৮ অক্টোবর ২০২৫, এখন সময় সন্ধ্যা ৭:১০ মিনিট
শিরোনাম
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. কৃষি
  6. খুলনা
  7. খেলাধূলা
  8. গণমাধ্যম
  9. চট্রগ্রাম
  10. জাতীয়
  11. ঢাকা
  12. তথ্য-প্রযুক্তি
  13. ধর্মতত্ত্ব
  14. প্রকৃতি-পরিবেশ
  15. প্রবাস জীবন

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান ছয়টি ঝুঁকি

প্রতিবেদক
স্টাফ রিপোর্টার
অক্টোবর ৭, ২০২৫ ৫:৪৬ অপরাহ্ণ

চলতি ২০২৫–২০২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের চেয়ে কিছুটা বেড়ে ৪ দশমিক ৮ শতাংশে পৌঁছাবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। সাময়িক হিসাবে গত অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয় ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। আর চূড়ান্ত হিসাবে তার আগের অর্থবছরে (২০২৩–২৪) ছিল ৪ দশমিক ২২ শতাংশ।
৭ অক্টোবর বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর হালনাগাদ প্রতিবেদন ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ এ এমন পূর্বাভাস দিয়েছে। ঢাকায় বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেটের বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন সংস্থার সিনিয়র অর্থনীতিবিদ নাজমুস সাদাত খান। এর আগে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের অর্থনীতির ওপর হালনাগাদ প্রতিবদেন ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ এর ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিসকা ওহসরজে। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর জঁ পেসমে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সিনিয়র এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা মেহরিন আহমেদ মাহমুদ।
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেটে বলা হয়, মূলত মূল্যস্ফীতি হ্রাস ও বেসরকারি ভোগব্যয়ের জোরদার হওয়ার ফলে জিডিপ প্রবৃদ্ধি বাড়বে। তবে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতার কারণে বিনিয়োগ মন্থর থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে বৈশ্বিক বাণিজ্য উত্তেজনা অব্যাহত থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক কাঠামোর অধীনে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান বজায় থাকবে বলে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি শক্তিশালী থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আমদানি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসায় বৈদেশিক লেনদেনে চলতি হিসাবের ভারসাম্য পুনরায় ঘাটতিতে পরিণত হতে পারে। রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে সংস্কারমূলক পদক্ষেপে বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সংস্কারের ফলে ভর্তুকি প্রদানের হার ধীরে ধীরে কমে এলেও, সুদ পরিশোধের সঙ্গে মিলিয়ে এটি মোট চলতি ব্যয়ের ৫০ শতাংশেরও বেশি অংশ দখল করে থাকবে। সরকারি ঋণ ২০২৬–২৭ অর্থবছরের মধ্যে জিডিপির প্রায় ৪১.৭ শতাংশে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মূল্যায়ন অনুযায়ী, বাংলাদেশের ঋণ সংকটের ঝুঁকি ‘নিম্ন’ থেকে বেড়ে এখন ‘মধ্যম’ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে।
যেসব ঝুঁকি রয়েছে
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনীতিতে ৬টি নিম্নমুখী ঝুঁকি রয়েছ। যেমন- ব্যাংকিং খাতের সম্ভাব্য দুর্বলতা, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সংস্কার বাস্তবায়নে বিলম্ব, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিঘ্ন, প্রত্যাশার তুলনায় ধীরগতিতে মূল্যস্ফীতি হ্রাস এবং জ্বালানি সরবরাহে সীমাবদ্ধতা। তবে আগামী অর্থবছরে বিনিয়োগ কার্যক্রমের পুনরুদ্ধারের ফলে প্রবৃদ্ধি আরও বেড়ে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, এই প্রবৃদ্ধি মূলত মূল্যস্ফীতি হ্রাস ও শক্তিশালী রেমিট্যান্স দ্বারা সমর্থিত হবে, যা বেসরকারি ভোগব্যয়কে আরও জোরদার করবে। এছাড়া শ্রমবাজারের পরিস্থিতিতে সামান্য উন্নতি হবে। জাতীয় দারিদ্র্যের হার ২০২৬–২০২৭ অর্থবছরে কমে ১৯.১ শতাংশে নেমে আসবে এবং মূল্যস্ফীতি প্রায় ৫.৫ শতাংশে স্থিতিশীল হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এই পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া মূলত সংস্কারের কার্যকর বাস্তবায়ন, ব্যাংকিং খাতের পুনর্গঠন, এবং অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক পরিবেশের ধারাবাহিক উন্নতির ওপর নির্ভর করবে।
এলডিসি থেকে উত্তরণ
বিশ্বব্যাংক বলেছে, ২০২৬ সালের নভেম্বর মাসে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ রপ্তানি খাতে তাৎক্ষণিক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না বলে আশা করা হচ্ছে। এর কারণ, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)২০২৯ সাল পর্যন্ত অগ্রাধিকারমূলক শুল্ক হার অব্যাহত রাখবে। এলডিসি উত্তরণ বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বেসরকারি খাতের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা বৃদ্ধি, এবং অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যায়নের জন্য ব্যাপক সংস্কার বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ তৈরি করবে। নির্বাচন-পরবর্তী নীতির স্বচ্ছতা ও সংস্কার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হলে প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধার, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, এবং দারিদ্র্য হ্রাস সম্ভব হবে।
ব্যাংক খাত
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক গত অর্থবছরে খেলাপি ঋণ শনাক্তকরণ ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়াকে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলে ২০২৫ সালের মার্চ নাগাদ ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার বেড়ে ২৪.১ শতাংশে পৌঁছায়, যা দক্ষিণ এশিয়ার ব্যাংকগুলোর গড় হার ৭.৯ শতাংশের তুলনায় অনেক বেশি। এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সরকার ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দিয়ে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে, যার মধ্যে তারল্য সহায়তা প্রদান অন্যতম। বর্তমানে নিয়ন্ত্রক কাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম চলছে, যার লক্ষ্য বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর শাসনব্যবস্থা ও স্বচ্ছতা জোরদার করা। এই উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের জন্য উচ্চস্তরের কৌশল প্রণয়ন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শাসনব্যবস্থা ও কার্যকর স্বাধীনতা বাড়াতে আইনি কাঠামোর সংশোধনী প্রস্তুত করা।
বাহ্যিক খাত
বাহ্যিক খাতের বিষয়ে বিশ্বব্যাংক বলেছে, প্রবাসী আয় বছরওয়ারি ভিত্তিতে ২৬.৮ শতাংশ পেয়েছে এবং রপ্তানি আয় ৮.৮ শতাংশ বেড়েছে— যা মূলত প্রস্তুত তৈরি পোশাক, চামড়া, প্লাস্টিক, কৃষিপণ্য ও জুতা শিল্পের শক্তিশালী পারফরম্যান্সের ফল। অন্যদিকে আমদানি কার্যক্রম ৪.৩ শতাংশ বেড়েছে প্রধানত চাল ও মধ্যবর্তী পণ্যের আমদানি বৃদ্ধির কারণে। যদিও মূলধনী পণ্য ও যন্ত্রপাতির আমদানি হ্রাস পেয়েছে, যা বেসরকারি ও সরকারি বিনিয়োগের মন্থরতার ইঙ্গিত দেয়। উন্নয়ন সহযোগীদের উল্লেখযোগ্য বাজেট সহায়তাও গত অর্থবছরে আর্থিক হিসাবকে শক্তিশালী করেছে। নিট প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ ২০.১ শতাংশ বেড়ে ১.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যদিও এটি মোট জিডিপির মাত্র ০.৪ শতাংশ। এর ফলে সামগ্রিক পরিশোধ ভারসাম্য উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে, যা আগের বছরের ৪.৩ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি থেকে ৩.৪ বিলিয়ন ডলারের উদ্বৃত্তে পরিণত হয়েছে। এই ইতিবাচক পরিবর্তন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করেছে। ২০২৫ সালের মে মাসে আরও নমনীয়, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার পদ্ধতি গ্রহণের পর থেকে টাকার বিনিময় হার তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে।
কর–জিডিপি অনুপাত কমেছে
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজস্ব ঘাটতি গ অর্থবছরে কিছুটা বেড়েছে, যার প্রধান কারণ ছিল কর আয়ের মন্থর প্রবৃদ্ধি এবং ভর্তুকি ও সুদ পরিশোধজনিত বর্তমান ব্যয় বৃদ্ধি। তবে আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০২৪–২৫ অর্থবছরে জিডিপির অনুপাতে করের হার ৭.৪ শতাংশ থেকে কমে ৬.৮ শতাংশে নেমে এসেছে— যা প্রথম প্রান্তিকে দুর্বল অর্থনৈতিক কার্যক্রম এবং অর্থবছরের শেষ দিকে কর আদায়ে বিঘ্নতার প্রতিফলন। অন্যদিকে চলতি ব্যয় জিডিপির ৯.২ শতাংশে পৌঁছেছে, যা মূলত জ্বালানি ও কৃষি খাতে ভর্তুকি বৃদ্ধি এবং উচ্চ সুদ পরিশোধের কারণে (বর্তমানে যা মোট চলতি ব্যয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ)।
বিশ্বব্যাংক বলেছে, রাজস্ব আয় বাড়াতে অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু বড় ধরনের সংস্কার শুরু করেছে, যার মধ্যে রয়েছে কর নীতি ও প্রশাসনের প্রাতিষ্ঠানিক পৃথকীকরণ, কর ব্যয় ব্যবস্থাপনা উন্নত করার নীতি গ্রহণ, এবং ব্যক্তিগত করদাতাদের জন্য অনলাইন ট্যাক্স ফাইলিং বাধ্যতামূলক করা।

সর্বশেষ - আইন-আদালত