বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) ও লিবারেল ইসলামিক জোটের চেয়ারম্যান এবং মাইজভান্ডার দরবার শরীফের বর্তমান ইমাম, আনজুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভান্ডারীয়ার সভাপতি ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী আল হাসানীর (মা.জি.আ.) নেতৃত্বে লাখো নবীপ্রেমি সুফিবাদী জনতার উচ্ছ্বাসমুখর অংশগ্রহণে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উপলক্ষে রাজধানীতে জশনে জুলুস র্যালী বের হয়েছে।
রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হতে সকালে ধর্মীয় শোভা যাত্রা শুরু হয়ে রাজধানীর শাহবাগ, মৎস্য ভবন, দোয়েল চত্বর হয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনের সড়ক প্রদক্ষিণ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসে শান্তি মহাসমাবেশে মিলিত হয়।
ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন বিভাগ, জেলা, উপজেলা থেকে লাখ লাখ জনতা শোভাযাত্রা ও শান্তি মহাসমাবেশে অংশগ্রহণ করতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জমায়েত হন। শোভাযাত্রার অগ্রভাগেই দৃষ্টিনন্দন বড় বড় হরফে লেখা ছিল ‘ইয়া নবী ছালামু আলাইকা’, ‘ইয়া রাসূল ছালামু আলাইকা’। বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) ও আন্জুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভান্ডারীয়ার ব্যবস্থাপনায় জশনে জুলুসে অংশগ্রহণকারীরা কলেমা খচিত পতাকা, প্লেকার্ড, ফেস্টুন ছাড়াও, বহন করে বাংলাদেশের বিশাল জাতীয় পতাকা। জুলুসে অংশগ্রহণকারীরা নারায়ে তকবির, নারায়ে রেসালতের স্লোগানে স্লোাগানে রাজধানীর রাজপথ মুখরিত করে তোলেন।
জুলুস শেষে মুসলিম জনতা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মিলিত হয়। শান্তি মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন লিবারেল ইসলামিক জোটের চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী।
সভাপতির ভাষণে সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী বলেন, মহানবীর (দ.) দুনিয়ায় শুভাগমন জসৎবাসীর জন্য আল্লাহ পাকের বিশেষ রহমত ও অনুগ্রহ। তিনি আইয়্যামে জাহেলিয়াতের অবসান ঘটিয়ে পৃথিবীবাসীকে শান্তি, সাম্য ও মুক্তির পথ দেখান। রাসূলে পাক (দ.) দুনিয়ায় শুভাগমনের মূল উদ্দেশ্যই হলো এশটি শান্তি ও সহাবস্থানপূর্ণ মানবিক বিশ্ব সমাজ গড়ে তোলা।
তিনি আরো বলেন, ধর্ম মানুষকে সুশৃক্সক্ষল জীবনযাপনে উৎসাহিত করে। উগ্রতা, হঠকারিতা, জঙ্গি কর্মকান্ড জ্বালাও পোড়াও এর মাধ্যমে জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি করা ধর্মের বিধান নয়। শান্তি, সাম্য, ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করাই ইসলাম তথা প্রিয়নবীর (দ.) মূল আদর্শ। রাসূলের (দ.) আদর্শ থেকে বিচ্যুত হওয়ার কারনেই আজ সিরিয়া, ফিলিস্তিন, মিয়ানমারসহ তাবৎ দুনিয়ায় যুদ্ধ সংঘাত ও রক্তপাতে জর্জরিত। শক্তিধর দেশগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান না করে অস্ত্রেও ভাষায় কথা বলছে। নিষেধাজ্ঞা পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে সমগ্র পৃথিবীর মানুষ খাদ্য জ্বালানি সংকটসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত ও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। এই দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে মহানবীর (দ.) আদর্শ অনুসরণের বিকল্প নেই। কীভাবে সমতাভিত্তিক, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক আধুনিক কল্যাণকর মানবিকরাষ্ট্র গঠন করা যায় সাড়ে চৌদ্দশত বৎসর আগে রাসূলই আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন।
পীরজাদা মুফতী মাওলানা বাকী বিল্লাহ আল-আযহারী ও শায়খ আজমাঈন আসরারের সঞ্চালনায় অতিথি ও আলোচক ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ (এম.পি), ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামীলীগের সহসভাপতি অ্যাড. নুরুল আমিন রুহুল (এমপি), লিবারেল ইসলামিক জোটের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ জনদলের (বিজেডি) চেয়ারম্যান ও লিবারেল ইসলামিক জোটের কো-চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান জয় চৌধুরী, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ-ভাসানী)’র মহাসচিব খালেদ শাহরীয়ার, ফাইয়াজুল হক চৌধুরী, মিলাদুন্নবী (দ.) উদযাপন পরিষদেও আহ্বায়ক ও মইনীয়া যুব ফোরাম সভাপতি শাহজাদা সৈয়দ মেহবুব-এ-মইনুদ্দীন, যুগ্ম আহ্বায়ক ও মইনীয়া যুব ফোরামের নির্বাহী সভাপতি শাহজাদা সৈয়দ মাশুক-এ-মইনুদ্দীন, এফবিসিআই পরিচালক মোঃ রেজাউল করিম রেজনু, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক আকন্দ, মাওলানা রুহুল আমিন ভূঁইয়া চাঁদপুরী, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. মোঃ আব্দুল আজিজ সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আবুল কালাম আজাদ, আন্জুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভান্ডারীয়ার সহসভাপতি মোঃ কবীর চৌধুরী, অ্যাড. মোঃ ওয়াজ উদ্দিন মিয়া, মহাসচিব মোঃ আলমগীর খান, হযরত সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী ট্রাস্টেও মহাসচিব আল্হাজ্ব কাজী মহসীন চেšধুরী প্রমুখ। মহাসমাবেশে নারীদেও অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো।
শান্তি মহাসমাবেশে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক (এমপি) বলেন, ইসলাম শান্তির সম্প্রীতির ধর্ম। ইসলামের গায়ে যারা কালিমা লেপন করে তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপি, জামায়াত জোটের আমলে গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খান (এমপি) বলেন, রাজনীতিতে যারা মিথ্যা কথা বলেন তারা দেশ প্রেমিক হতে পারেনা। পদ্মা সেতুর কারণে আমরা এখন আরামে আসা যাওয়া করি। দেশকে যারা ভালোবাসেনা, কোরআন হাদিসকে মানেনা তারা কি করে ইসলাম দাবি করে; তাদের হাতে ইসলাম নিরাপদ নয়।
বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, পীর আউলিয়া সুফিদের মাধ্যমে এদেশে ইসলাম এসেছে। মুসলমানদের দেশে ইসলাম নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করছে এক দল আলেম। তিনি আরো বলেন, ছোট কালে পিতার সাথে দাঁড়িয়ে মিলাদ পড়তাম। এখন মিলাদকে বেদাত বলা হচ্ছে। তাহলে কি আমার পিতা বেদাতি হয়ে গেছেন। সৌদিতে ওহাবীবাদের কারণে মিলাদ বন্ধ হয়েছিল। ইতোমধ্যে সৌদি আরবে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) পালন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ বলেন, ইসলামের কথা বলে যারা ফেৎনা ও অশান্তি সৃষ্টি করে তাদের প্রতিহত করুন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু মদ, জুয়া হাউজিং বন্ধ করেছিল। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে এই অপসংস্কৃতি চালু করেছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করেছেন। জিয়া, এরশাদ, খালেদা কওমি স্বীকৃতি ঝুলিয়ে রেখেছিল। বর্তমান সরকার তাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। এমনকি চাকরিরও ব্যবস্থা করেছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এক লক্ষ বিশ হাজার মসজিদ ভিত্তিক মক্তব প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রত্যেক আলেমকে পাঁচ হাজার দুইশত টাকা ভাতা চালু করেছেন। তিনি আরো বলেন, এই উপমহাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অলি আউলিয়ার মাধ্যমে। কোনো যুদ্ধের তলোয়ারের মাধ্যমে নয়। জামায়াত শিবিরগোষ্ঠি মাজারের বিরুদ্ধে ফতোয়া দেয়। এরা ইসলামের ফেতনা সৃষ্টি করে। এদের আশ্রয় প্রশ্রয় দাতা বিএনপি। এদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকতে হবে।