গণভবন জাদুঘরে রূপান্তরের পর ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের নানা ঘটনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৬ বছরের নিপীড়নের চিত্র থাকবে। ৭ সেপ্টেম্বর গণভবন পরিদর্শন শেষে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের একথা কথা বলেন। এ সময় আরও ছিলেন- শিল্প, গণপূর্ত ও গৃহায়ণ উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, এখানে প্রথমত ৩৪ দিনের পুরো সময়ের স্মৃতির দিনলিপি থাকবে। যারা নিহত হয়েছেন, তাদের তালিকা থাকবে, স্মৃতি থাকবে। এই আন্দোলন ছাড়াও গত ১৬ বছরের লড়াইয়ের একটি মুহূর্ত আমরা ৫ আগস্ট পেয়েছিলাম। এই ১৬ বছরে যে নিপীড়ন হয়েছে, যারা গুম হয়েছেন, তাদের তালিকা থাকবে। যারা বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন, এসব বিষয়ের একটি উপস্থাপনা থাকবে। এমনকি এখানে যে স্থাপনা এখন ভাঙা অবস্থায় রয়েছে, সেটিকে সেই অবস্থায় রেখে এখানে জাদুঘর করা হবে বলে জানান তিনি।
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, আগামী সপ্তাহ থেকে আমরা কাজ শুরু করবো। দ্রুত কাজ শেষ করে যেন উদ্বোধন করা যায়, তা বলা হয়েছে। একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি থাকবে। দেশ–বিদেশের শিল্পী ও জাদুঘর–বিশেষজ্ঞ এবং অভ্যুত্থানের স্মৃতি জাদুঘর করার অভিজ্ঞতা রয়েছে—তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, গণভবনে আমরা দেখেছি, প্রচুর দেয়াললিখন রয়েছে, গ্রাফিতি রয়েছে। মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ পুরো ভবনের চারপাশে। এখানে যেসব আসবাব লুট হয়েছে, পরে যেগুলো মানুষ রেখে গেছেন- সব কটি সংরক্ষণ করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করবো সেগুলোকে রেখেই কার্যক্রম শুরু করতে।
গণভবন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন কোথায় হবে, তা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা আলোচনা করেছেন কী-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, বিষটি পরে আলোচনা হবে। আর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এখন যেখানে আছেন, সেখানেই থাকবেন।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের তালিকা ও চিকিৎসার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের শহীদ পরিবারের তালিকা শেষের দিকে। এসব পরিবার নিয়ে আমরা স্মরণসভার আয়োজন করবো। সেখানেই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের ঘোষণা দেওয়া হবে। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতিসহ অন্যান্য প্রতিশ্রুতি ও হতাহতের তালিকা আমরা সেখানে ঘোষণা করবো।
গণভবনে তো অনেক প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তাদের স্মৃতি সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ রয়েছে কী-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে শিল্প, গণপূর্ত ও গৃহায়ণ উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, এক টাকা দিয়ে মালিকানা নিয়ে নেওয়া হয়েছিল, না? এক টাকা দিয়ে। জনগণের ছিল কতখানি। আমরা জনগণের জন্য উন্মুক্ত করার চিন্তা করছি।
দেশের বিভিন্ন মাজারে হামলা, শিক্ষকদের নিপীড়িনসহ নানা ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে কী-না, মানবাধিকারকর্মী হিসেবে কীভাবে দেখছেন- এমন প্রশ্নে আদিলুর রহমান বলেন, আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। এমন ঘটনা যেন না ঘটে, সে জন্য উদ্যোগ নিচ্ছি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সম্পৃক্ত করে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। এ ধরনের ঘটনা একেবারে অগ্রহণযোগ্য।