জঙ্গি, উগ্র, হঠকারীতার বিরুদ্ধে জনগণকে সজাগ ও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতা বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল চক্র এক জোট হয়েছে। দেশ ও জনগণের স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকলকে এক হয়ে এই প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীকে রুখে দিতে হবে।
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ শনিবার চট্টগ্রাম ফটিকছড়ি নাজিরহাট জংকার মোড়ে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও বাজার সিন্ডিকেটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, সংবিধান অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমুলক নির্বাচনের দাবিতে ফটিকছড়ি উপজেলা বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) উদ্যোগে জনসভায় লিবারেল ইসলামিক জোট ও বিএসপি চেয়ারম্যান শাহজাদা ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ড-ারী প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, দুর্নীতি নেই এমন কোনো সেক্টর নেই। দুর্নীতিবাজরা দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পাচার করে। এর খেসারত দিতে হয় এদেশের শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি জনতাকে। দুর্নীতিবাজদের কারণেই আজকে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী দিন দিন ঊর্ধ্ব গতি ও বেকারত্বের হার বাড়ছে। তিনি বলেন, অবিলম্বে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে তাদের নাম ঠিকানা জনগণকে জানাতে হবে। এই দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় না আনলে এরা দেশকে গিলে খাবে।
বিএসপি ও লিবারেল ইসলামিক জোটের চেয়ারম্যান বলেন, আমি এই ফটিকছড়িরই সন্তান, দুর্যোগ মহামারীসহ সবসময় ফটিকছড়িবাসীর পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। আগামীতেও ফটিকছড়িবাসীর যেকোনো প্রয়োজনে আমি ফটিকছড়িবাসীর পাশে থাকতে চাই। ফটিকছড়ি আমার এলাকা, বর্তমান সরকারের আমলে সারাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও ফটিকছড়িতে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি।
নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলা ভূমি ফটিকছড়িকে পরিকল্পিতভাবে পর্যটন জোন হিসেবে গড়ে তোলা, কৃষকদের কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাত করণে কোল্ড স্টোরেজ, গবাদী পশু পাখির চিকিৎসায় ভেটেরিনারী কলেজ গড়ে তোলা জরুরি ছিল। দুঃখজনক হলেও সত্য! ফটিকছড়িবাসীর কল্যাণে কেউই এ উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ফটিকছড়ির জনগণকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে হালদা নদী, সর্ত্বা খাল, দুড়–ম খালে বেড়ি বাঁধ নির্মাণের আংশিক উদ্যোগ নেয়া হলেও পূর্ণাঙ্গ ও পরিকল্পিত উদ্যোগ নেয়া হয়নি। অবকাঠামোগত উন্নয়নে ফটিকছড়ি দেশের অন্যান্য স্থান থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। ভারতের ত্রিপুরার সাথে আমদানী রপ্তানী সুবিধার জন্য নাজিরহাট থেকে রামগড় স্থলবন্দর পর্যন্ত মাত্র চল্লিশ কিলোমিটার রেল লাইন নির্মাণ করলেই চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে সংযোগ স্থাপন করা যেতো। কিন্তু এই উদ্যোগগুলো কেউই নেয়নি। তিনি বলেন, ফটিকছড়িতে ১৭টি চা বাগান রয়েছে। এই চা শিল্প দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধশালী করছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় চা শিল্পে জড়িত শ্রমিকেরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। ফটিকছড়িবাসী আমাকে সুযোগ দিলে চা শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিকদেরসহ নিম্ন আয়ের সকলের জীবন মান উন্নয়ন তথা ফটিকছড়ির উন্নয়নে সকলকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব ইনশাআল্লাহ।
নির্বাচন সম্পর্কে সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী বলেন, সকল রাজনৈতিক দলের আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকার বিতর্কের স্থায়ী অবসান ঘটিয়ে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হবে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে অনির্বাচিত সরকার জনগণ আর দেখতে চায় না। যেভাবেই নির্বাচন হোক তা সংবিধানের আলোকেই হতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক থাকলে আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) নেতৃত্বাধীন লিবারেল ইসলামিক জোট অংশগ্রহণ করবে। ইনশাআল্লাহ!
লিবারেল ইসলামিক জোট চেয়ারম্যান শাহজাদা ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী, দেশের মসজিদের ইমাম, খতিব, মোয়াজ্জ্বিন, মন্দিরের পুরোহিত, সেবক, গীর্জার পাদ্রিদের সরকারি রেভিনিউর অন্তর্ভূক্ত করার দাবি জানান।
জনসভায় ফটিছড়ি উপজেলা বিএসপি আহ্বায়ক এইচএম মঞ্জুরুল আনোয়ার চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন লিবারেল ইসলামিক জোটের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী, লিবারেল ইসলামিক জোটের কো-চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ জনদল (বিজেডি)-এর চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান জয় চৌধুরী। বিশেষ অতিথি মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় স্বাধীনতা বিরোধী উগ্র জঙ্গীগোষ্ঠী আবারো দেশি-বিদেশী মহলের সহায়তায় দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি হয়ে ওঠছে। এই মুহুর্তে জনগণকে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিকল্প নেই। তিনি বলেন, স্বাধীনতা উত্তর এ পর্যন্ত যেসব রাজনৈতিক দলকে স্বাধীনতা বিরুধীতা ও উগ্র কর্মকান্ডের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই নিষিদ্ধ ঘোষিত সব কটি সংগঠনের তালিকা ও তাদের নেতাদের ছবিসহ নাম-ঠিকানা এবং অতীত কর্মকান্ড সম্পর্কে অবিলম্বে দেশবাসীকে অবগত করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বিচার প্রার্থীদের বিচার পাওয়ার অধিকার যেমন রয়েছে। তেমনি কেউ নির্দোষ হলে তার ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। যদি কারো বিরুদ্ধে মামলা হয় তাহলে তার আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা উচিত। কিন্তু দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর বিদেশিদের নগ্ন হস্তক্ষেপ কেনোভাবেই কাম্য নয়। ড. ইউনুসকে নিয়ে বিদেশীদের বিবৃতি ও আমাদের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
সমাবেশে বিএসপি’র বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ঢালী কামরুজ্জামান হারুনের সঞ্চালনায় অতিথি ও আলোচক ছিলেন বিএসপি’র কো-চেয়ারম্যান অ্যাড. কাজী মহসীন চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ মনির হোসেন, মাওলানা রুহুল আমিন ভূঁইয়া চাঁদপুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি এস.এম সাহাব উদ্দিন, অতিরিক্ত মহাসচিব মুফতি বাকী বিল্লাহ আল-আযহারী, কৃষক শ্রমিক পার্টি (কেএসপি) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও লিবারেল ইসলামিক জোটের জন সংযোগ বিষয়ক সম্পাদক মোঃ সোহেল সামাদ বাচ্ছু, জাতীয় স্থায়ী পরিষদ সদস্য ও বিএসপি এবং লিবারেল ইসলামিক জোটের দপ্তর সম্পাদক মোঃ ইব্রাহিম মিয়া, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) যুগ্ম মহাসচিব মোঃ আসলাম হোসাইন, সহকারী অর্থ সম্পাদক মোঃ মোশারফ হোসেন, আক্তারুজ্জামান ভূঁইয়া, যুব বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান পায়েল, তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আজমাঈন আসরার, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড শাহ আলম অভি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ নূরুল আনোয়ার হিরন, সমবায় বিষয়ক সম্পাদক মো: জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, ফটিকছড়ি উপজেলা সদস্য সচিব মোঃ জানে আলম মাসুদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস.এম হাবিব (মুজিব)সহ বিএসপি’র বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ প্রমুখ। সমাবেশে বিএসপি’র হাজার হাজার নেতাকর্মী ব্যান্ড বাজিয়ে পার্টির চেয়ারম্যান ও একতারা প্রতীকের, ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে মিছিল সহকারে উপস্থিত হয়।