্যোক্তাদের যে সংকট, তার কারনেই জ্বালানি কনজাম্পশন বাড়েনি। আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাসের ৬০ শতাংশ ব্যবহার হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যার মধ্যে ১৮ শতাংশ যাচ্ছে ক্যাপটিভ পাওয়ার। আবাসিকে ব্যবহার হচ্ছে ১১ শতাংশ। দেশের ২৯ টি গ্যাস ফিল্ডের মধ্যে ২০ টি অপারেশনে আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এনার্জি সেক্টরে সবকিছু আমদানি নির্ভর হয়ে গেছে। আমাদের বর্তমান গ্যাস উৎপাদন ২২০২ এমএমসিএফডি। গত ৫ বছরে আমরা সমপরিমাণ গ্যাসের ব্যবহার বাড়িয়েছি অনেক ক্ষেত্রে। ফলে সরবরাহে সংকট তৈরি হয়েছে। আমাদের দেশের গ্যাস সঞ্চালন লাইনে ত্রুটির কারনে যে পরিমান সিস্টেম লস (৫ শতাংশ) তার ক্ষতি বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে ১৫ ডলার রেটে যে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে তা ভবিষ্যতে বাড়লে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমান বাড়বে। ৯ বছর পরে দেশের ন্যাচারাল গ্যাসের রিজার্ভ শুন্যের কোঠায় নামবে বলে উল্লেখ করেন প্রফেসর ইজাজ। জ্বালানি মন্ত্রনালয় দরকার আছে কী-না প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, আমেরিকা জ্বালানি মুল্য নির্ধারণে সরকারের কোন ভূমিকা নেই৷তিনি বলেন, আমাদের জ্ব্বালানি মন্ত্রনালয় মন্সটার হয়ে গেছে। আমেরিকায় জ্বালানি মন্ত্রী আছে কিন্তু সেখানে জ্বালানিসহ সকল নাগরিক সেবা প্রদানে আলাদা বডি আছে, বার্কের মত কমিশনগুলো।তিনি বলেন, দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের দিকে যাওয়ায় কথা বলে বিগত সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো অনেক অপ্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। সে সুযোগে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। ফলে সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থায় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, এদেশে গ্যাসের সিস্টেম লস ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। এটি অসম্ভব। এ লসের কথা বলে গ্যাস চুরি হচ্ছে। যেভাবে লসের কথা বলা হয়, বাস্তবে সেটা অর্ধেকও হবে না। এছাড়া টেকনিক্যাল লস রয়েছে। এসব কমিয়ে স্বাভাবিক পর্যায়ে আনা সম্ভব হলে এখনকার সংকট হয়তো খুব স্বাভাবিকভাবে উতরে যাওয়া যেতো।তাঁর ভাষ্য, সিস্টেম লসের বিষয়টি একটি শুভঙ্করের ফাঁকি। গ্যাসের সিস্টেম লসটা পুরোপুরি চুরি, বিগত সরকার নিজেও সেটা জানতো। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো- আমাদের জাতীয় সম্পদ এভাবে চুরি হয়ে গেছে, কেউ কিছু বলেনি। আর এখন তো আমরা অনেকটা সোনার দামে এলএনজি কিনে আনছি। জাতীয় স্বার্থে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে গ্যাসের এই চুরি বন্ধ করতে করা উচিত ছিল কিন্তু রাজনৈতিক মদতে সেটা আরও বেশি হয়েছে। এই চুরি হওয়া গ্যাস দিয়ে কমপক্ষে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে পরিকল্পনাহীনতার বড় বড় দৃষ্টান্ত রয়েছে। গৃহস্থালিতে গ্যাস বিতরণ বাড়িয়ে অনিয়ম হয়েছে। এ খাতে ১১ শতাংশ গ্যাসের বড় অংশ চুরি হচ্ছে। নতুন সরকারকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধের আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএর) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, জ্বালানি মন্ত্রনালয় দেশের সরকার প্রধানের দপ্তরে থাকা সত্ত্বেও আমরা দেখেছি গত একদশকে কিভাবে প্রতিযোগিতা ছাড়াই এনার্জি চুক্তি করা হয়েছে।তিনি বলেন, আমাদের দেশের কোম্পানি রাতারাতি সিংগাপুরের কোম্পানি হয়ে গেলো, দেশের রিজার্ভ যখন সংকটে আমরা ডলার পৌছে দিয়ে এসেছি সিংগাপুরে গিয়ে। সাধারন মানুষকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে।
সেমিনারে আইবিএফবি সভাপতি হুমায়ূন রশিদ বলেছেন, জ্বালানি সংকটে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ বিষয়টি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
টেক্সটাইলস মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ বলেন, দরপত্র ছাড়া একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র দেওয়া হয়েছে। কেউ একটা ছক্কা মারল, বিদ্যুৎকেন্দ্র দিয়ে দিল। কেউ সেঞ্চুরি করল, বিদ্যুৎকেন্দ্র দিয়ে দিল। সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে এত দামে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিল দিতে হতো না ভোক্তাকে।
বিটিএমএর পরিচালক রাজীব হায়দার বলেন, গত কয়েক বছরে শিল্পে গ্যাসের দাম বেড়েছে দুইশো শতাংশের বেশি। বর্তমানে ৩১.৫ টাকা রেটে গ্যাস কিনতে হচ্ছে আমাদের। কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়াই গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে। আমাদের সাথে বিদেশি ক্রেতাদের চুক্তি হয় কয়েক বছরের জন্য। আমাদের বিজনেসে ওভারহেড খরচ। তিনি বলেন, দেশের শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ পল্লী বিদ্যুতের অধীন। পল্লী বিদ্যুতে লোড শেডিং কমানো যাচ্ছে না। আসলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল লাইনে সেবা দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। তিনি বলেন, কেউ নিচ্ছে কেন্দ্র ভাড়া, কেউ করছে চুরি। আর দায় নিচ্ছে শিল্প। গাজীপুর, আশুলিয়া, সাভারের কারখানার সক্ষমতা ৪০ শতাংশ অব্যবহৃত। তাই দ্রুত সমাধান দরকার। গ্যাস দিতে না পারলে মূল্য যৌক্তিক করা হোক। প্রতি ইউনিট ৩১ টাকা দিয়ে শিল্প টিকবে না বলে মতপ্রকাশ করেন তিনি।

সর্বশেষ - আইন-আদালত