রাজধানীতে রড-লাঠিসোঁটা-হকিস্টিক নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ১৬ জুলাই মঙ্গলবার। সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে চলমান ছাত্র আন্দোলন ঘিরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে হামলা-পাল্টা হামলা ও এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। দিনভর এসব সংঘর্ষে পুলিশবক্সে আগুন, আওয়ামী লীগ অফিসে অগ্নিসংযোগ, আবাসিক হলে হামলা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ছয়জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় দুজন, চট্টগ্রামে তিনজন ও রংপুরে একজন রয়েছেন। সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দুটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় পরপর সাতটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। দুপুরের পর ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে আরও কয়েক শ মানুষ আহত হয়েছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের এসব সংঘর্ষ ঘটে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০৫ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাঁচ জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
ঢাকার প্রবেশপথগুলোর সড়ক অবরোধ করে রাখেন কোটা আন্দোলনকারীরা। মহাসড়কগুলোকে ব্যারিকেড দিলে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিমানযাত্রীরা এদিন সময়মতো বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারেননি। যে কারণে বেশ কিছু ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, সায়েন্সল্যাব, চানখাঁরপুল, মহাখালী ও মিরপুরে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ ছাড়া নাবিস্কো মোড়, ফার্মগেট, উত্তরার জসীমউদ্দীন মোড়, জমজম টাওয়ার মোড়, কুড়িল বিশ্বরোড, ভাটারার যমুনা ফিউচার পার্কের সামনের রোড, নতুন বাজার মোড়, মেরুল বাড্ডা, বনানী, গাবতলী, মিরপুর-১০, মিরপুর-১৪, মাটিকাটা মোড়, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর, মোহাম্মদপুর, শান্তিনগর, মতিঝিল, শনিরআখড়াসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। কলকাতা থেকে ছেড়ে আসা মৈত্রী এক্সপ্রেস গাজীপুরে আটকে দেওয়া হয়। এ ছাড়া মহাখালীতেও আরেকটি ট্রেন আটকে দেওয়া হয়।
খুলনায় সকাল সোয়া ১০টার দিকে খুলনা-যশোর মহাসড়কের নতুন রাস্তা মোড় এলাকা অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এক প্রান্তে জড়ো হয়ে মিছিল নিয়ে সড়কে এসে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। এ সময়, শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকে। পরে তারা অবরোধ তুলে নেয়। পরে শিববাড়ি মোড় এলাকায় বিক্ষোভ করে তারা।
কক্সবাজারে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করে। পুলিশ বাঁধা দিলে তা উপেক্ষা করে মিছিলটি লিংকরোড ধরে সরকারি কলেজের দিকে যায়। সেখানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে সংঘর্ষ হয়। ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ব্যারিকেড করে।
এদিকে, বগুড়ায় সরকারি আজিজুল হক কলেজ ক্যাম্পাসে সকাল ১১টার দিকে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় আম চত্বর এলাকায় ককটেল হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এতে তিন শিক্ষার্থী আহত হন। আহতদের শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। ঘটনার পরপরই ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শাখা ছাত্রলীগ। এ সময় তারা কোটা সংস্কার আন্দোলন বিরোধী স্লোগান দেয়।
কোটার যৌক্তিক সংস্কার, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে উত্তাল রংপুর মেডিকেল কলেজ। সকাল ১০টা থেকে শত শত মেডিকেল শিক্ষার্থী একত্রিত হয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ-মিছিল করে। আন্দোলনকারীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
রাজশাহীতে কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে খড়খড়ি এলাকা রাজশাহী-ঢাকা বাইপাস সড়ক অবরোধ করে অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধান ফটকে সামনে এই অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে তারা।
এ ছাড়াও, বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদ এলাকা অবরোধ করেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।