পাকিস্তানের সংসদ আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে সংসদ ভেঙে দেওয়ার নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে যাচ্ছে। দেশটির নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, দেশটিতে জনশুমারির ভিত্তিতে নির্বাচনী আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেছেন, জনশুমারি শেষ হলেই নির্বাচন হবে। এ জন্য চার মাস সময় দরকার হবে। ফলে নির্বাচনটি আগামী বছর পর্যন্ত বিলম্বিত হতে পারে। সংসদ ভেঙে দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের করা আবেদনে সই করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। এর মধ্যে দিয়ে পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩ দিন আগেই দেশটির নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদ ভেঙে গেল। একইসঙ্গে পাকিস্তানের ফেডারেল কেবিনেটের কার্যকারিতাও শেষ হয়েছে। ১০ আগস্ট ২০২৩ বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভবন জানায়, প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি দেশটির সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর করা আবেদনটি অনুমোদন দিয়েছেন। দেশটির সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী সুপারিশ করার পর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রেসিডেন্ট জাতীয় পরিষদ ভেঙে দিতে ব্যর্থ হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভেঙে যাবে। এর আগে ৯ আগস্ট ২০২৩ বুধবার রাতে শেহবাজ শরীফ প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির কাছে সংসদ ভেঙে দেওয়ার আবেদন করে চিঠি পাঠান। এরপর রাতেই প্রেসিডেন্ট ওই আবেদনে স্বাক্ষর করেন বলে জানিয়েছে পাকিস্তানি গণমাধ্যম।
পাকিস্তানি গণমাধ্যম জানায়, সংসদ ভেঙে দিতে করা আবেদনের সারসংক্ষেপটি পার্লামেন্ট বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হবে। এর মধ্যে দিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নতুন তত্ত্বাবধায়ক গঠনের পথে এগিয়ে যাবেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একজনের নাম চূড়ান্ত করতে সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ এবং জাতীয় পরিষদের বিরোধী দলীয় নেতার কাছে ৩ দিন সময় রয়েছে। এর মধ্যে তারা একমত হতে ব্যর্থ হলে বিষয়টি জাতীয় পরিষদের স্পিকার দ্বারা গঠিত একটি কমিটির কাছে পাঠানো হবে, যা ৩ দিনের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রীর জন্য একটি নাম চূড়ান্ত করবে।তবে কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে মনোনীতদের নাম পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানো হয়। এরপর কমিশনের কাছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ২ দিন সময় রয়েছে।
আগামী ১২ আগস্ট ২০২৩ পাকিস্তানের বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, জাতীয় পরিষদের মেয়াদ পূর্ণ হলে ৬০ দিনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। তবে মেয়াদ পূরণের আগেই জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়া হলে পাকিস্তানের সংবিধান অনুসারে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা আছে। তবে গত সপ্তাহে কাউন্সিল অব কমন ইন্টারেস্টের এক বৈঠকে ২০২৩ সালের আদমশুমারির অনুমোদন দেওয়া হয়। এর ফলে পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে যেতে পারে। জিও নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর নভেম্বরে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে সামনের বছর অনুষ্ঠিত হতে পারে। এর আগে ৮ আগস্ট মঙ্গলবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন, নির্ধারিত সময়ের ৩ দিন আগেই জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়া হবে। এরপর সংবিধানিক বাধ্যবাধকতা মেনে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
দেশটিতে সম্প্রতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই সঙ্গে আদালতের তার কারাদণ্ড হওয়ায় তিনি পাঁচ বছরের জন্য রাজনীতিতে অযোগ্য হয়ে গেছেন। তিনি প্রকাশ্যে দেশটির প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলেন সামরিক বাহিনী আসন্ন নির্বাচন নিয়ে প্রচণ্ড ভয় পাচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভী সংসদ ভেঙে দেয়ার আদেশ দেয়ার পর একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেবে। বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ও তার সরকারের হাতে নতুন অন্তর্বর্তী নেতার নাম চূড়ান্ত করার জন্য ৩ দিন সময় আছে। যদিও দেশটিতে এমন আলোচনা আছে যে নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার মূল কারণ হলো ইমরান খানের জনপ্রিয়তার কারণে ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) এর জোট নির্বাচনের জয়ের বিষয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী নয়। পাশাপাশি আইএমএফ এর সহযোগিতা সত্ত্বেও ব্যাপক মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়েছে সেখানে। এক সময়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও ইমরান খান এমনভাবে সেনাবাহিনীর বিরোধে জড়িয়েছেন, যা তার আগে কোনো রাজনীতিক করেননি। অনেকেই মনে করেন যে গ্রেপ্তার হওয়ার কারণে ইমরান খানের জনপ্রিয়তা আরো বাড়বে। এর আগে গত মে মাসে ইমরানের গ্রেপ্তার নিয়ে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছিলো। তাতে মারা গিয়েছিল অন্তত আটজন এবং সামরিক কিছু স্থাপনাতেও নজিরবিহীন হামলা হয়েছিল। ৭০ বছর বয়সী এই রাজনীতিক দাবি করেছিলেন যে সামরিক বাহিনীর লক্ষ্য হলো- ‘তাকে বন্দী রেখে তার দলকে ধ্বংস করে দেয়া।’ পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে নিয়মিতই বিরোধী রাজনীতিক, মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিকদের আটকের অভিযোগ ওঠে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দৃষ্টিতে প্রতি মাসেই বাড়ছে জোরপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনা। সূত্র: ডন ও জিও নিউজ টিভি