২২ অক্টোবর ২০২৪, এখন সময় বিকাল ৩:২৮ মিনিট
শিরোনাম
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. কৃষি
  6. খুলনা
  7. খেলাধূলা
  8. গণমাধ্যম
  9. চট্রগ্রাম
  10. জাতীয়
  11. ঢাকা
  12. তথ্য-প্রযুক্তি
  13. ধর্মতত্ত্ব
  14. প্রকৃতি-পরিবেশ
  15. প্রবাস জীবন

৭টি ইসলামী দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক : কী প্রস্তাবনা ও সংস্কারের সুপারিশ করলো দলগুলো

প্রতিবেদক
বিশেষ প্রতিনিধি
আগস্ট ৩১, ২০২৪ ১১:৪২ অপরাহ্ণ

দেশের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবে ৭টি ইসলামী দলের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ৩১ আগস্ট বিকেল ৩টা থেকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় শুরু হওয়া এ সভায় প্রথম ঘণ্টায় অংশ নেন খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, হেফাজতে ইসলামী, জমিয়তে উলামে ইসলামী, খেলাফত আন্দোলন এবং নেজামী ইসলামের নেতারা। পরে ইসলামী আন্দোলনের নেতারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন চরমোনাই পীর রেজাউল করীম। তার সঙ্গে ছিলেন সিনিয়র নায়েবে আমির ফয়জুল করীম, মহাসচিব ইউনুস আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান ও যুগ্ম মহাসচিব আশরাফুল আলম। এর আগে খেলাফত মজলিসের নেতৃত্ব দেন দলের আমির মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ। তার সঙ্গে ছিলেন মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের, নায়েবে আমির সাখাওয়াত হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব মুনতাসীর আলী ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক কাজী মিনহাজুল ইসলাম মিলন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতৃত্ব দেন দলটির আমির ইউসুফ আশরাফ। তার প্রতিনিধি দলে ছিলেন মহাসচিব মামুনুল হক ও যুগ্ম মহাসচিব জালাল উদ্দিন। জমিয়তে উলামে ইসলামের একাংশের নেতৃত্ব দেন সংগঠনের মহাসচিব মনজুরুল ইসলাম আফেন্দি। হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্ব দেন মহাসচিব সাজেদুর রহমান। তার সঙ্গে ছিলেন আজিজুল হক, কেন্দ্রীয় নেতা মুনীর হোসেন কাশেমী। নেজামী ইসলামের নেতৃত্ব দেন নির্বাহী সভাপতি মাওলানা আশরাফুল হক। তার সঙ্গে ছিলেন মহাসচিব মাওলানা মোমিনুল ইসলাম। খেলাফত আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন নায়েবে আমির মজিবুর রহমান হামেদি। বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত টানা পাঁচ ঘণ্টা এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিনদিন পর ৮ অগাস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব বুঝে নেয় মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদ। আওয়ামী লীগকে বাদ রেখে অন্যান্য দল ও সেনাবাহিনী আলোচনা করে এই সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রধান উপদেষ্টাকে ইসলামী আন্দোলনের ১৩ প্রস্তাবনা
গ্রহণযোগ্য তদন্ত কমিশন ও স্বতন্ত্র ট্রাইব্যুনাল গঠন করে জুলাই গণহত্যার বিচার দাবিসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ১৩টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এসব প্রস্তাবনা তুলে ধরেন দলটির আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি যেসব প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন, তাহলো-
১. বিদ্যমান সংবিধান নিয়ে নানাবিধ বিতর্ক আছে। বিগত দিনের ক্ষমতাসীনরা দলীয় স্বার্থে সংবিধানে নানারকম পরিবর্তন করেছে। এ জন্য বর্তমান সংবিধানকে বাতিল করে একটি সাংবিধানিক কমিশন গঠন করে নতুন সংবিধানের খসড়া তৈরি করা এবং গণভোটের মাধ্যমে তা অনুমোদন করা।
২. গ্রহণযোগ্য তদন্ত কমিশন ও স্বতন্ত্র ট্রাইব্যুনাল গঠন করে জুলাই গণহত্যার বিচার করতে হবে। একই সঙ্গে গত ১৬ বছরে যেসব হত্যা, গণহত্যা, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে সেসবের বিচার করতে হবে। এক্ষেত্রে যারা দোষী সাব্যস্ত হবে, তাদের রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
৩. তদন্ত-সাপেক্ষে দুর্নীতিবাজ ও অর্থ পাচারকারীদের সম্পত্তি ক্রোক করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে হবে এবং পাচার করা টাকা ফেরত আনবার উদ্যোগ নিতে হবে। যারা ক্ষমতায় ছিলেন তাদের সম্পদের হিসাব নিতে হবে। দুর্নীতি ও টাকা পাচারের শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।
৪. আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ প্রজাতন্ত্রের যেসব কর্মচারী আইন, সংবিধান, শপথ লঙ্ঘন করে অপেশাদার আচরণ করেছেন তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
৫. ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনকে ব্যবহার করে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি তিনটি ভুয়া নির্বাচন করেছে। এ তিনটি অবৈধ ও প্রহসনের নির্বাচন পরিচালনাকারী নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা তাদের অবৈধ কাজের কুশীলব ছিলেন তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ অবৈধ নির্বাচনের সাহস না করে।
৬. বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে ইসিকে পুনর্গঠন করতে হবে এবং অবাধ, সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালু করতে হবে।
৭. নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যম এ পাঁচটি ক্ষেত্রে আমূল এবং ব্যাপক সংস্কারের কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। আমরাও মনে করি এসব প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। ইসলামী আন্দোলন প্রত্যাশা করে, অন্তর্বর্তী সরকার তাদের সংস্কার কার্যক্রমের ধরণ ও প্রক্রিয়া কি হবে এবং কতদিনের মধ্যে সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করবে, তা অতিদ্রুত প্রকাশ করবে এবং জাতীয় নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করবে।
৮. আওয়ামী দুঃশাসনে বিগত ১৬ বছরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এদেশের সাধারণ শিক্ষাখাতের মান ও নৈতিকতা। এ ক্ষতি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে দেশপ্রেমিক শিক্ষাবিদ ও উলামায়ে কেরামের সমন্বয়ে একটি জাতীয় শিক্ষাকমিশন গঠন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
৯. ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর ঢালাওভাবে রাতারাতি যেসব নিয়োগ, বদলি ও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এসব বিশ্লেষণের জন্য একটি কমিশন গঠন করতে হবে।
১০. ঢালাওভাবে হয়রানিমূলক এবং মিথ্যা মামলা করা যাবে না। শুধু রাজনৈতিক কারণে মিথ্যা মামলা হলে তা প্রত্যাহার করতে হবে।
১১. দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর চিন্তা-চেতনা ও অনুভূতির বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।
১২. নতুন করে চাঁদাবাজি, দখলদারি ও হয়রানি কঠোরভাবে দমন করতে হবে।
১৩. চাঁদাবাজ, দখলবাজ, অবৈধ অস্ত্রধারী ও সন্ত্রাসীদের দমন করতে সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে দ্রুত যৌথ অভিযান শুরু করতে হবে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দ্রুত দেশে এনে বিচার ও শাস্তির ব্যবস্থা করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করাসহ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা ও সংস্কার প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে খেলাফত মজলিস। খেলাফত মজলিসের প্রত্যাশা ও সংস্কার প্রস্তাবনা হলো-
১. শেখ হাসিনাকে দ্রুত দেশে এনে বিচার ও শাস্তির ব্যবস্থা এবং স্বৈরাচারের দোসর, লুটেরা ও দুর্নীতিবাজদের ‘বিশেষ ট্রাইব্যুনালে’ দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে হবে।
২. ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকালে শহীদ, চিরতরে অক্ষম ও আহতদের দ্রুত তালিকা প্রণয়নপূর্বক ক্ষতিগ্রস্তদের অবস্থা অনুযায়ী আশু ও ক্ষেত্র বিশেষে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে জুলাই বিপ্লবে শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণা করতে হবে।
৩. দেশের ধ্বংসপ্রায় বিচার বিভাগ, পুলিশ বিভাগ, প্রশাসনিক বিভাগ, অর্থ ও ব্যাংকিং বিভাগ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিভাগসহ সব বিভাগকে দ্রুত সংস্কারের আওতায় এনে মানুষের কল্যাণে কর্মক্ষম করে তুলতে হবে।
৪. দেশের আইনসভা জাতীয় সংসদ, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনিক বিভাগ যেন স্বাধীনভাবে ও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সমন্বয় করে স্বার্থক ও সুন্দরভাবে চলতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে।
৫. ভারতের সেবাদাস পতিত শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পাদিত সব চুক্তি পুনর্মূূল্যায়ন এবং দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিল ও ক্ষেত্র বিশেষে চুক্তির ধারা সংশোধন করতে হবে।
৬. বিডিআর হত্যাকাণ্ডের অপ্রকাশিত তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ, প্রয়োজনে নতুন তদন্ত কমিশন গঠন এবং প্রকৃত দায়ীদের শনাক্ত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে শাপলা চত্বর হত্যা, সাগর-রুনি হত্যা, ‘আয়না ঘর’ কাণ্ডসহ সব গুম ও খুনের যথাযথ বিচার করতে হবে।
৭. রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও দমন-পীড়নের উদ্দেশ্যে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী, আলেম-ওলামাসহ বিরোধী মতের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময়ে দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে।
৮. জুলাই বিপ্লবের মূল নিয়ামক ছাত্র-জনতার ঐক্যকে সংহত ও এগিয়ে নিতে হবে। বিপ্লব বিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে গড়ে ওঠা ঐক্যকে শক্তিতে পরিণত করতে হবে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখতে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আরও আধুনিক ও শক্তিশালী করা এবং সক্ষম সব নাগরিককে বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণের স্থায়ী ব্যবস্থা করতে হবে।
৯. দ্রুত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে দ্রব্যমূল্য কমানো, ভারতের পানি আগ্রাসন মোকাবিলা ও পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
১০. বিপ্লব পরবর্তী পরিস্থিতির ওপর দ্রুত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, সংস্কার কার্যক্রম জোরদার এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে যৌক্তিক দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
১১. আওয়ামী দলীয় ক্যাডারদের হাতে থাকা সব বৈধ-অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১২. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।
রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার বিষয়ে খেলাফত মজলিসের প্রস্তাবনা হলো-
১. সরকার ব্যবস্থায় সংস্কার : দেশের বর্তমান ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীকে যে ব্যাপক ক্ষমতা ও স্বেচ্ছাচারী হওয়ার প্রভূত সুযোগ দেওয়া হয়েছে তা দূরীকরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য বিধান করতে হবে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি কেউই যেন একাধিকক্রমে দুই মেয়াদের বেশি স্বপদে থাকতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। কোনো ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি দলীয় প্রধান থাকতে পারবেন না।
২. নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার : অবিলম্বে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা চালু করতে হবে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থা চালু করা। সৎ ও যোগ্য প্রার্থী যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে সেজন্য নির্বাচনী ব্যয় কমানো, শুধু নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে প্রার্থীদের নির্বাচনী সভার আয়োজন করা এবং অর্থ ও পেশিশক্তির দাপট নিবারণসহ সব অব্যবস্থাপনা দূর করতে হবে। নিম্নকক্ষে সংসদীয় আসন ৫০০ তে উন্নীত করার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি দল থেকে স্পিকার ও বিরোধীদল থেকে ডেপুটি স্পিকার করতে হবে।
৩. স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সংষ্কার : স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তাকে স্থানীয় উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন বিভাগ স্থানীয় সরকারের অধীনে দিতে হবে। সংসদ সদস্যরা যেন দেশের আইন ও নীতি প্রণয়নের কাজে ব্যস্ত থাকেন ও স্থানীয় সরকারের কাজে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না করেন তার কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
৪. প্রশাসনিক সংষ্কার : সীমাহীন দলীয়করণের মাধ্যমে প্রশাসনের সর্বস্তরে হাসিনা সরকার যে প্রচণ্ড ক্ষতের সৃষ্টি করে গেছে তা দ্রুত দূর করার জন্য প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন গঠন করে জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সর্বত্র সুষ্ঠু নিয়মনীতি প্রতিষ্ঠা ও শৃঙ্খলা বিধান নিশ্চিত করতে হবে, যেন প্রশাসন ক্ষমতাসীন দলের লেজুড়বৃত্তির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।
৫. অর্থ ও ব্যাংক ব্যবস্থা সংস্কার : দুর্নীতিবাজ মাফিয়া হাসিনা সরকার দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ও ব্যাংক ব্যবস্থায় যে সীমাহীন দুর্নীতি, বিশৃঙ্খলা ও দূরাবস্থা সৃষ্টি করেছে দ্রুত আর্থিক সংস্কার কমিশন গঠন করে তা উত্তরণে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও ইতিবাচক ও আস্থার পবিবেশ দ্রুত ফিরিয়ে আনতে হবে। দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রণয়নে গঠিত জাতীয় কমিটি যেন দ্রুত তা প্রণয়ন ও প্রকাশ করে তার ব্যবস্থা করতে হবে। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।
৬. শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার : দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিশ্বাস ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে মানসম্মত নৈতিক, কারিগরি ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর যুগোপযোগী শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে দ্রুত শিক্ষা কমিশন গঠন, নতুন শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন এবং চলমান শিক্ষানীতি ও ক্রম বাতিল করতে হবে।
৭. আইনি সংস্কার : ব্যাপকভাবে সমালোচিত বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল, আইসিটি ও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সংশোধন এবং অনাস্থা প্রস্তাব ও বাজেট প্রস্তাব পাশের ক্ষেত্র ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ প্রয়োগের ধারা বাতিল করতে হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সমুন্নত করার জন্য ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার প্রবর্তিত বিচারপতি অভিশংসন আইন বাতিল করতে হবে। বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে প্রতিটি প্রশাসনিক বিভাগে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপন করতে হবে।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বলেছেন, এলডিপির পক্ষ থেকে আমরা ৮৩টি সুপারিশ করেছি। এগুলো দলীয় কোনো উপকারের জন্য না, রাজনৈতিক ফায়দার জন্য না। আমাদের ব্যক্তিগত কোনো সুবিধার জন্য না। তিনি বলেন, স্বৈরাচারী সরকার অতীতে ছিল। ফ্যাসিবাদী কায়দায় পরিচালিত হতো। জনগণের মানবাধিকার ছিল না, স্বাধীনতা ছিল না। অলি আহমেদ বলেন, আমরা ৮৩টি সুপারিশ করেছি। আর বলেছি যে, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের জন্য যা যা প্রয়োজন, বা নিয়মিত রুটিন কাজের জন্য প্রয়োজন, গ্রহণ করবেন। বাকিগুলো গ্রহণ করার প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য হলো একটা পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ, চাঁদাবাজ মুক্ত বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে আমরা চাঁদাবাজ মুক্ত করতে পারিনি। স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে, চাঁদাবাজ মুক্ত এখনো হয়নি। এখনও কোর্ট কাচারিতে ন্যায় বিচার হচ্ছে না। সাধারণ মানুষ যতদিন পারতো ন্যায়বিচার পাবো না, ততদিন পর্যন্ত এই স্বাধীনতার কোনো মূল্য নেই। প্রত্যেক মানুষকে বুঝতে হবে যে আমি একটা স্বাধীন দেশের নাগরিক। সেই বিবেচনা রেখে আমরা ৮৩টি প্রস্তাব দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, জামায়াতকে যদি ছোট তুচ্ছ কারণে তাদের নিবন্ধন বাতিল করা যায়, আমাদের হাজার ছেলে-মেয়েদের হত্যা করার জন্য, ১৫ বছরে আরও কয়েক হাজার গুম করার জন্য তাদেরটার (আওয়ামী লীগ) কেন বাতিল হবে না? তাদের বাতিল হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। বাতিল না হলে আগামীতেও স্বৈরাচারের জন্ম হবে।

 

সর্বশেষ - আইন-আদালত