জাতিসংঘ প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক জনসংখ্যা সম্ভবনা ২০২৪-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, আশা করা হচ্ছে আগামী ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্য়ে বিশ্বের জনসংখ্যা হবে ঊর্ধ্বমুখী। ২০৮০ সালের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্বজুড়ে শীর্ষে পৌঁছবে জনসংখ্যা। সেই সময় বিশ্বজুড়ে জনসংখ্যা হতে পারে ১০.৩ বিলিয়ন বা ১০৩০ কোটি।
সেই সঙ্গে দেশগুলোকে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রতি দুই বছর অন্তর প্রকাশ হয় জাতিসংঘের ‘ওয়ার্ল্ড পপুলেশন প্রসপেক্টস ২০২৪’। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৮২০ কোটি জনসংখ্যা থেকে ২০৮৪ সালে বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১ হাজার ৩০ কোটি।
বিশ্বের জনসংখ্যা শীর্ষে পৌঁছনোর পর ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে। শতাব্দীর শেষের দিকে প্রায় ১০.২ বিলিয়ন বা ১০২০ কোটি জনসংখ্যা নেমে আসবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৫৪ সালের মধ্যে বিশ্বের ১২০টি দেশে জনসংখ্যা বাড়বে। যার মধ্যে রয়েছে- ভারত, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান এবং যুক্তরাষ্ট্র।
বিশ্বব্যাপী নারীরা ১৯৯০-এর দশকের তুলনায় এখন গড়ে এক সন্তানের কম জন্ম দিচ্ছেন বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে। আরো বলা হচ্ছে, অর্ধেকের বেশি দেশে নারীপ্রতি জীবিত সন্তান জন্মদানের হার এখন ২ দশমিক ১ শতাংশের নিচে। তবে জন্মহারের এ স্তর স্থিতিশীল। অন্যদিকে চীন, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া ও স্পেনসহ এক-পঞ্চমাংশ দেশে নারীপ্রতি জীবিত সন্তান জন্মের হার ১ দশমিক ৪ শতাংশ। যাকে জাতিসংঘ বলছে, ‘অতি নিম্ন জন্মহার’।
জন্মহার পতনের সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গিকে মুখ্য হিসেবে দেখছেন ভিয়েনার ভিটগেনস্টাইন সেন্টার ফর ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড গ্লোবাল হিউম্যান ক্যাপিটালের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ভলফগ্যাং লুটজ। তিনি বলেন, ‘প্রজনন হারে পতনের সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের মূল্যবোধ পরিবর্তন জড়িত। আগের প্রজন্ম সন্তান জন্মদানকে সফল জীবনের মূল দিকগুলোর একটি হিসেবে দেখলেও এখনকার তরুণরা তেমনটা ভাবেন না।’
এদিকে গত বছরেই চিনকে টপকে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশে পরিণত হয়েছে ভারত। ২১০০ সাল পর্যন্ত ভারতই বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশের অবস্থান ধরে রাখবে বলা হয়েছে রিপোর্টে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে চিনের জনসংখ্যা ১.৪১ বিলিয়ন বা ১৪১ কোটি। ২০৫৪ সালের মধ্য়ে জনসংখ্যা কমে দাঁড়াবে ১.২১ বিলিয়ন বা ১২১ কোটি। ২১০০ সালের মধ্য়ে জনসংখ্যা আরও কমবে চিনে। ২১০০ সালের মধ্যে জনসংখ্যা কমে দাঁড়াবে ৬৩৩ মিলিয়ন বা ৬৩ কোটি ৩০ লাখে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারতের জনসংখ্যা হবে আনুমানিক ১.৪৫ বিলিয়ন বা ১৪৫ কোটি। ২০৫৪ সাল নাগাদ ভারতের জনসংখ্যা শীর্ষে পৌঁছবে। সেই সময় ভারতের জনসংখ্যা দাঁড়াবে আনুমানিক ১.৬৯ বিলিয়ন বা ১৬৯ কোটি। এরপর ভারতের জনসংখ্যা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে। ২১০০ সালে শতাব্দীর শেষ নাগাদ ভারতের জনসংখ্যা ১.৫ বিলিয়ন বা ১৫০ কোটিতে দাঁড়াবে। তবে তখনও বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশই হিসেব শীর্ষ স্থানে থাকবে ভারত।
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সম্পর্কিত বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি লি জুনহুয়া বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জনসংখ্যা বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের বেশ কিছু দেশে বিভিন্ন কারণে জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পরিবর্তে কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে চীনে।
এছাড়া বর্তমানে মানুষের গড় আয়ু ৭৩.৩ বছর রয়েছে। কিন্তু ২০৫৪ সালে এটি বেড়ে দাঁড়াবে ৭৭.৪ বছরে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০৭০ সালের মধ্যে বিশ্বে বয়স্কো জনসংখ্যা বেড়ে যাবে। সে সময়ে ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে বয়সীদের সংখ্যা দাঁড়াবে ২২০ কোটিতে, যা ১৮ বছর বয়সী জনসংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাবে।
বিশেষজ্ঞমহল বলছেন, কর্মক্ষম জনসংখ্যার পতন ও বয়স্কদের সংখ্যা বাড়লে তা পাবলিক ফাইন্যান্সের মতো নতুন চাপ তৈরি করবে। এ বিষয়ে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের অধ্যাপক চার্লস গুডহার্ট বলেছেন, ‘সমস্যা হলো যে কম কর্মী মানে কম প্রবৃদ্ধি ও কম কর। এছাড়া বয়স্কদের জন্য আরো যত্ন, ওষুধ ও সেবামূলক সহায়তা দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘যদি ওষুধ ও চিকিৎসাবিজ্ঞান বয়স্কদের রোগের মোকাবেলা করতে না পারে, তাহলে সমাজে অনেক বেশি বৃদ্ধ থাকবেন যাদের দেখাশোনা করার জন্য খুব কম যুবক থাকবে।’
এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় এখন থেকেই পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। দ্রুত বয়স্ক জনসংখ্যা বাড়ছে, এমন দেশগুলো উৎপাদনশীলতা ও কর্মজীবন প্রসারিত করতে প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শও দিয়েছে সংস্থাটি।