২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, এখন সময় ভোর ৫:৩৭ মিনিট
শিরোনাম
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. কৃষি
  6. খুলনা
  7. খেলাধূলা
  8. গণমাধ্যম
  9. চট্রগ্রাম
  10. জাতীয়
  11. ঢাকা
  12. তথ্য-প্রযুক্তি
  13. ধর্মতত্ত্ব
  14. প্রকৃতি-পরিবেশ
  15. প্রবাস জীবন

মহান বিজয়ের ৫৩ বছরের অর্জন

প্রতিবেদক
রুপম আক্তার
ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪ ৩:২২ অপরাহ্ণ

২০২৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর; বিজয়ের ৫৩ বছর পূর্ণ হলো। আমরা বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধিকার আদায়ের দৃঢ় মনোবল নিয়ে পশুশক্তিকে পরাজিত করে বাংলাদেশ নামক ভূখন্ডে স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করি। আমাদের মায়ের ভাষা বাংলা’র দাবিসহ বিভিন্ন ঘটনাবলীর আলোকে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া স্বাধীনতা যুদ্ধের দীর্ঘ ৯ মাসব্যাপী সংগ্রামী যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে আমাদের কাঙ্খিত বিজয়। এবারের মহান বিজয়ের ৫৩ বছর পূর্ণ হলো। সময়ের সঙ্গে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় দেশ এখন অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট সমৃদ্ধ। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় অর্জন শুধু ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ফসল নয়। এজন্য ৩০ লাখ মানুষের জীবন ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম বিসর্জন দিতে হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণপণ লড়াই করতে হয়েছে এবং সীমাহীন সম্পদ বিসর্জন দিতে হয়েছে। আর এই সশস্ত্র সংগ্রামের পেছনে রয়েছে পাকিস্তানিদের ২৪ বছরের শোষণ-নিপীড়ন ও তার আগে ১৯০ বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে নির্যাতিত-নিপীড়িত জনগণের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ। ইংরেজদের বর্বর শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট অখন্ড ভারতবাসীর (ভারতবর্ষের জনগণ) মনে দেশপ্রেম ও মুক্তির যে আকাঙ্খা জাগ্রত হয়েছিল তারই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও এই ভূখন্ডের মানুষ হয়ে উঠেছিল মুক্তিপিয়াসী, তাদের হৃদয়ে জ্বলে উঠেছিল দ্রোহের আগুন। নানা শাসন-শোষনের মধ্য দিয়ে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রটির সৃষ্টি হয়েছিল দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে; যার মধ্যে নিকৃষ্টতম উপাদান ছিল। এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চে স্বাধীনতার ডাকে বাঙালী জাতি জেগে উঠে। ২৫ মে মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, পিলখানা বিজিবি (তৎকালীন ইপিআর) সদর দপ্তর, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পুরনো ঢাকার সূত্রাপুর, শাঁখারিবাজার ও তাঁতিবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে নির্মম হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছিল। ২৬ শে মার্চ বাঙালিরা সারা দেশে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে; এরমধ্য দিয়ে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। পরবর্তীতে পাকিস্তানি বাহিনীর শোচনীয় পরাজয় ও ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে যার সফল সমাপ্তি ঘটে। তবে বঙ্গবন্ধুর ডাকে আপামর জনতা মুক্তিসংগ্রামে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ঝাঁপিয়ে পড়লেও এই দেশেরই এক শ্রেণীর কুলাঙ্গার পাকবাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। তারা হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগে হানাদার বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগী হয়ে উঠেছিল। এমনকি বিজয়ের ঊষালগ্নে একাত্তরের ১৩/১৪ ডিসেম্বর জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান বুদ্ধিজীবীদের নৃশংস হত্যাকান্ডের আগে এই কুলাঙ্গাররা তাদের তালিকা তৈরি করে পাকবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিল। এই কুলাঙ্গাররা বাসায় বাসায় গিয়ে বুদ্ধিজীবীদের ধরে আনতে হানাদার বাহিনীর সঙ্গেও গিয়েছিল। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিলÑ সাম্প্রদায়িকতা, শোষণ, বঞ্চনা, বৈষম্য, নিপীড়ন ও লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে শোষণ-বৈষ্যমহীন একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র কায়েম করা, সমতার বা সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। যেখানে থাকবে না কোনো ধর্মীয় বিভেদ ও অর্থনৈতিক বৈষম্য। মূলত ধর্মনিরপেক্ষতা ও সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তিই ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূল আকাঙ্খা। কিন্তু এতোকিছুর পরও শহীদদের স্বপ্ন তথা মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খা কী পূরণ হয়েছে? তাইতো দেশে সম্পদ বাড়লেও ধনী-গরিবের বৈষম্য বেড়েছে। শিক্ষা ও চিকিৎসার মান উন্নত হলেও এসব ক্ষেত্রে ব্যয় বেড়েছে জ্যামিতিক হারে। সম্পদ বাড়লেও এর মালিকানা চলে যাচ্ছে নির্দিষ্ট এক শ্রেণির মানুষের হাতে; যাদের বিপরীতে দরিদ্রের সংখ্যাও জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। তাই আধুনিক উচ্চতর শিক্ষা ও উন্নত চিকিৎসা সেবা সিংহভাগ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে বা গেছে। পাকিস্তান শাসনামলের শোষক ২২ পরিবারের স্থলে স্বাধীন বাংলাদেশে ২২ হাজার পরিবার জন্ম নিয়েছে; যারা এখন ১৮ কোটি মানুষের শোষকের ভূমিকায় নেমেছে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতাকারীদের আজও আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে চিহ্নিত করতে পারলাম না। যে কারণে তাদের অধিকাংশই নানা কৌশলে বিপুল পরিমাণ অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে, সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তার করেছে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তি ও তাদের উত্তরসুরীরা কখনও অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করতে পারে না। তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায়ই এক শ্রেণির সুবিধাবাদী মানুষ সমাজে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টি করছে। যতোদিন ধনী-দরিদ্রের মধ্যে অসম বৈষম্য থাকবে, ততোদিন সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে না। যতোদিন সাম্প্রদায়িকতার লাগাম টেনে ধরা যাবে না ততোদিন সমাজে ধর্মীয় বিভাজন ও অস্থিতিশীলতা থাকবে। তাই ৩০ লাখ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও দুই লাখ বীরাঙ্গণা মা-বোনসহ মুক্তিযুদ্ধের সকল বীর সেনাদের আকাঙ্খা স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য ধর্মীয় ও ভাষাগত সংখ্যালঘু নিপীড়নের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের ভূমিকা যেমন কঠোর হওয়া দরকার তেমনি সাধারণ জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি তথা শ্রেণিবৈষম্য ও শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনও আবশ্যক। তাহলেই এগিয়ে যাবে দেশ। অন্যদিকে স্বাধীনতার পর ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যায়িত করে যারা অপমান করেছিল সেই তাদের কণ্ঠেই এখন বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা। দারিদ্র্য আর দুর্যোগের বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের পথে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। স্বাধীনতার পর গত ৫৩ বছরে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকগুলোতে ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে। বিভিন্ন সূচকে পাকিস্তানের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়েছে বাংলাদেশ। আগামী দিনেও উন্নয়নের হাতছানি রয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণে জাতিসংঘের সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সাল থেকে বাংলাদেশ জাতিসংঘের তালিকায় আর স্বল্পোন্নত দেশ থাকবে না। তবে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের মতো গুরুত্বপূর্ণ সূচকে প্রত্যাশিত অবস্থানে যেতে পারেনি বাংলাদেশ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কৃষি, গার্মেন্টস এবং প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখে চলেছে। মোট বৈদেশিক আয়ের প্রায় ৯০ শতাংশ আসে গার্মেন্টস ও রেমিট্যান্স থেকে। আর মোট শ্রমশক্তির ৪০ শতাংশের বেশি কৃষিতে। শুধু অর্থনীতি নয়, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছে খাতগুলো। দারিদ্র্য বিমোচন, পুষ্টিহীনতা দূর, শিক্ষা, চিকিৎসা, অবকাঠামো উন্নয়ন, বাল্যবিয়ে রোধ, বিভিন্ন অপরাধ কমানো এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে খাতগুলোর অবদান সবচেয়ে বেশি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশকে আরও এগিয়ে নিতে সময়ের সঙ্গে মিল রেখে বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন জরুরি।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (ইফপ্রি), বিশ্বব্যাংকের বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- বাংলাদেশের চরম দারিদ্র্য নিরসনে কৃষি উৎপাদন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ইফপ্রির বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে আছে। বাংলাদেশ বিশ্বে ধান, পাট, কাঁঠাল, আম, পেঁয়ারা, আলু, সবজি ও মাছ উৎপাদনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ১১টি ইলিশ উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে প্রথম অবস্থানে। এছাড়া পাট রপ্তানিতে প্রথম ও উৎপাদনে দ্বিতীয়, কাঁঠালে দ্বিতীয়, চাল, মাছ ও সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, ছাগল উৎপাদনে চতুর্থ, আম ও আলুতে সপ্তম, পেয়ারায় অষ্টম এবং মৌসুমি ফলে দশম অবস্থানে বাংলাদেশ। আর কৃষিতে এ অর্জনের সবচেয়ে বড় কারণ হলো এখানে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। প্রযুক্তির হাত ধরে গত পোলট্রি, গবাদিপশু এবং মাছ চাষে বিপ্লব হয়েছে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প বিশ্বের বৃহত্তম শিল্পের মধ্যে অন্যতম। ১৯৮০ সালের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত পাট ও পাটজাত পণ্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এ সময় পাট রপ্তানি করে দেশটি অধিকাংশ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতো। বিশ্বে পলিপ্রোপাইলিন যুগ আসার পর পাট পণ্যের চাহিদা দ্রুত হ্রাস পায়, কিন্তু সেই শূন্যস্থান ক্রমান্বয়ে দখল করে নেয় তৈরি পোশাক খাত।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সব চাইতে বেশি অবদান এই তৈরি পোশাক খাতেরই। মোট প্রবৃদ্ধির ৬-৮ শতাংশই আসছে পোশাক খাত থেকে। বাংলাদেশের এই শিল্পকে বর্তমানে উন্নত বিশ্বসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো অনুকরণ করছে। স্বাধীনতার পরে যে শিল্প আমাদের অর্থনীতিকে দাঁড় করিয়েছে তার একমাত্র মাধ্যম কিন্তু এই পোশাক শিল্পই। বিশ্বের বুকে নিজেদের কঠোর শ্রম ও উৎপাদন দক্ষতা দেখাতে পারার প্রমাণ মেলে এই শিল্পের মাধ্যমে। ২০৩২ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের বড় ২৫টি অর্থনীতির দেশের একটি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর)।
স্বাধীন দেশে ১৯৭২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে প্রথম যে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছিল, সেখানে বাংলাদেশ নিয়ে হতাশার কথাই ছিল বেশি। বিশ্বব্যাংক বলেছিল, ‘সবচেয়ে ভালো পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ একটি নাজুক ও জটিল উন্নয়ন সমস্যার নাম। দেশের মানুষেরা গরিব। মাথাপিছু আয় ৫০ থেকে ৭০ ডলার, যা গত ২০ বছরেও বাড়েনি। একটি অতি জনবহুল দেশ (প্রতি বর্গমাইলে জনসংখ্যা প্রায় এক হাজার ৪০০) এবং জনসংখ্যা আরও বাড়ছে (বছরে ৩ শতাংশ হারে জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধি) এবং দেশটির মানুষ অধিকাংশই নিরক্ষর (সাক্ষরতার হার ২০ শতাংশের কম)।’
স্বাধীনতার ঠিক পাঁচ বছর পর ১৯৭৬ সালে নরওয়ের অর্থনীতিবিদ জাস্ট ফাল্যান্ড ও ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জে. আর. পারকিনসন ‘বাংলাদেশ : দ্য টেস্ট কেস অব ডেভেলপমেন্ট’ নামের একটি গবেষণামূলক বইয়ে লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, যদি এই দেশটি উন্নতি করতে পারে, তাহলে নিঃসন্দেহে বলা যায় পৃথিবীর যে কোনো দেশ উন্নতি করতে পারবে।’ সেসব সংশয় উড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে, তখন অনেক বিবেচনাতেই বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। এখন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন, গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য এবং বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিবিদ ও সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মুখে বাংলাদেশের উন্নয়নের জয়গান শোনা যায়। সমৃদ্ধির বহু নামে বাংলাদেশকে পরিচিতি দেওয়া হয় বিভিন্ন সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদনে। এসব অর্জনের উচ্চতার সবচেয়ে বড় পরিমাপের পরিষ্কার ধারণা উঠে এসেছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে। বিশ্বের নীতিনির্ধারণী এই আন্তর্জাতিক সংস্থার দৃষ্টিতে বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তকমা ঘুচিয়ে উন্নয়নশীল দেশ। বাংলাদেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনেও অভূতপূর্ব সাফল্য দেখা গেছে। স্বাধীনতার সময়ের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেশি খাদ্যশস্য এখন উৎপাদন করতে পারছে দেশ।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের বাংলাদেশের অর্থনীতির পালা বদলের চিত্র সহজেই বোঝা যায়, দেশটির অর্থনীতির প্রধান প্রধান সূচকে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ সব সূচকের প্রথম যে তথ্য পাওয়া যায় তাতে দেখা যায়, ১৯৭২-১৯৭৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ছিল ৬২৯ কোটি ডলার, মাথাপিছু আয় ছিল ৮৮ ডলার, রপ্তানি আয় ছিল মাত্র ৩৪ কোটি মার্কিন ডলার। সে সময় রিজার্ভ ছিল ১১০ কোটি টাকা, আমদানি ব্যয় ছিল ২২৬ কোটি ডলার, রাজস্ব আয় ছিল ২৮৫ কোটি টাকা আর দারিদ্র্যের হার ৭০ শতাংশ। ১৯৭৬ সালে রেমিট্যান্স ছিল ১ কোটি ৬৩ লাখ ডলার।
গত ৫৩ বছরে দেশের রপ্তানি আয় বহুগুণে বেড়ে মিলিয়ন ডলার থেকে এসেছে বিলিয়ন ডলারের ঘরে। ২০২১-২২ খ্রিষ্টাব্দে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলার। জিডিপির আকার ৩৪ লাখ ৫৬ হাজার ৪০ কোটি টাকা। মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৫৪ ডলার। রিজার্ভ ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। আমদানি ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬৮ কেটি ডলারে, আর রাজস্ব আয় ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। রেমিট্যান্স বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ বিলিয়ন ডলারে, যা দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে বড় অবদান রেখে চলেছে। গত ৫৩ বছরে দারিদ্র্যের হার ৭০ শতাংশ থেকে কমে ২০.৫ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, গত ৫০ বছরে দেশ অনেক এগিয়েছে। যে পাকিস্তানকে আমরা পরাজিত করেছি সেই পাকিস্তান এখন অর্থনীতির প্রায় সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছে। তবে দেশে ৭৫ পরবর্তী অর্থনীতির যত পরিবর্তন ঘটেছে তার ৭৩ শতাংশ হয়েছে গত ১৩ বছরে। এরই মধ্যে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ। এটি বাংলাদেশের সক্ষমতার একটিবড় উদাহরণ সৃষ্টি করেছে বিশ্বের বুকে। তবে মহামারী করোনা’র কারণে উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রা অনেকটা থমকে গেছে; তবে করোনাকালে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বড় ভূমিকা রেখেছে আমাদের কৃষি। বলতে গেলে, মহামারী করোনা’র চাপ সামলে এগিয়ে চলছে দেশ। সম্প্রতি ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হয়। দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বৈরাচারি মনোভাব ও দুর্নীতি এই পতনের অন্যতম কারণ বলে দেশের অভিজ্ঞমহল মনে করেন। এখন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনা করছে। দেশে চলছে সংস্কার কার্যক্রম। বিগত সরকারের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। এরই মধ্যে আমাদের বিজয়ের ৫৩ বছর উৎযাপন করছি। সার্বিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে উন্নত দেশের কাতারে বাংলাদেশ এগিয়ে যাক; এটিই আমাদের প্রত্যাশা

সর্বশেষ - আইন-আদালত

আপনার জন্য নির্বাচিত

দিল্লিতে শেখ হাসিনা, যাবেন লন্ডনে : ইন্ডিয়া টুডে

সব পর্যায়ে সংস্কার কর্মসূচি নিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে : প্রধান উপদেষ্টা

মহাখালীতে উড়াল সড়ক থেকে রড পড়ে শিশু নিহত

জামায়াত-শিবিরের কোনো সংগঠন বা ব্যক্তির বক্তব্য-বিবৃতি প্রকাশ করা যাবে না

সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় পুঁজিবাজারে চলছে লেনদেন

জাতিসংঘের পরবর্তী প্রস্তাবে ভেটো দেবে না চীন

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির আট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরখাস্ত

পোশাক শিল্পে অশনি সংকেত : আশুলিয়া-গাজীপুরে পৌনে দুইশ কারখানা বন্ধ

ইনার হুইল ক্লাব অব ঢাকা নাইটিঙ্গেল এর বন্ধু দিবস উদযাপন

কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত : প্রধান উপদেষ্টা