দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। কোরআন-হাদিসে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার অনেক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। জামাতে নামাজ আদায় করার তাগিদ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ। কোরআনে করিমে তিনি ঘোষণা করেন, ‘আর তোমরা নামাজ কায়েম কর ও জাকাত প্রদান কর এবং যারা রুকু করে তাদের সঙ্গে রুকু কর। (সুরা বাকারা-৪৩)
মুসলিম উম্মাহর সর্বোত্তম আদর্শ রসুলুল্লাহ (সা.)। তিনি গোটা জীবন জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন। এমনকি তাঁর ইন্তেকালের আগমুহূর্তে অসুস্থতার সময়ও তিনি জামাত ছাড়েননি। তাঁর প্রিয় সাহাবিরা আমাদের জন্য আদর্শের প্রতিচ্ছবি। তাদের গোটা জীবন রসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ অনুযায়ী অতিবাহিত করেছেন। তারাও জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন। রসুলুল্লাহ (সা.) জামাতে নামাজ আদায়ের বহু ফজিলত ও উপকার বর্ণনা করেছেন। সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেন, ‘যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ! আমার ইচ্ছা হয় জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে আদেশ দিই। এরপর নামাজ কায়েমের আদেশ দিই। তারপর নামাজের আজান দেওয়া হোক, এরপর এক ব্যক্তিকে লোকদের ইমামতি করার নির্দেশ দিই। তারপর আমি লোকদের অন্বেষণে যাই এবং যারা (জামাতে আসেনি) তাদের ঘর জ্বালিয়ে দিই। (সহি বুখারি)
জামাতে নামাজ আদায়ের ফজিলত বর্ণনা করে রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘জামাতে নামাজের ফজিলত একাকী ঘরে বা বাজারে আদায়ের চেয়ে ২৫ গুণ বেশি। অন্য বর্ণনায় ২৭ গুণ ফজিলতের কথা উল্লেখ আছে। (সহি বুখারি)
অন্য হাদিসে তিনি ঘোষণা করেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিন পর্যন্ত তাকবিরে উলার সঙ্গে (নামাজের প্রারম্ভ থেকে) জামাতে নামাজ আদায় করবে, আল্লাহতায়ালা তাকে দুই প্রকার মুক্তি দান করবেন। এক. জাহান্নাম থেকে মুক্তি। দুই. মোনাফেকের তালিকা বা কার্যক্রম থেকে মুক্তি।’ (তিরমিজি-হাসান)
প্রত্যেক মুসলমানের ওপর নামাজ ফরজ। মহান আল্লাহতায়ালা নামাজ সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেক ওলামায়ে-কিরামের দর্শন অনুযায়ী নামাজ সংরক্ষণের অন্যতম মর্ম হলো, তা জামাতের সঙ্গে আদায় করা। মারাত্মক অসুস্থতা অথবা অনিবার্য কোনো অপারগতা না হলে জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক। তাই আমাদের উচিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, জুমা ও ঈদের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা। মসজিদে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে সবাই অজু করে পাকপবিত্র হয় এবং নামাজে ওঠাবসা করে, যা দৈহিক সতেজতা এবং মানসিক প্রফুল্লতা লাভে অত্যন্ত সহায়ক হয়। সকালে জামাতের জন্য জাগ্রত হওয়া এবং মসজিদের দিকে হেঁটে যাওয়া শারীরিকভাবে শ্রেষ্ঠতম উপশম। আর পরকালের অফুরন্ত কল্যাণ তো আছেই। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি উত্তমভাবে পবিত্রতা অর্জন করে জামাতে নামাজ পড়ার জন্য কোনো একটি মসজিদের দিকে পা বাড়াবে তাঁর একটি কদমে আল্লাহ তার একটি করে পাপ মুছে দেবেন। আর একটি কদমে তার একটি করে মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন। (সহি মুসলিম)
লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা