ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পানিবণ্টনের বিষয়টি অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি বিষয়ে মতপার্থক্য দূর করার উপায় নিয়ে ভারতের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার আলোচনা করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। নিজ সরকারি বাসভবনে ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ৬ আগস্ট পিটিআই নিউজের ওয়েবসাইটে এই সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে।
পিটিআই নিউজ সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বিষয়টি (পানিবণ্টন চুক্তি) দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে, এতে কোনো দেশেরই লাভ হচ্ছে না। আমি যদি জানি যে আমি কতটুকু পানি পাব, তাহলে এটি ভালো হতো। এমনকি পানির পরিমাণ নিয়ে যদি আমি খুশি না-ও হই, তাতেও সমস্যা নেই। বিষয়টির সমাধান হতেই হবে। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে পানিবণ্টনের বিষয়টি অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী হতে হবে। বাংলাদেশের মতো ভাটির দেশগুলোর অধিকার সমুন্নত রাখার সুনির্দিষ্ট অধিকার রয়েছে। আমরা সেই অধিকার চাই।
বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি এবং এই বন্যার জন্য ভারতকে দায়ী করে ঢাকা থেকে গণমাধ্যমের প্রকাশিত খবর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চুক্তি সইয়ের আগে এমন সংকট মোকাবিলায় একটা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা যেতে পারে। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়টি সমাধানে অন্তর্বর্তী সরকার ভারতকে শিগগিরই তাড়া বা চাপ (পুশ) দেবে কী-না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘চাপ (পুশ) শব্দটি অনেক বড়। আমি এই কথা বলছি না। আমরা আলোচনা করবো। তবে আমাদের একসঙ্গে বসে সমস্যার সমাধান করতে হবে। তিনি বলেন, এটা নতুন কোনো বিষয় নয় বরং খুবই পুরনো বিষয়। আমরা বিভিন্ন সময় এ বিষয়ে কথা বলেছি। পাকিস্তান শাসনামল থেকেই এ নিয়ে আলোচনা শুরু। আমরা সবাই যখন ওই চুক্তি চূড়ান্ত করতে চেয়েছি, এমনকি ভারত সরকারও প্রস্তুত ছিল; তখন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার এর জন্য তৈরি ছিল না। আমাদের এটির সমাধান করতে হবে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পানিসম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সম্প্রতি পিটিআইকে বলেছেন, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে নয়াদিল্লির সঙ্গে আলোচনা আবারও শুরু করার জন্য চাপ দেবে ঢাকা। উজান ও ভাটির দেশগুলোর মধ্যে পানিবণ্টন নিয়ে (অভিন্ন নদীর) দুই দেশকেই (ভারত-বাংলাদেশ) আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি অনুসরণ করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। পানিসম্পদবিষয়ক উপদেষ্টার এ মন্তব্যের কয়েক দিন পর সরকারপ্রধান ড. ইউনূস এই বক্তব্য দিলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেন, যখন হাইকমিশনার (ভারতের) আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলেন, আমি বলেছি, বন্যার সময় পরিস্থিতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেই লক্ষ্যে আমরা অধিকতর ভালো ব্যবস্থাপনার ওপর কাজ করতে পারি। দুই দেশের মধ্যে এমন সমন্বয়ের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো চুক্তির প্রয়োজন নেই। ড. ইউনূস আরও বলেন, এ বিষয়ে আমরা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে একসঙ্গে কাজ করতে ও এর সমাধান করতে পারি। কেননা এটি গণমানুষের দুর্দশা লাঘব করবে। এ ধরনের মানবিক পদক্ষেপ সত্যিকার অর্থেই সহায়তা করবে (সমস্যা সমাধানে)। বন্যার বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, দুই দেশের অভিন্ন নদীর পানি উপচে পড়া একটি ‘অভিন্ন’ সমস্যা, যা উভয় দেশের মানুষের ওপর প্রভাব ফেলছে। সমস্যা সমাধানে ঘনিষ্ঠ পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।