ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে এ পর্যন্ত পাঁচ জেলায় সাতজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বরিশালে দুইজন, ভোলায় দুইজন, চট্টগ্রাম, পটুয়াখালী ও সাতক্ষীরায় একজন করে মারা গেছেন।
বরিশাল নগরীতে তিনতলা ছাদের উপরের দেয়াল ধসে পাশের একটি খাবার হোটেলের উপর পড়ে দুইজন মারা গেছেন। সোমবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে নগরীর রুপাতলী লিলি পেট্রোল পাম্পের পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো একজন।
নিহরা হলেন, হোটেল মালিক লোকমান হোসেন ও কর্মচারী মোকছেদুর রহমান। আহত অপর কর্মচারী সাকিবকে গুরুতর আহত অবস্থায় বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রিসা
কোতয়ালী মডেল থানার ওসি আরিচুল হক জানিয়েছেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঘটনাস্থলে থাকা ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান মাহমুদ বলেন, ছাদের উপরের দেয়াল বৃষ্টি ও ও ঝোড়ো বাতাসে ধসে পাশের টিনের খাবার হোটেলের উপর পড়ে। এতে টিনের চালসহ দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে ঘুমন্ত হোটেল মালিকসহ দুই কর্মচারী। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
ভোলার লালমোহন উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে ঘরের নিচে চাপা পড়ে মনেজা খাতুন (৫৫) নামের এক নারী নিহত হয়েছেন।
রবিবার দিবাগত রাত ৪টার দিকে নিজ বসত ঘরের নিচে চাপা পড়ে মারা যান তিনি।
পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবার উদ্যোক্তা মো. আ. হান্নান জানান, রাতের খাবার খেয়ে মনেজা খাতুন ও তার স্বামীসহ ৫-৭ বছর বয়সী ছোট নাতিন নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত ৪টার দিকে তীব্র ঝড়ে তাদের বসত ঘরটি বিধ্বস্ত হয়। এ সময় স্বামী আব্দুল কাদের ও ছোট নাতিন বের হতে পারলেও মনেজা খাতুন ঘরের নিচে চাপা পড়েন। পরে প্রতিবেশীরা এসে মনেজা খাতুনের মরদেহ উদ্ধার করেন।
লালমোহন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাহবুব উল আলম কালের কণ্ঠকে জানান, ঘূর্ণিঝড়ে ঘরের নিচে চাপা পড়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। তবে এখনো বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।
এ ছাড়া জেলার দৌলতখান উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে গাছ উপড়ে পড়ে ঘরের ভেতর থাকা মাইশা (৪) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৭ মে) ভোর ৪টার দিকে পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে।
শিশু মাইশা পৌর ২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রতিবন্ধী মনিনের মেয়ে।
শিশুটির বাবা মনির জানায়, রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ ভোর ৪টার দিকে একটি গাছ আমার টিনের ঘরের ওপর পড়ে। সে সময় গাছ ও টিনের চাল আমাদের চাপা দিলে আমার মেয়ে মারা যায় এবং আমিও গাছের নিচে চাপা পড়ে থাকি। পরে স্থানীয়রা এসে আমাকে উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে দৌলতখান থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সত্য রঞ্জন খাসকেল বলেন, গাছ চাপা পড়ে শিশু মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে পৌর ২ নম্বর ওয়ার্ড বটতলা মাছঘাট, শহর রক্ষা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঢেউয়ের পরে ঢেউ আছড়ে পড়ছে বাঁধের ওপর। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিছু বসত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার চন্দ্রনগর কলাবাগান এলাকায় দেয়াল ধসে সাইফুল ইসলাম হৃদয় (২৬) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আজ সোমবার সকালে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
ঘটনার সময় সাইফুল ইসলাম রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন বলে জানা গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের বায়েজিদ বোস্তামী স্টেশনের ইনচার্জ মো. কামরুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, রাত থেকেই চট্টগ্রামে বৃষ্টি হচ্ছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা জানতে পেরেছি সাইফুল রিকশা চালাতেন। রিকশা আনার জন্য বাসা থেকে গ্যারেজের দিকে যাচ্ছিলেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে মনে হয়েছে, সীমানা প্রাচীরটি অনেক পুরোনো। টানা বৃষ্টির কারণে সীমানা প্রাচীরের নিচের মাটি নরম হয়ে যাওয়ায় দেয়াল ধসে পড়েছে।
এ ছাড়া পটুয়াখালীতে বোন ও ফুফুকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে যাওয়ার সময় পানির তোড়ে ভেসে মারা গেছেন মো. শরীফ হাওলাদার নামে এক যুবক। গতকাল রবিবার দুপুরে কলাপাড়া উপজেলার ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় তলিয়ে যাওয়া সড়ক সাঁতার কেটে পার হতে গেলে স্রোতের তোড়ে ভেসে যান শরীফ হাওলাদার। এক ঘণ্টা পর ওই স্থান থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা।
নিহত শরীফ ওই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অনন্তপাড়া এলাকার আবদুর রহিম হাওলাদারের ছেলে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল বলেন, শরীফের ফুফু কাউয়ারচর এলাকায় বসবাস করেন। ওই বাড়িতে তার বোনও ছিল। দুপুরের দিকে শরীফ তার বড় ভাই ও ফুফাকে নিয়ে বোন এবং ফুফুকে উদ্ধার করতে যায়। পথে বেড়িবাঁধের বাইরে একটি গ্রামীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। শরীফ সাঁতার কেটে সড়কটি পার হয়ে ফুফুর ঘরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ঢেউয়ের তোড়ে তিনি হারিয়ে যান।
অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় থেকে বাঁচতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় পথে শওকাত মোড়ল নামে ৬৫ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধ মারা যান।
শ্যামনগর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়কে কেন্দ্র করে নাপিতখালী গ্রামে খোলা আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় তার মৃত্যু হয়েছে। হয়ত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।