১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, এখন সময় রাত ৪:৩০ মিনিট
শিরোনাম
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. কৃষি
  6. খুলনা
  7. খেলাধূলা
  8. গণমাধ্যম
  9. চট্রগ্রাম
  10. জাতীয়
  11. ঢাকা
  12. তথ্য-প্রযুক্তি
  13. ধর্মতত্ত্ব
  14. প্রকৃতি-পরিবেশ
  15. প্রবাস জীবন

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে কবর থেকে তুলে আগুনে পুড়ানো হলো ‘নুরা পাগলা’র লাশ

প্রতিবেদক
স্টাফ রিপোর্টার
সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৫ ১১:০৩ অপরাহ্ণ

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে ‘নুরা পাগলার’ মরদেহ তুলে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে তৌহিদী জনতা। এর আগে সেখানকার দরবার শরীফ ও বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষুব্ধরা। এতে দরবারের ভক্ত, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশসহ ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। এ সময় ভাঙচুর করা হয় ইউএনওর গাড়ি, পুলিশের দুটি গাড়ি। ৫ সেপ্টেম্বর জুমার নামাজের পর গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জুড়ান মোল্লাপাড়ায় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদুর রহমান।
জুমার নামাজের পর ঈমান আকিদা রক্ষা কমিটির ব্যানারে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ফকির মহিউদ্দিন আনসার ক্লাবে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা দরবারের দিকে যেতে চাইলে প্রশাসন তাদের নিবৃত করার চেষ্টা করে। এ সময় গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সরকারি গাড়ি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসির গাড়ি ভাঙচুর করেন তারা। আহত হন ৫ পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় প্রশাসনের ২ জন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, মিছিল নিয়ে প্রথমে নুরুল হকের আস্তানার ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। তখন দরবারের লোকজন ইটপাটকেল ছুঁড়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করলে অপর পাশ থেকেও ইটপাটকেল ছোড়া হয়। একপর্যায়ে কয়েকশ লোক দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে দরবারে হামলা চালান। এ সময় ভক্তদের কয়েকজনকে বেধড়ক পেটানো হয় এবং নুরুল হকের বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। পরে নুরুল হকের লাশ কবর থেকে তুলে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ডের অদূরে পদ্মার মোড় এলাকায় নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। হামলায় উভয় পক্ষের অন্তত অর্ধশত লোক আহত হন। পরে পুলিশ, র‍্যাব ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস থেমে থেমে কাজ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নিজ বাড়িতে দরবার শরীফ গড়ে তোলেন নুরুল হক। গত ২৩ আগস্ট বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় মারা যান নুরুল হক। ওই দিন রাতে মাটি থেকে কয়েক ফুট উঁচুতে বিশেষ কায়দায় দরবারে তার লাশ দাফন করা হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কবর সমতল করাসহ কয়েকটি দাবি জানায় স্থানীয় আলেম সমাজ। এ ঘটনায় গত ২ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে নুরুল হকের দরবারে অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ করে উপজেলা ঈমান-আকিদা রক্ষা কমিটি। তারা ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কবর সমতলসহ বিভিন্ন দাবি জানায়। অন্যথায় ৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার জুমার নামাজের পর গোয়ালন্দ আনসার ক্লাব মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ ও পরে ‘মার্চ ফর গোয়ালন্দ’ কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেয় এবং এরই আলোকে দরবার শরীফে হামলা চালিয়ে কবর থেকে লাশ তুলে আগুনে পুড়ানো হয়। এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাহিদুর রহমান জানান, আমাদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে বাড়ি ও দরবারে হামলা করে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এসময় ইউএনওর সরকারি গাড়ি ও পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। আহতের সংখ্যা এখন বলা যাচ্ছে না। গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. শরিফুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে ২২ জন আহত রোগী এসেছেন। তারমধ্যে তিনজনকে ভর্তি করা হয়েছে এবং ১৯ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গোয়ালন্দে নুরা পাগলা নামেও পরিচিত নুরুল হক মোল্লার কবর অবমাননা ও মরদেহে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। সরকার একে অমানবিক, ঘৃণ্য ও সভ্য সমাজের মূল্যবোধের পরিপন্থী কাজ হিসেবে নিন্দা করেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, এ ধরনের বর্বরতা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। প্রতিটি নাগরিকের জীবনের মর্যাদা রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব- তা জীবদ্দশায় হোক কিংবা মৃত্যুর পর। এই মূল্যবোধের পরিপন্থী কর্মকাণ্ড দেশের আইন, সামাজিক নীতি ও মানবিক আদর্শের ওপর সরাসরি আঘাত। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আশ্বস্ত করেছে যে, এই জঘন্য অপরাধে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। দ্রুত তদন্ত শুরু হয়েছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। সরকারের বার্তায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নয়।’
বিবৃতিতে জনগণকে ঘৃণা ও সহিংসতা প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানিয়ে ন্যায়বিচার ও মানবতার আদর্শ সমুন্নত রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্যও সরকার দেশের প্রতিটি নাগরিকের প্রতি পরামর্শ দিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করেছে। পাশাপাশি পরিস্থিতি শান্ত রাখতে স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।

সর্বশেষ - আইন-আদালত

আপনার জন্য নির্বাচিত