ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে দুইদিন ব্যাপী শুরু হওয়া‘জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন’ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে। এর সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দিল্লির সম্মেলন সমাপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জি-২০ জোটে ভারতের প্রেসিডেন্সির মেয়াদও শেষ হয়েছে। ফলে জোটটির নতুন প্রেসিডেন্সির দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রাজিলের কাছে হস্তান্তর করেছে ভারত।
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ রোববার জি-২০ সম্মেলন শেষ হওয়ার পর ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দি সিলভার হাতে প্রেসিডেন্সি হস্তান্তরের প্রতীক ‘হাতুড়ি’ তুলে দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। চলতি বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জি-২০ গ্রুপের সভাপতির দায়িত্ব পালন শুরু করবে ব্রাজিল।
অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন এবং উদীয়মান অর্থনীতির আগ্রহের বিষয়গুলোর কণ্ঠস্বর হতে ভারতের প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ জানান ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট।
লুলা বলেন, রাজনৈতিক শক্তি ফিরে পেতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী ও অস্থায়ী সদস্য হিসেবে নতুন উন্নয়নশীল দেশগুলোর অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন। এ সময় তিনি বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ-এর মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে উদীয়মান দেশগুলোর বৃহত্তর প্রতিনিধিত্বও দাবি করেন।
এদিকে, সম্মেলন শেষে সমাপনী বক্তব্য ফের একবার বিশ্ব শান্তির বার্তা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সব রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে আগামী নভেম্বর মাসে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করার পরামর্শও দেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, এবারের জি-২০ সম্মেলন এখানেই শেষ হল। আশা করি ওয়ান আর্থ, ওয়ান ফ্যামিলি, ওয়ান ফিউচারের ভাবনা আপনাদের ভাল লেগেছে। সবাইকে ধন্যবাদ।
এদিকে বিশ্বনেতারা মতৈক্যের ভিত্তিতে জি-২০ শীর্ষবৈঠকের ঘোষণাপত্র জারি করেছেন। বিভিন্ন দেশের চেষ্টায় এটা সফল হয়েছে।
জি-২০ বৈঠকে সবচেয়ে বড় প্রশ্নটা ছিল, এখানে কোনো ঘোষণাপত্র জারি করা যাবে কিনা? কারণটা হলো, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মতবিরোধ। পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা করার পক্ষে ছিল। কিন্তু রাশিয়া, চীন তা মানতে রাজি ছিল না। ভারতও এই যুদ্ধে কারো পক্ষই নেয়নি। ফলে তারা এমন একটা অবস্থান নিতে চাইছিল, যাতে সর্বসম্মতভাবে বিষয়টি নিয়ে এগোনো যায়। আর এটাই ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী ও কূনীতিকদের পরীক্ষা ও চ্যালেঞ্জ। শেষপর্যন্ত সেই পরীক্ষায় তারা সফল হয়েছেন। সকলের সম্মতিতে ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে দিল্লি ঘোষণাপত্রে মোট সাতটি পয়েন্ট আছে। দিল্লির ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, বিশ্বে যুদ্ধ ও অন্য সংঘাতের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। মানুষের কষ্ট বাড়ছে বলে আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আমরা বালিতে যে আলোচনা করেছিলাম, তা মনে করিয়ে দিয়ে আবার বলতে চাই, আমরা আমাদের জাতীয় অবস্থানের কথা বলেছি এবং জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ও নিরাপত্তা পরিষদে যে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল তার কথা বলেছি। সেখানে বলা হয়েছে, কোনো দেশ যেন জোর করে অন্য দেশের জমি অধিকারের এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা খর্ব করার চেষ্টা না করে। পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি একেবারেই মানা যায় না।
ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘জি-২০ হলো আন্তর্জাতিক আর্থিক সহযোগিতার মঞ্চ। এটা কোনো ভূ-রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের মঞ্চ নয়। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, এই বিষয়গুলোর একটা বড় প্রভাব বিশ্বের অর্থনীতির ওপর পড়ে।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনের জন্য বৃহত্তর বৈশ্বিক সমর্থনের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি যুক্তি দিয়েছেন যে, এই সংঘাতের কারণে উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এদিকে সম্মেলন শেষ হওয়ার আগেই দিল্লি ছেড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো শেষে ভিয়েতনামের উদ্দেশে দিল্লি ছাড়েন তিনি।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার কাছ থেকে জি-২০ এর সভাপতিত্ব গ্রহণ করে ভারত। এর আগে জি-২০ সম্মেলনের প্রতিনিধিত্ব করেছে ইন্দোনেশিয়া।
সূত্র: এনডিটিভি