সুফিবাদের আলোকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি ও বিশেষ সম্মাননা পাওয়ায় মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) চেয়ারম্যান ডক্টর সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারীকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। ১৭ জুন ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ শনিবার রাজধানীর রমনায় বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে তাকে এই সংবর্ধনা প্রদান করে দেশের একটি নাগরিক সংবর্ধনা কমিটি।
গত ১৯ মে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ ‘দ্যা ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি অব সুফি স্কলারস অব গ্রেট ব্রিটেন’, ‘শেখ মা আল আইনিন ফাউন্ডেশন অব সায়েন্স অ্যান্ড হেরিটেজ’ এবং ‘মরক্কোর ইউনিভার্সিটি অব মোহাম্মদ আল আউয়াল’ এর যৌথ আয়োজনে ১০ম ইন্টারন্যাশনাল সুফিজম কনফারেন্স মরক্কোতে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের ইমাম সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারীকে ‘দ্যা ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি অব সুফি স্কলারস অব গ্রেট ব্রিটেন’ সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে ‘শেখ মা আল আইনাইন ফাউন্ডেশন ফর সায়েন্স অ্যান্ড হেরিটেজ’ মিশরের অর্গানাইজেশন ফর টলারেন্স অ্যান্ড পিস এবং যুক্তরাজ্যের ‘দ্যা একাডেমি অব সুফি স্কলারস’ তাঁকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেন। এসব ডিগ্রি ও সম্মাননা পাওয়ায় তাকে নাগরিক সংবর্ধনা দেয় দেশের একটি নাগরিক কমিটি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, কৃষক শ্রমিক জনতা পার্টি, ন্যাপ ভাসানী, ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামিক গণতান্ত্রিক লীগ, গণফোরাম, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বিডিপি, বাংলাদেশ জনদল, বাংলাদেশ জনমত পার্টি, আন্জুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভাণ্ডারিয়া, আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি এই সংবর্ধনা প্রদান করে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংবর্ধনা কমিটির আহ্বায়ক ও গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর আক্তারুজ্জামান। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন নাগরিক সংবর্ধনা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আতা উল্লাহ খান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন নাগরিক সংবর্ধনা কমিটির সমন্বয়ক মোঃ ইব্রাহিম মিয়া।
নাগরিক সংবর্ধনা কমিটি সদস্য সচিব ও প্রফেসর ডক্টর শহীদ মনজুরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাবেক মন্ত্রী, জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব ও ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতা শেখ শহিদুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী, ধর্ম ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও চেয়ারম্যান (বিএলডিপি) এম. নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য ও ইসলামিক গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন এম এ আউয়াল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের প্রফেসর ডক্টর জিন বোধি ভিক্ষু, বাংলাদেশ ক্রিস্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি এলবার্ট পি কস্টা, মহানাম সম্প্রদায় বাংলাদেশের সভাপতি শ্রীমৎ কান্তিবন্ধু ব্রহ্মচারী মহারাজ, নির্বাহী সভাপতি, গণ ফোরামারের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাবেক উপমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক সিদ্দিকী, বিএসএমএনইউ এর সাবেক উপ উপাচার্য ও গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রফেসর ডাক্তার শহীদুল্লাহ সিকদার, আশেকানে আউলিয়া ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ্সূফী মাওলানা আলম নুরী সুরেশ্বরী, মইনীয়া যুব ফোরামের সভাপতি শাহ্জাদা সৈয়দ মেহবুব-এ-মইনুদ্দীন আল হাসানী আল মাইজভাণ্ডারী, মইনীয়া যুব ফোরামের কার্যকরী সভাপতি শাহ্জাদা সৈয়দ মাশুক-এ-মইনুদ্দীন আল হাসানী আল মাইজভাণ্ডারী, লেখক ও গবেষক প্রফেসর ড. মাসুম চৌধুরী, গ্লোবাল পিস অ্যাম্বাবেসেডর ও, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ড. মোঃ শাহজাহান, বিশ্ব ব্যাংকের কন্সাল্টেন্ট কাজী নাসরিন সিদ্দিকা, ইন্টারন্যাশনাল নন কমিউনাল সোসাইটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সেভ এর নির্বাহী পরিচালক বনি রড্রিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অবঃ) জীবন কানাই দাস, সাবেক সচিব বিকর্ণ কুমার ঘোষ, আন্জুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভান্ডারীয়ার সাবেক সভাপতি খলিফা মুহাম্মদ ইকবাল রিসালপুরী, কৃষক শ্রমিক পার্টি চেয়ারম্যান ফারাহ নাজ হক চৌধুরী, সাবেক সচিব কাসেম মাসুদ, ন্যাপ ভাসানীর সভাপতি মোস্তাক ভাসানী, মাওলানা মুফতী খাজা বাকি বিল্লাহ আল আযহারী, যুগ্ম মহাসচিব, বাংলদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)।
নাগরিক সংবর্ধনা গ্রহণ শেষে ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী বলেন, আমি মানুষের মাঝে ইসলাম ধর্মের মূল কথা শান্তি, উদারতা, মানবিকতা প্রতিষ্ঠা ও ত্বরিকায়ে মাইজভাণ্ডারিয়ার খেদমত করে যেতে চাই। তিনি বলেন, সব ধর্মের মূল কথাই হলো- মানব প্রেম ও মানবতা।
ডক্টর সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় ও জঙ্গি, উগ্রবাদ প্রতিরোধে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ আদর্শিক সংগ্রাম করে যেতে হবে। তিনি আরো বলেন, দেশ ও সমাজকে শান্তির নীড়ে পরিণত ও সহাবস্থান নিশ্চিত করতে সুফিবাদের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, একজন প্রকৃত সুফি লোভ হিংসা পরশ্রীকাতরতা ও দুর্নীতির উর্ধ্বে থাকে। দুনিয়ার কোনো লোভই একজন প্রকৃত সুফিকে আকৃষ্ট করতে পারে না। সর্বক্ষেত্রে সুফিবাদ প্রতিষ্ঠিত হলে মানুষে মানুষে প্রেম ভালোবাসা, মহানুভবতার মেলবন্ধন রচিত হবে। সম্প্রীতি ও শান্তির পথে আমাদের অগ্রযাত্রা আরো বেগবান করতে সর্বক্ষেত্রে সুফিবাদের চর্চা, গবেষণা ও পাঠ্যসুচিতে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি ।
অনুষ্ঠানে নাগরিক গণসংবর্ধনা কমিটির আহ্বায়ক ও গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, একজন বিশিষ্ট সুফি ও আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে বিশ্বের নানা দেশে রয়েছে হযরত শাহ্সুফি সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী মাইজভাণ্ডারীর সুখ্যাতি। শান্তি ও সহাবস্থানপূর্ণ মানবিক বিশ্ব নির্মাণের বাণী নিয়ে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে তিনি কর্মরত বিশ্ব নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁরা তাঁকে নানাভাবে সম্মানিত করছেন। আজকে তাঁর এই নাগরিক গণসংবর্ধনায় সভাপতিত্ব করতে পেরে আমি গর্বিত। তিনি গতানুগতিক ইসলামের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে মানবিক ও উদার নৈতিক চৈতন্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে যেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন, তাঁর জন্য আমি এই কীর্তিমান ব্যক্তিত্বের প্রতি কৃতজ্ঞ ও সাধুবাদ জানাই। প্রকারন্তরে তিনি বাংলাদেশকে সম্প্রীতির রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। তাঁর এই মহৎ কর্মের জন্য নাগরিকদের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর আক্তারুজ্জামান বলেন, হযরত সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী মাইজভাণ্ডারী একজন আধ্যাত্মিক সাধক মরমীবাদী মানুষ, সুফি গবেষক ও লেখক। তিনি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও আদর্শ ধারণ করেন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধর্মানুরাগী জীবন ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতি তিনি গভীর শ্রদ্ধাশীল। ‘দ্যা ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি অব সুফি স্কলারস অব গ্রেট ব্রিটেন’ কর্তৃক সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করায় আমি তাঁকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি মনে করি, আজকে সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারীকে উক্ত সংস্থা যেই সম্মান দেখিয়েছে প্রকারন্তরে এটা আমাদের সকলের জন্যই। আমি নাগরিকদের পক্ষ থেকে সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারীকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে প্রফেসর ড. শহীদ মনজু বলেন, এদেশ ও বিশ্বকে বৈষম্যহীন মানবিক রাষ্ট্র বিনির্মানে সম্প্রীতির আলোকে আলোচিত করে আত্ম মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের সুফি চেতনা ভাবনার কাছেই যেতে হবে। খুঁজতে হবে হৃদয়, খুঁজতে হবে মানুষ, খুঁজতে হবে মানবিক দর্শন। গড়ে তুলতে হবে মানবিক মেলবন্ধন। তিনি বলেন, শাহ্সুফি সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী ওয়াল হোসাইনী আল মাইজভাণ্ডারী হুজুরের জীবন বোধ, আধ্যাত্মিক মানবিক দর্শন যে যেভাবে, যতভাবে উপলব্ধি করেছে তাই সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার তাগিদই এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মূল প্রতিপাদ্য।
নাগরিক গণসংবর্ধনায় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার বিশিষ্ট নাগরিকেরা ফুলে ফুলে সিক্ত করেন ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারীকে। অনুষ্ঠানে সবাইকে উদ্বেলিত করে তোলে শেষের সুফি কনর্সাট।