ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ বিতরণে কঠোরতা আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর্থিক খাতের অভিভাবক সংস্থাটির মতে, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছে। আর বিতরণকৃত ঋণ আদায় না হওয়ায় সেসব প্রতিষ্ঠানে তারল্য প্রবাহ কমেছে। এখন থেকে ঋণ বিতরণের আগে যথাযথ ডকুমেন্টেশন করতে হবে।
একই সঙ্গে ১ কোটি টাকা বা তার বেশি পরিমাণের ঋণ বিতরণে ওই প্রতিষ্ঠানের ইন্টারনাল কন্ট্রোল অ্যান্ড কমপ্লায়েন্সের (আইসিসি) মাধ্যমে প্রাক-নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
২৯ মে ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করেছে।
সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিপালন ব্যবস্থাপনা কার্যকর ও শক্তিশালী করার মাধ্যমে ঋণ বা বিনিয়োগে তদারকি জোরদার করতে হবে। এক কোটি টাকা বা তার চেয়ে বড় অংকের যে কোনো প্রকার ঋণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও বিধি পরিপালন, ঋণ বিতরণের আগে ডকুমেন্টেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিপালনের বিষয়টি নিশ্চিত করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব ইন্টারনাল কন্ট্রোল এন্ড কমপ্লায়েন্সের (আইসিসি) মাধ্যমে ঋণ বিতরণের আগে প্রাক-নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
এতে বলা হয়, প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট নথি সংরক্ষণ করতে হবে। যে কোনো ঋণের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সহায়ক জামানত গ্রহণ, একক গ্রাহককে নির্ধারিত ঋণসুবিধা অনুসরণ, ঋণের গুণগত মান ও সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ঋণ নিয়মাচার পরিপালনে তদারকির জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ড্যাশবোর্ড স্থাপন করতে হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী এবং অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিপালন বিভাগের প্রধান নিয়মিত এ ড্যাশবোর্ড মনিটরিং করবেন।
আর যেসব ঋণে সহায়ক জামানত গ্রহণ করা হয়নি, একক গ্রাহকের অনুকূলে সর্বোচ্চ ঋণের সীমা অতিক্রম হয়েছে, ঋণের ব্যবহার সংক্রান্ত সার্কুলার পরিপালন হয়নি এবং ঋণের নিয়মাচার সংক্রান্ত নীতিমালা পরিপালন হয়নি সেসব ঋণের তথ্য প্রত্যেক মাসের প্রথম সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠাতে হবে।
‘প্রাক-নিরীক্ষায় যদি কোনো ঋণের বিষয়ে গুরুতর অনিয়ম উদঘাটিত হয়, যা ঋণ শৃঙ্খলাবিরোধী ও ভবিষ্যতে ঋণ আদায়ে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, ওই ঋণের বিষয়ে নির্ধারিত তারিখের অপেক্ষা না করে তাৎক্ষণিক সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো প্রতিবেদনের একটি কপি আইসিসির প্রধানের মাধ্যমে অডিট কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে পাঠাতে হবে। প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ সভায় প্রাপ্ত ত্রুটি-বিচ্যুতির সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করতে হবে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের বিভিন্ন সময় দেওয়া নির্দেশনা সঠিকভাবে মানছে না অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বিতরণ করা ঋণ আদায় না হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানে তারল্য প্রবাহ কমেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান পর্যাপ্ত জামানত না রেখেই ঋণ বিতরণ করেছে। আবার একক গ্রাহককে নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত ঋণসুবিধা দেওয়া হয়েছে, যথাযথ ডকুমেন্টেশনও করা হয়নি। এতে বিতরণ করা ঋণের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত না হওয়ায় খেলাপিসহ বিভিন্ন সমস্যার তৈরি হয়েছে।