দেশব্যাপী ব্যাপক উৎসাহ–উদ্দীপনা আর উৎসবের মধ্য দিয়ে বাংলা নতুন বছর ১৪৩২ বরণ করে নিলেন দেশের মানুষ। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে দেশের মানুষ সর্বজনীন এ উৎসবে অংশ নিয়ে বর্ষবরণের আনন্দে মেতে ওঠেন। ছায়ানটের ৭২ ফুট লম্বা ও ৩০ ফুট প্রস্থের মঞ্চে একক ও সমবেত কণ্ঠে পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাংলা নববর্ষ বরণের আনুষ্ঠানিকতা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর এবার নতুন পরিবেশে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপিত হয়েছে। ফলে এবারের উৎসবের আয়োজনে কিছুটা ব্যতিক্রমও ছিল।
ঢাকায় রমনার বটমূল থেকে চারুকলা-শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয় বৈশাখের অনুষ্ঠান। সংবাদপত্রগুলোতে পয়লা বৈশাখের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেছে।
বাঙালির প্রাণের উৎসব ছড়িয়েছে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত। উৎসবের রঙে নিজেদের রাঙিয়েছেন অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষও। শোভাযাত্রা, লোকজ সংস্কৃতি, নাচ–গান–আবৃত্তি সবই ছিল এসব আয়োজনে। দেশের নানা স্থানে বসে বৈশাখের ঐতিহ্যবাহী মেলা। কোথাও কোথাও কয়েক দিন পর্যন্ত চলবে এসব মেলা।
প্রতিবারের মতো এবারও রাজধানীর বর্ষবরণের অন্যতম বর্ণাঢ্য আয়োজন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শোভাযাত্রা। তবে এবার ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র বদলে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ হয়েছে। নেচেগেয়ে হাজারো মানুষ অংশ নেন ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’য়। পয়লা বৈশাখের এই বর্ণিল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ছিল ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’।
শোভাযাত্রায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি যুক্ত হন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। শোভাযাত্রায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের অংশগ্রহণ ছিল। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ফিলিস্তিনে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বানও ছিল শোভাযাত্রায়। শোভাযাত্রার অন্যতম আকর্ষণ ছিল ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’। এ ছাড়া ছিল বিভিন্ন মোটিফ। ছিল বাংলার ঐতিহ্যবাহী মুখোশ। শোভাযাত্রায় প্রতীকীভাবে বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার আয়োজনে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’য় অংশ নিয়ে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, এবারের নববর্ষের শোভাযাত্রা রাজনৈতিক নয়। এবার শুধু ফ্যাসিস্টের মুখাবয়ব ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ, ফ্যাসিস্ট কোনো রাজনীতির অংশ নয়। ফ্যাসিস্ট সবচেয়ে বড় অশুভ শক্তি।
রমনার বটমূলে বর্ষবরণের ঐতিহ্যবাহী অন্যতম প্রধান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ছায়ানট। আলোর পথযাত্রার আহ্বান জানিয়ে সুরে ও বাণীতে বাংলা ১৪৩২ সনকে বরণ করে নেয় ছায়ানট। ছায়ানটের এবারের আয়োজনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। দেশ, মানুষ, প্রকৃতিকে ভালোবাসার গান ও পাঠ দিয়ে সাজানো হয়েছিল ছায়ানটের অনুষ্ঠান।
জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আয়োজন করা হয় কনসার্ট। বর্ষবরণ উপলক্ষে এই কনসার্ট ও ড্রোন শোর আয়োজন করে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।