গভীর সমুদ্রের খনিজের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) ২০৪০ সালের মধ্যে খনিজের চাহিদা দ্বিগুণ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। তবে পরিবেশবিদরা আশঙ্কা করছেন, খননের কারণে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যে ধ্বংস হতে পারে।
গভীর সমুদ্রে খনির পরীক্ষার কারণে সাগরের তলদেশের জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, খনন যন্ত্র গভীর সমুদ্রের যেসব এলাকা দিয়ে চলাচল করে সেখানকার প্রাণীর সংখ্যা অন্য এলাকার তুলনায় ৩৭ শতাংশ কমে গেছে। খবর বিবিসি।
গবেষণাটি ‘নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভোল্যুশন’ নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম, যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ওশেনোগ্রাফি সেন্টার এবং সুইডেনের গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এ গবেষণা পরিচালনা করেছেন। তারা প্রশান্ত মহাসাগরের দূরবর্তী ক্ল্যারিয়ন-ক্লিপারটন জোন এলাকায় এ পরীক্ষা করেন। সেখানে ৬০ লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকায় নিকেল, কোবাল্ট ও তামা সমৃদ্ধ নোডিউল রয়েছে, যা নবায়নযোগ্য শক্তি প্রযুক্তি যেমন বৈদ্যুতিক যানবাহন, সৌর প্যানেল ও বায়ু টারবাইনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিট্রলস্টার
গবেষকরা সমুদ্রতলে চার হাজারটিরও বেশি প্রাণী আবিষ্কার করেছেন, যার ৯০ শতাংশ নতুন প্রজাতি। তারা বিশেষভাবে দশমিক ৩ মিলিমিটার থেকে ২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ছোট আকারের প্রাণীগুলো পর্যবেক্ষণ করেছেন, যেমন কেঁচো, সামুদ্রিক মাকড়সা, শামুক ও ঝিনুক। খননের যন্ত্রগুলো প্রায় পাঁচ সেন্টিমিটার গভীর পর্যন্ত মাটি সরিয়ে ফেলে। আর এ অঞ্চলেই প্রধানত এ প্রাণীরা বাস করে। ফলে অনেক প্রাণী মারা যায় বা অন্যত্র চলে যায়।
ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম ও ইউনিভার্সিটি অব সাউদাম্পটনের পিএইচডি শিক্ষার্থী এবং গবেষণার প্রধান লেখক এভা স্টুয়ার্ট বলেন, ‘আপনি যদি সমুদ্রের তলদেশের মাটি সরিয়ে ফেলেন তাহলে সেখানে বসবাসকারী প্রাণীগুলোও সেখান থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়।’
ন্যাশনাল ওশেনোগ্রাফি সেন্টারের গবেষক ড. গুয়াডেলুপ ব্রিবেস্কা-কন্ট্রেরাস বলেন, ‘যদি কিছু প্রাণী জীবিতও থাকে, খননের কারণে সৃষ্ট দূষণে ধীরে ধীরে কম সহনশীল প্রজাতিগুলোর মৃত্যু ঘটাতে পারে।’
সামুদ্রিক ইউর্চিন
গবেষকরা পরীক্ষা পরিচালনার দুই বছর আগে এবং দুই মাস পরের জীববৈচিত্র্যের তুলনা করেছেন। খনির যন্ত্রপাতির গতিপথে প্রাণীসংখ্যা এবং প্রজাতির বৈচিত্র্য উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তবে যেসব এলাকায় পলি মাটি পড়ে গেছে সেখানে প্রাণীসংখ্যা তেমন কমেনি। কেবল প্রজাতিগুলোর আধিপত্য পরিবর্তিত হয়েছে।
খনন পরিচালনাকারী কোম্পানি ‘দ্য মেটালস কোম্পানি’ গবেষণার ফলাফলকে ‘ইতিবাচক’ বলে মন্তব্য করেছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, খননের ফলে হাজার হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত এর প্রভাবের যে আশঙ্কা পরিবেশবাদীদের ছিল তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে, প্রভাব মূলত খননকৃত এলাকাতেই সীমিত।
সামুদ্রিক মাকড়সা
তবে কিছু বিশেষজ্ঞ এ ফলাফলকে খনন কোম্পানিগুলোর জন্য ভালো খবর বলে মনে করছেন না। চাতম হাউসের গবেষক ড. প্যাট্রিক শ্রোডার বলেন, ‘বড় পরিসরে খননকাজে বর্তমান প্রযুক্তির ব্যবহার খুব বিপদজনক। বড় ধরনের খনির ক্ষেত্রে এটি আরো মারাত্মক প্রভাব ফেলবে হবে।’
গভীর সমুদ্রের খনিজের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) ২০৪০ সালের মধ্যে খনিজের চাহিদা দ্বিগুণ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। তবে পরিবেশবিদরা আশঙ্কা করছেন, খননের কারণে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যে ধ্বংস হতে পারে।
গবেষণায় গভীর সমুদ্রে সন্ধান পাওয়া সামুদ্রিক স্টার
বর্তমানে আন্তর্জাতিক সাগর তত্ত্বাবধায়ক সংস্থা (আরএসএ) ৩১টি অনুসন্ধান লাইসেন্স জারি করেছে, তবে বাণিজ্যিক খননের অনুমোদন দেয়নি। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ অনেক দেশ সাময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে। নরওয়ে সমুদ্রের তলদেশে খননের পরিকল্পনা স্থগিত করেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।

















