বঙ্গভবনে অন্তর্বর্তী সরকারের আরও নতুন চার উপদেষ্টা শপথ নিলেন। ১৬ আগস্ট বিকেল চারটার পর চার উপদেষ্টাকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরই আলোকে ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারে আরও চারজন উপদেষ্টা যুক্ত হচ্ছেন আজ। তাদের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (উপদেষ্টা মর্যাদা) সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারকে উপদেষ্টা করা হয়েছে। অন্য তিন জন হলেন- অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, সাবেক সচিব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। চার উপদেষ্টার সংক্ষিপ্তি পরিচয়-
ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ
অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ ১৯৪৮ সালের ১ জুলাই নোয়াখালীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আলী আহমেদ চৌধুরী ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা এবং মা সালেহা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে বিএ (অনার্স) ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ১৯৮৪ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন এবং ২০১১ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে তিনি জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (ইউএন-সিডিপি) সদস্য এবং সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অব ইকোনমিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসএএনইআই) চেয়ারম্যান। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তিনি পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং ১০ বছর এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলেন।
আলী ইমাম মজুমদার
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারের ১৯৫০ সালে জন্মগ্রহন করেন। ৭৪ বছর বয়সী আলী ইমাম মজুমদার জোট সরকারের সময় সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সেনা সমর্থিত ড. ফখরুউদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কেবিনেট সচিব ছিলেন। এছাড়া তিনি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। তার আগে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন।
১৯৭৭ সালে প্রশাসন ক্যাডারের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়া আলী ইমাম মজুমদার পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) বিভিন্ন প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবেও কাজ করছেন তিনি।
আলী ইমাম মজুমদার চাকরি জীবনে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে সহকারী কমিশনার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ উপজেলা ও জেলায় বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। গত ১২ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাকে নিজের বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেন।
ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান
ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান; ২০০৭-২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জ্বালানি খাতে সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা মূল্যায়নের পাশাপাশি দক্ষিণ সুদানের জন্য বিদ্যুৎ খাতের কৌশল প্রণয়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের নীতি বিশেষজ্ঞ ছিলেন এবং ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) জন্য বাংলাদেশ অফ-গ্রিড এনার্জি সেক্টর স্টাডি পরিচালনা করেছিলেন।
ড. এম ফওজুল খান ১৯৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস অ্যাট বোস্টন, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে আংশিক ও ফুলটাইম ফ্যাকাল্টি হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন। এর আগে তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে দায়িত্ব পালন করেন এবং নব্বই দশকের শুরুতে কর ও শুল্ক সংস্কারের নকশা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে নিয়োজিত ছিলেন। ২০০৯ সালে ফাওজুল কবির সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরদিন থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্টে অধ্যাপনা শুরু করেন। তিনি বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, ইউএনডিপি, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের একজন শীর্ষ পরামর্শক। তার বাড়ি সন্দ্বীপের হরিশপুর গ্রামে। তার বাবা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর।
ফাওজুল কবির খানের সিভিল সার্ভিস, ট্যাক্স অ্যান্ড রেগুলেটরি বিষয়াদি, অবকাঠামো অর্থায়ন, জ্বালানি নীতি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং বিভিন্ন উপদেষ্টা সেবায় ৩৫ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি বাংলাদেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি এবং দক্ষিণ সুদানে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি ইউনাইটেড পাওয়ারের পরিচালনা পরিষদে ইনডিপেন্ডেন্ট পরিচালক হিসেবে আছেন।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী
সাবেক সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ২০০৩ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বর্তমান বিজিবি) মহাপরিচালক ছিলেন। এরপর তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্টিলারি কোরে কমিশন করেন। একজন গানার হিসেবে কর্মজীবনের শুরুতে তিনি কমান্ডিং টু আর্টিলারি ব্রিগেডস এবং ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের পর সেনাবাহিনীর গঠিত তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দেন তিনি। তখন তিনি কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) ছিলেন। ২০০৯ সালে তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। ২০১০ সালে তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যান।
উল্লেখ্য, গত ৭ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে ১৭ জনের অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। ৮ আগস্ট শপথ নেন প্রধান উপদেষ্টাসহ ১৪ জন উপদেষ্টা। পরে বাকি তিন জন উপদেষ্টা শপথ নেন। এবার তাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন নতুন এই চার উপদেষ্টা।