রাতের সাথে বাড়ছে আশঙ্কা। চোখে মুখে আতঙ্ক। ধ্বক ধ্বক করছে বুক। তেষ্টায় শুকিয়ে আসছে গলা। খিল এঁটে দরজায় টেবিল ঠেঁস দিয়ে রাখে রূপা। তারউপর চাপায় ভারি বস্তা। তবুও কাটছে না ভয়। হয়তো যেকোনোসময় দরজা ভেঙে ঢুকে পড়বে সন্ত্রাসিদল।
এখন পাড়া-মহল্লায়, গলি-ঘুপচিতে উঁৎ পেতে থাকে বিপদ। রাতের বিভৎষতা। দিনও শঙ্কামুক্ত নয়। বস্তির ফাঁকা রাস্তায় একা বেরোতে ভয় করে। কখন আক্রান্ত হয় সম্ভ্রম! সম্ভবত আজ রাতে একটা কিছু ঘটবে। সন্ধ্যায় মাতাল-বদমাশদের গোঁটপাকানো দেখে মনে এমন আশঙ্কাই হূল ফুটাচ্ছে মনে।
বিধবা যুবতি। নিঃসঙ্গ জীবন। ভদ্র পাড়ায় ঝি-এর কাজ করে। রাতের আশ্রয় এই ঘুপচিঘর। সহায় সম্বলহীন বলে বস্তির ছেলে-বুড়ো সবাই ওকে ভোগের সামগ্রী ভাবে। আছে সুযোগের অপেক্ষায়। চারপাশে শকুনে দৃষ্টি। ওর মতো মেয়েদের পরিণতি এমনটাই হয়। সন্ধ্যায় সিঁটি, অশ্লীল গালাগালি, নোংরা ভাষার আমন্ত্রণ। দরজার কড়া নাড়ে প্রায় রাতে। কিন্তু সে যাবে কোথায়? পৃথিবীতে তার আপন বলতে দ্বিতীয় কেউ নেই!
রূপা একটু ভেবে কর্তব্য স্থির করে। শান্ত হয় কিছুটা। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়। সংকল্পে দৃঢ় মন এখন উদ্বেগহীন। সে বস্তা নামিয়ে টেবিল সরায় আলগোছে। দরজা সামান্য ফাঁক করে। ফোঁকড় চুঁয়িয়ে বারান্দায় গড়ায় চিলতে আলোর সরু ধারা।
একটু পরেই দরজায় উঁকি দেয় ভটভটি পট্লা। বস্তির ভয়ংকর সন্ত্রাসী। তার চকচকে চোখে আদিম লালসা। নিঃশ্বাসে পাশবিক হিংস্রতা। দাঁত বের করে হাসছে লম্পট।
ঘরে ঢুকতে না ঢুকতে হঠাৎ দরজার পাশ থেকে ধাই করে নেমে আসে রূপার জোড়া হাত। সজোরে পিঠে পড়ে শক্ত লাঠি। ঠাস ঠাস চলতে থাকে পাছায়, কাঁধে। জোরে জোরে। সপাটে একের পর এক। হাউ মাউ কান্না জুড়ে হানাদার উল্টো ছুটে বাইরে। তাড়া করে রূপা। শুরু হয় হইচই চেঁচামেচি। জেগে ওঠে পুরো বস্তি। বেরিয়ে আসে বাইরে। সবাই অবাক চোখে দেখছে আভাবনীয় দৃশ্য। পট্লাকে দৌঁড়ে পালাতে দেখে খুলে যায় রূপার মুখের আগল-
– ঐ গোলামের পুত ভটভটি, আহন পলাইতাছস ক্যান? সাহস থাকলে সামনে খাড়া হারামজাদা! তর জন্মের খায়েস মিটায়া দেই। থেমে দাঁড়ায় রূপা। মনে চলছে তোলপাড়। প্রচণ্ড উত্তেজনায় সে ক্লান্ত। শ্রান্ত। হাঁপাচ্ছে বেদম। কিন্তু তার মধ্যে নেই কোনো ভয়ের লেশ। লজ্জার ছায়া। অনুশোচনার ছাপ। বরং ওর চোখ মুখ থেকে যেনো ঠিকরে বেরোচ্ছে অদ্ভূত আনন্দ। ভেতরে চাপা উল্লাস। অনুভবে ভিন্নরকমের পরিতৃপ্তি।