নির্বাচন কমিশন এক সপ্তাহের মধ্যে দেশের দু’টি নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে। ৭ আগস্ট ২০২৩ রবিবার নির্বাচন কমিশনে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত এই দু’টি দলের বিষয়ে শুনানি হয়েছে। শুনানিতে উত্থাপিত বাদী-বিবাদীর যুক্তিতর্ক পর্যালোচনার পর নতুন দল নিবন্ধনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে ইসি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এতে অন্য নির্বাচন কমিশনাররাও উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো: আহসান হাবিব খান জানান, দু’টি দলের বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ করেছিলেন তারাও শুনানিতে অংশ নিয়েছেন। অভিযোগকারীরা তাদের বক্তব্য দিয়েছেন অন্য দিকে আত্মপক্ষ বর্ণনা করেছেন দল দু’টি। এখন কমিশনাররা বসে দুই পক্ষের বক্তব্য আইন-বিধির আলোকে সুচারুভাবে বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নেবেন। শুধু তাই নয়, পাশাপাশি দু’টি কমিটি কর্তৃক কমিশনে জমাকৃত তদন্ত প্রতিবেদন সেগুলোও বিবেচনায় নেবে কমিশন। এক সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন এই নির্বাচন কমিশনার।
শুনানি শেষে ইসি সচিব মো: জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, দু’টি দলকে যাচাই-বাছাইয়ের পর নিবন্ধন দেওয়ার জন্য তালিকায় রাখা হয়েছিল। একই সঙ্গে দল দু’টির বিরুদ্ধে কারো কোনো অভিযোগ থাকলে তাও জানাতে বলা হয়েছিল। সে অনুযায়ী, শুনানি সম্পন্ন হয়েছে। এটি একটি বিচারাধীন বিষয়। তাই কিছু বলা ঠিক হবে না। শুনানির যুক্তি-তর্ক পর্যালোচনার পর নিবন্ধন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন কমিশন।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন দেওয়ার জন্য যাচাই-বাছাই শেষে প্রাথমিক তালিকায় রেখেছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)। ইসির দেওয়া সময়ের মধ্যে এই দু’টি দলের বিরুদ্ধে মোট তিনটি অভিযোগ পড়ে। বিএনএমকে ভুঁইফোঁড় সংগঠন আখ্যা দিয়ে নিবন্ধন না দেওয়ার জন্য আবেদন জানায় আইনজীবী আবু নাছের খান। অন্যদিকে পৈতৃক সম্পত্তি দখল করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও খানকা দরবার শরীফকে রাজনৈতিক দল হিসেবে উপস্থাপন করায় এবং অন্য দলের নামের সঙ্গে মিল রাখায় বিএসপিকে নিবন্ধন না দেওয়ার আবেদন পড়ে দু’টি। বিএসপি’র বিরুদ্ধে সম্পত্তি দখলের অভিযোগ করেন দলটির চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী’র ছোট ভাই শাহজাদা সৈয়দ শহিদউদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী ও তার দুই বোন। আর নামের মিল থাকার অভিযোগ তোলেন বাংলাদেশ শ্রমজীবী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি লায়ন আবদুল কাদের জিলানী।
শুনানি শেষে অ্যাডভোকেট আলী নাছের খান বলেন, বিএনএম ইসির নিবন্ধনের জন্য কোনো শর্তই পূরণ করতে পারেনি। এ বিষয়ে আমরা যুক্তি উপস্থাপন করেছি। তিনি বলেন, ভূঁইফোড় সংগঠনগুলোকে যদি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেওয়া হয় তাহলে শপথ ভঙ্গ হবে নির্বাচন কমিশনের। তবে বিএনএম যুগ্ম আহ্বায়ক ব্যরিষ্টার এম সারোয়ার হোসেন বলেন, অভিযোগীকারী এবি পার্টির একজন সদস্য। প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে অভিযোগ করেছেন। আমাদের দলটি ৭ জুলাই ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠা হয়েছে। প্রথম থেকে যখন প্রয়োজন তখন আমাদের কার্যক্রম চালিয়েছি।
বাংলাদেশ শ্রমজীবী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি লায়ন আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, আমার কথা হলো বাংলাদেশ শ্রমজীবী পার্টি-বিএসপি, ২০১৭ সালে ৬ জুলাই আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছি। আজকে হঠাৎ করে একটি রাজনৈতিক সংগঠন আসলো, রাজনৈতিক সংগঠন না, তারা আসলে ধর্মীয় সংগঠন। আমরা জানি মাইজভাণ্ডারী বা খানকা। সেই ভদ্রলোক এসে রাজনৈতিক দল গঠন করলো, আমাদের বিএসপির সংক্ষিপ্ত নামটি তিনি ব্যবহার করলেন। এটি আমি কোনোভাবে মেনে নিতে পারিনি। দলের নাম ডবল হতে পারে না। অন্যদিকে শাহাজাদা সৈয়দ শহিদউদ্দীন আহমদ বলেন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটাকে এই দরবারকে পুঁজি করে তার ভাই রাজনৈতিক হাতিয়ার বানাতে চায়। যার কাছে নিজের পিতা, নিজের ছোট ভাই-বোন, অনুসারী আশেকানরা নিরাপদ নয়।
এসব অভিযোগ উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির স্থায়ী পরিষদের সদস্য মো: ইব্রাহিম মিয়া। তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমরা সকল শর্ত পূরণ করেছি। যে অভিযোগ ছিল, তা মিথ্যা। কারো পৈত্রিক সম্পত্তিতে অফিস করার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। যিনি অভিযোগ করেছেন, তার পিতা একটি পত্রিকায় ২০০৮ সালে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন তার বিরুদ্ধে, যেন জানাজাতেও তিনি অংশ না নেন। এছাড়াও তার পিতা পাঁচলাইশ ও ফটিকছড়ি থানায় তার বিরুদ্ধে দু’টি জিডি করে গেছেন । আমরা আর কোনো বক্তব্য দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না।
বাদী-বিবাদীর সকলেই সাংবাদিকদের জানান, কমিশন তাদের বক্তব্য শুনেছেন। পর্যালোচনা করে রায় দেবেন।