আজ ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস। বাঘের প্রাকৃতিক আবাস রক্ষা করা এবং বাঘ সংরক্ষণের জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে প্রতি বছরের ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস পালন করা হয়। এ বছর বাঘ দিবসে সুন্দরবনে বাঘশুমারির ফলাফল প্রকাশ করার কথা ছিল। কিন্তু তা হচ্ছে না। বন কর্মকর্তারা জানান, আন্দোলন ও কারফিউর কারণে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় কাজ সম্পন্ন করা যায়নি। সেজন্য আগামী আগস্ট মাসে বাঘ গণনার ফল ঘোষণা করা হবে। এর আগে ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর দুপুরে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের হাড়বাড়িয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রে বাঘ গণনার জরিপ কাজের উদ্বোধন করেন সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার।
বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় (ডিএফও) বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, সম্প্রতি সময়ে বেশ কিছুদিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় গণনার কাজ শেষ করতে পারিনি। মেইলে তথ্য আদান প্রদান করা কিংবা অনলাইন ভিত্তিক জুম মিটিং না করতে পারার কারণে বাঘ দিবসে বাঘশুমারির ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হলো না। আগস্ট মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে আশা করছি ফলাফল প্রকাশ করতে পারবো। তিনি আরো বলেন,‘ক্যামেরা ট্র্যাপিং’ পদ্ধতিতে বাঘ গণনা করা হয়েছে। ১ হাজার ২শ’ ২১৬ টি ক্যামেরা নিয়ে প্রায় ৪৫ জনের একটি গবেষণা টিম বাঘ গণনার কাজ করেছেন। উল্লেখ্য, সুন্দরবনে প্রথম বাঘ জরিপের কাজ শুরু হয় ২০১৩-১৪ সালে। সেই জরিপে ১০৬টি বাঘ সুন্দরবনে আছে বলে জানা যায়। ২০১৮ সালে সর্বশেষ জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ১১৪টি। এরপর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সুন্দরবনে বাঘ শুমারি শুরু হয়। এর মাঠ পর্যায়ের কাজ শেষ হয় চার মাস আগে। এখন চলছে বিশ্লেষণ। এবারের শুমারিতে বাঘের সংখ্যা বাড়বে বলে ধারণা বন বিভাগের। অন্যদিকে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সমীক্ষা বলছে, বনে যে খাবার আছে, তাতে টিকে থাকতে পারে কমপক্ষে ১৬৪টি বাঘ।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় গত বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে সাতক্ষীরা ও খুলনা রেঞ্জে শুমারি হয়। এ বছরের প্রথম দিকে বনের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জেও একই পদ্ধতিতে শুমারি করা হয়েছে। ৪০ দিন ধরে প্রতিটি রেঞ্জের ১৪৫টি পয়েন্টে দুটি করে ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। এ ছাড়া সুন্দরবনে খাল সার্ভের মাধ্যমে বাঘের পায়ের ছাপ সংগ্রহ করা হয়।
বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন জানান, বাঘের প্রায় সাড়ে সাত হাজার ছবি পাওয়া গেছে। একই বাঘের ছবি পাওয়া গেছে বহুবার। এজন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রতিটি বাঘের ‘ইউনিক আইডি’ করা হয়েছে। এসব ছবি বিশেষজ্ঞদের কাছে সরবরাহ করা হয়েছে। তারা সেগুলো বিশ্লেষণ করছেন। তিনি জানান, এবারের শুমারিতে সুন্দরবনের অন্য তিনটি রেঞ্জের মতো খুলনা রেঞ্জেও বাঘের অনেক ছবি পাওয়া গেছে। এবারই প্রথম সবচেয়ে বেশি বাঘের বাচ্চার ছবি পেয়েছি। এ থেকে ধারণা করছি, বাঘ আগের তুলনায় বেড়েছে। তবে প্রকৃত সংখ্যাটি কত, তা জানাতে কয়েকদিন সময় লাগবে। এদিকে, বাঘের জন্য হুমকি বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম এ আজিজ গণমাধ্যমকে বলেন, সুন্দরবনে বাঘের প্রধান খাদ্য হরিণ ও শূকর। কিন্তু হরিণ শিকার বন্ধ হয়নি। এটি বাঘের জন্য পরোক্ষ হুমকি।