প্রবাসী আয়ের দিক থেকে বিশ্বে সপ্তম অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। আর এই আয় সব থেকে বেশি আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। একই সঙ্গে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়ে বৈধ চ্যানেলে বাংলাদেশের মোট প্রবাসী আয়ের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ২৩ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক ও নোমাডের মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পরেই বাংলাদেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে সৌদি আরব থেকে। এ ছাড়া গালফ কো অপারেশন কাউন্সিলভুক্ত (জিসিসি) বেশ কয়েকটি দেশ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্রবাসী আয় আসছে। এর মধ্যে রয়েছে- কুয়েত, বাহারাইন, কাতার, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক। ২০২২ সালে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়প্রাপ্তিতে নেতিবাচক ধারা থাকলেও এ বছরে প্রবৃদ্ধি অর্জনের পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
প্রবাসী আয়ে শীর্ষ দেশ ভারত। চলতি বছর দেশটির প্রবাসী আয়ের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ১২৫ বিলিয়ন বা ১২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের শ্রমবাজারের চাঙা ভাব, উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি কমার কারণে প্রবাসী আয়প্রবাহ বাড়বে বছর শেষে। তবে সৌদি আরব ও কুয়েতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে রীতিমতো ধস নামার কারণে বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
দেশভিত্তিতে প্রবাসী আয়প্রাপ্তিতে দ্বিতীয় স্থানে থাকবে মেক্সিকো। দেশটি মোট ৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় পেতে পারে। ৫ হাজার কোটি ডলারের প্রবাসী আয় নিয়ে তৃতীয় স্থানে থাকবে চীন। চতুর্থ স্থানে থাকবে ফিলিপাইনস, তারা পাবে ৪ হাজার কোটি ডলার।
মিশর ও পাকিস্তান উভয় দেশই ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার যথাক্রমে পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে থাকবে। সপ্তম স্থানে থাকবে বাংলাদেশ। নাইজেরিয়া, গুয়েতেমালা ও উজবেকিস্তান যথাক্রমে ২ হাজার ১০০ কোটি, ২ হাজার কোটি ও ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় নিয়ে অষ্টম, নবম ও দশম স্থানে থাকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, দেশে গত নভেম্বর মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ১৯৩ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই মাসের চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি।
চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১৯ দশমিক ৯২ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৯৯২ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। ফলে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০২৩ সালের শেষে প্রবাসী আয় ২৩ বিলিয়ন থেকে ৩০৭ কোটি ডলার আরও প্রয়োজন, যেটাকে কঠিন বলেই মনে করা হচ্ছে।
প্রবাসী আয়ে অতিরিক্ত প্রণোদনা দেওয়ার ফলে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর সময়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীদের আয় পাঠানো বেড়েছে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন ব্যবস্থার কারণে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে বাংলাদেশের প্রবাসী আয় বাড়লেও এই বৃদ্ধির হার একই থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। মূলত ব্যালেন্স অব পেমেন্ট বা বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে সংকটের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ করায় অনানুষ্ঠানিক বাজার তৈরি হয়েছে।
অনানুষ্ঠানিক বাজারে ডলারের দর বেশি থাকায় বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশের প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলের পরিবর্তে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে আয় বেশি পাঠান বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ভালো হলেও তেলের দাম কমে যাওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার অভিবাসীদের নতুন কর্মসংস্থান খুব বেশি হবে না।
সে কারণে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি হবে না। ২০২৪ সালেও বাংলাদেশে প্রবাসী আয় ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার, অর্থাৎ সমানই থাকবে।